প্রতিবাদী নাগরিক সমাজের আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন বিশিষ্টজনেরা। ঢাকা, ১ আগস্ট
প্রতিবাদী নাগরিক সমাজের আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন বিশিষ্টজনেরা। ঢাকা, ১ আগস্ট

জনগণ জেগে উঠেছে, হত্যাকাণ্ডের বিচারও তারাই করবে

জনগণ আজ জেগে উঠেছে। বুঝতে পেরেছে, তাদের অধিকার হরণ করা হয়েছে, অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের বিচারও তারাই করবে।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে আয়োজিত আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে প্রতিবাদী নাগরিক সমাজের ব্যানারে এ সভার আয়োজন করা হয়।

আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও সাবেক রাষ্ট্রদূত অধ্যাপক আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী বলেন, এ হত্যাকাণ্ড অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে সংঘটিত হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ড ইতিহাসে ‘জুলাই হত্যাকাণ্ড’ বলে অভিহিত হবে। কিন্তু হত্যাকাণ্ডের বিচার কে করবে, কার কাছে বিচার চাইব? হত্যাকারীর কাছে হত্যার বিচার হয় না।

আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী আরও বলেন, সরকারের গঠিত তদন্ত কমিশনের ওপর বিশ্বাস রাখা যায় না। এ সরকারের কাছে কোনো বিচার চাই না। বিচার করবে জনগণ। জনগণ জেগে উঠেছে। ১৫ বছর ধরে তাদের ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছিল। এ ঘুম ভেঙেছে। বুঝতে পেরেছে, তারা অধিকার বঞ্চিত, তাদের অধিকার হরণ করা হয়েছে। তারাই হত্যার বিচার করবে।

সমাবেশে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, ‘একজন মা হিসেবে, শিক্ষক হিসেবে বিবেকের তাড়নায় এখানে এসেছি। অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোই আমার কর্তব্য। সন্তান হারানোর বেদনা কোনো কিছুর সঙ্গেই তুলনা হয় না।’

বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে খুন করার সময়ই নাগরিক সমাজের সোচ্চার হওয়া উচিত ছিল দাবি করে অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রলীগের মতো একটা সহিংস সংগঠনের সদস্য হতে হয় তাদের। ১৫ বছর ধরে গণরুমের নামে ছাত্রলীগ নিরীহ শিক্ষার্থীদের যে অত্যাচার করেছে, তাতে আমরা কী ভূমিকা রেখেছি? দেরিতে হলেও সন্ত্রাসী এ সংগঠনের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা দাঁড়িয়েছে।’

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক তাজমেরী এস ইসলাম বলেন, ছাত্রদের আন্দোলন গণ-আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। কারণ, যে বঞ্চনা, লাঞ্ছনা, অত্যাচার, বিচারহীনতা ও ক্ষোভ মানুষের মধ্যে পুঞ্জীভূত ছিল, তারই বহিঃপ্রকাশ হিসেবে তারা ছাত্রদের সঙ্গে শামিল হয়েছে। কিন্তু নিরস্ত্র আন্দোলনকারীদের ওপর সরকার হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার ও তদন্ত করা দরকার।

এ সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের উদ্দেশে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেন, ‘গুলি করার নির্দেশ দিলেন আপনি, গুলি করছে আপনার লোকেরা। তাহলে হত্যাকারী কে? কাকে হত্যাকারী বানাচ্ছেন? এ সরকার এখন মায়াকান্না শুরু করেছে।’

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আবদুল লতিফ মাসুম বলেন, কত অন্যায়, কত প্রতারণা করে ক্ষমতায় থাকা যায়, তার নিকৃষ্ট উদাহরণ এই সরকার। তাই ছাত্রদের আন্দোলনকে একটি পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে হবে।

এ সময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্যসচিব কাদের গণি চৌধুরী, ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইউট্যাব) সভাপতি অধ্যাপক এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক লুৎফর রহমান, সাবেক সচিব শেখ মোতাহার হোসেন, অধ্যাপক সিরাজউদ্দীন আহমেদ, আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস (কাজল) প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন ডিইউজের সাবেক সভাপতি আবদুল হাই শিকদার।