রাজধানীতে ভুল চিকিৎসায় অভিজিৎ হাওলাদার নামের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর অভিযোগের জের ধরে পুরান ঢাকার ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ এবং শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে। গতকাল রোববার বেলা একটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটেছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিক্ষার্থী অভিজিৎ হাওলাদারের যাত্রাবাড়ীর ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ থেকে চলতি বছর উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। তিনি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গত সোমবার (১৮ নভেম্বর) ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। বুধবার মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজসহ অন্য কলেজের শিক্ষার্থীরা ন্যাশনাল মেডিকেল ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন। পরে অভিজিতের মৃত্যুর ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি হয়। তবে ওই দিন বিকেলে মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থীকে মারধর করেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীসহ আশপাশের কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনার জের ধরে গতকাল ন্যাশনাল মেডিকেল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, অভিজিৎ হাওলাদারের মৃত্যুর ঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবিতে গতকাল দুপুরে মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ, দনিয়া কলেজসহ বেশ কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরা ন্যাশনাল মেডিকেলের সামনের আসেন। তাঁরা কলেজের সামনের জনসন রোডে যান চলাচল বন্ধ করে দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে ওই মেডিকেলের প্রবেশফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়েন তাঁরা। এ সময় হাসপাতালের জরুরি বিভাগের জানালার কাচ, অ্যাম্বুলেন্স, অভ্যর্থনা কক্ষ, ক্যানটিন ভাঙচুর করা হয়।
বেলা একটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত ন্যাশনাল মেডিকেলের প্রধান ফটক দখলে রেখেছিলেন বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা। এ সময় কোনো রোগী ভেতরে ঢুকতে পারেনি।
ন্যাশনাল মেডিকেলের চিকিৎসক রশিদুল হাসান বলেন, মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী অভিজিৎ হাওলাদারের ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগ তুলে শিক্ষার্থীরা যে তাণ্ডব মেডিকেলে চালিয়েছেন, তা নজিরবিহীন। শিক্ষার্থীরা ব্যাপক ভাঙচুর চালানোয় রোগীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে অবস্থিত শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর চালান একদল শিক্ষার্থী। কলেজ ক্যাম্পাসে রাখা কার, মাইক্রোবাস, দুটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। এরপর তাঁরা কলেজের ১৭টি বিভাগের শ্রেণিকক্ষ, শিক্ষকদের কক্ষ, অফিস কক্ষে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর চালান। প্রতিটি অফিস কক্ষে থাকা কম্পিউটার ও অন্যান্য সামগ্রী লুটপাট করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের অধ্যক্ষ কাকলী মুখোপাধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সাত কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা চলছিল। এ সময় আকস্মিকভাবে কয়েক শ শিক্ষার্থী এসে কলেজের ১৭টি বিভাগে হামলা চালিয়ে ব্যাপক লুটপাট করেছে।
সরেজমিনে দেখা গেল, সোহরাওয়ার্দী কলেজের নিচতলায় শিক্ষকদের কমন রুমের চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করা হয়েছে। আর দোতলায় অবস্থিত ইংরেজি বিভাগের শিক্ষকদের কক্ষে লুটপাট করা হয়েছে। ভাঙচুর করা হয়েছে কলেজটির শৌচাগারও।
গতকাল সন্ধ্যায় দেখা যায়, শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীরা লাঠিসোঁটা হাতে নিয়ে পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কের সামনে অবস্থান নিয়েছিলেন। তখন পুলিশের সঙ্গে তাঁদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। পরে পুলিশের কঠোর অবস্থানের এক পর্যায়ে তাঁরা সড়ক থেকে চলে যান।
মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের প্রতিষ্ঠাতা মাহবুবুর রহমান মোল্লা বলেন, তাঁরা শঙ্কিত, যেকোনো সময় তাঁদের প্রতিষ্ঠানে হামলা চালানো হতে পারে। তিনি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।