ভূমির সমস্যা থেকে বের হওয়া খুব কঠিন: পরিকল্পনামন্ত্রী

‘জলবায়ু পরিবর্তনের পটভূমিতে মূলধারার আলোচনায় ভূমি অধিকার- তৃণমূলের দৃষ্টিভঙ্গি’ শীর্ষক সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনের অতিথিরা
ছবি: এএলআরডির সৌজন্যে

দেশে ভূমির সমস্যা সমাধানে নতুন কয়েকটি আইন হয়েছে। ভূমি ব্যবস্থাপনায় ডিজিটাল পদ্ধতির প্রয়োগও শুরু হয়েছে। তবে ভূমির সমস্যা খুব দ্রুত চলে যাবে বলে মনে করেন না পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি বলেছেন, দেশে ভূমি নিয়ে যে সমস্যা আছে, তা থেকে বের হওয়া কঠিন।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীতে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন পরিকল্পনামন্ত্রী। তিনি ‘জলবায়ু পরিবর্তনের পটভূমিতে মূলধারার আলোচনায় ভূমি অধিকার—তৃণমূলের দৃষ্টিভঙ্গি’ শীর্ষক সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন। রাজধানীর সিক্স সিজনস হোটেলে দুই দিনব্যাপী এ সম্মেলন আজ শুরু হয়।

গ্রামীণ দরিদ্র মানুষদের জমির মালিকানার অধিকার দুর্বল বা একেবারেই নেই। তাই তারা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ প্রভাবের জন্য সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এ রকম একটি পরিপ্রেক্ষিতে এশিয়ান এনজিও কোয়ালিশন ফর অ্যাগ্রেরিয়ান রিফর্ম অ্যান্ড রুরাল ডেভেলপমেন্ট (এএনজিওসি) এবং অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি) যৌথভাবে এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে। এএলআরডির এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বিশ্বব্যাপী দৃশ্যমান—এ কথা উল্লেখ করে এম এ মান্নান আরও বলেন, বাংলাদেশের ৫০ শতাংশের বেশি মানুষের জীবন–জীবিকা ভূমির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। বর্তমান সরকার ভূমি ব্যবস্থাপনায় ডিজিটাল পদ্ধতি চালু করার পাশাপাশি ভূমি সংস্কারে আইন পরিবর্তন, নতুন আইন প্রণয়নসহ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কিন্তু ভূমি নিয়ে যে সমস্যা চলমান, তা থেকে বের হওয়া খুবই কঠিন।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ভূমিহীন মানুষের পক্ষে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য যথেষ্ট কাজ করার সুযোগ এখনো রয়েছে। হাজার বছরের পুঞ্জীভূত ভূমি অপরাধ নিরসনে সরকার ও বেসরকারি সংস্থাকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

শুভেচ্ছা বক্তব্যে এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা বলেন, ‘এই সম্মেলন কোনো একাডেমিক অনুশীলন নয়; বরং এটি দেশের সরকারের প্রতি একটি বাস্তবসম্মত কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান। যারা নিরাপদ ভূমির অধিকার থেকে বঞ্চিত, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে যারা বাড়িঘর, জীবিকার উৎস হারিয়ে দারিদ্র্যের প্রান্তিকতায় দাঁড়িয়ে, তাদের প্রতি আরও মানবিক হওয়ার জন্য আমরা ঝুঁকিপূর্ণ সব দেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’

সম্মেলনের সূচনা বক্তব্যে এনগকের নির্বাহী পরিচালক নাথানিয়েল ডন মার্কেজ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঘনঘন সংঘটিত তীব্র প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ভূমির অবক্ষয়, ভূমিহীনতা এবং সম্পদহানি ঘটছে। ফলে গ্রামীণ দরিদ্র মানুষ স্থায়ী নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। তাই জলবায়ু কর্মের লক্ষ্য এবং প্রতিশ্রুতি অর্জনের জন্য ভূমির মেয়াদের নিরাপত্তা অপরিহার্য।

জলবায়ু পরিবর্তন প্রেক্ষাপটে মানবাধিকারের প্রচার ও সুরক্ষাবিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইয়ান ফ্রাই এই সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে একটি ভিডিও বার্তা দেন। তিনি এই বার্তায় প্রান্তিক মানুষের ভূমি অধিকার তথা মানবাধিকার সুরক্ষা দেওয়ার প্রতি সবাইকে আহ্বান জানান। তিনি বলেন, নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবের জন্য একটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে বাংলাদেশের গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ৪২ দশমিক ৬ শতাংশ বন্যা, ৪০ দশমিক ৭ শতাংশ ঘূর্ণিঝড় এবং ৮২ দশমিক ৬ শতাংশ জলবায়ু সম্পর্কিত বিভিন্ন বিপর্যয়ের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেশটি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে শীর্ষ ১০টি সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশের মধ্যে সপ্তম অবস্থানে রয়েছে।

এই সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনের সভাপতি খুশী কবির বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন একটি বাস্তবতা। আমরা যত আন্তর্জাতিক সম্মেলন, চুক্তি ইত্যাদি দেখছি, কিন্তু সত্যিকারের কোনো সমাধান আমরা দেখতে পাচ্ছি না। সব যেন কাগজপত্রেই সীমাবদ্ধ। যেসব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হচ্ছে, তা কি আদৌ বাস্তবায়িত হচ্ছে? বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র বিশেষ করে উন্নত রাষ্ট্র যত প্রতিশ্রুতিই দিক না কেন, জলবায়ু পরিবর্তনে তাদের যে উদ্যোগ, তা দেখে মনে হয় না যে এই সমস্যা থেকে বের হয়ে আসার কোনো সদিচ্ছা আছে।

এই আয়োজনে আরও যারা সহায়তা করেছে, সেসব সংস্থা হলো গ্লোবাল ফোরাম অন অ্যাগ্রিকালচারাল রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন, গ্লোবাল ল্যান্ড টুল নেটওয়ার্ক এবং ল্যান্ড পোর্টাল ফাউন্ডেশন।