গণভবন ও সংসদ ভবন থেকে লুট হওয়া চেয়ার ফেরত নিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। ঢাকা, ০৭ আগস্ট
গণভবন ও সংসদ ভবন থেকে লুট হওয়া চেয়ার ফেরত নিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। ঢাকা, ০৭ আগস্ট

গণভবন ও সংসদ থেকে নেওয়া জিনিসপত্র ফেরত দিচ্ছেন কেউ কেউ

সংসদ ভবনের ফটকের সামনে কয়েকজন শিক্ষার্থী দাঁড়ানো। একজনের হাতে প্ল্যাকার্ড। তাতে লেখা ‘এখানে গণভবন ও সংসদ ভবনের জিনিসপত্র গ্রহণ করা হচ্ছে।’

আজ বুধবার সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা এখানে দাঁড়িয়েছেন। তাঁরা জানান, গণভবন ও সংসদ ভবন থেকে নিয়ে যাওয়া দুটি চেয়ার, একটি প্রিন্টার ও ওয়াকিটকি, কিছু বই ও খেলনাসহ বেশ কিছু সামগ্রী লোকজন ফেরত দিয়ে গেছেন।

গত সোমবার ছাত্র–জনতার গণ–আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেন। তাঁর পদত্যাগের পর প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনে ঢুকে পড়েন অসংখ্য মানুষ। একইভাবে জাতীয় সংসদ সদস্য ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েও লোকজন ঢুকে পড়েন। জিনিসপত্র যা ছিল, তা নিয়ে যান।

ফেরত দেওয়া হয়েছে প্রিন্টার, ওয়াকিটকি ও কিছু সামগ্রী। ঢাকা, ০৭ আগস্ট

গণভবন ও সংসদ ভবন দেখতে গতকাল মঙ্গলবারও হাজারো উৎসুক মানুষের ভিড় ছিল। তবে আজ তেমন ভিড় দেখা যায়নি। কিছু মানুষ উপস্থিত হলেও ভেতরে প্রবেশ করতে পারেননি। এসব স্থাপনার দায়িত্ব নিয়েছেন সেনাবাহিনী ও প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের (পিজিআর) সদস্যরা। তাঁদের সহযোগিতায় কাজ করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

গণভবন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দেয়ালের ভাঙা অংশ দিয়ে সাধারণ মানুষের প্রবেশ ঠেকাতে কাঠবোর্ড, স্টিলের আলমারি, রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশের ব্যবহৃত লোহার ব্যারিকেড, টিন, তক্তা প্রভৃতি দিয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছে। কোথাও কোথাও কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হয়েছে। ভাঙা অংশে অস্থায়ী প্রতিবন্ধকতার পাশাপাশি পিজিআর কিংবা সেনাসদস্যরা দায়িত্ব পালন করছিলেন।

পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মিরপুর ১২ নম্বর থেকে গণভবন দেখতে এসেছিলেন লিয়াকত আলী। তিনি দায়িত্বরত সেনাসদস্যদের একটু ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়ার অনুরোধ করছিলেন।

কম্পিউটারের সিপিইউ, পোশাক ও তৈজসপত্র ফেরত নেওয়ার পর এক স্থানে গুছিয়ে রাখা হয়েছে। ঢাকা, ০৭ আগস্ট

লিয়াকত প্রথম আলোকে বলেন, ‘গণভবনের ভেতরটা কেমন দেখার ইচ্ছা ছিল। টিভিতে দেখলাম অনেকেই ঢুকেছে। তাই এসেছিলাম। সংসদ ভবনেও ঢোকার ইচ্ছা ছিল।’ তবে সেনাসদস্যরা কাউকেই ভেতরে প্রবেশ করতে দেননি।

সংসদ ভবন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে সংসদের দক্ষিণ প্লাজা দিয়ে ভেতরে প্রবেশের দুটি ফটকেই কড়া নিরাপত্তা। মূল ফটকে সেনাবাহিনী ও আনসার সদস্যরা রয়েছেন। এর কিছুটা আগে শিক্ষার্থীরা উৎসুক মানুষকে আটকানোর কাজ করছেন। নিরাপত্তা গলে কেউই ভেতরে প্রবেশ করতে পারছেন না।

দক্ষিণ প্লাজার ফটকের সামনে লুট হওয়া জিনিসপত্র ফেরত নিচ্ছিলেন শিক্ষার্থীরা। তাঁদের একজন তেজগাঁও কলেজের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী জোবায়দুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ভোর ছয়টার পর থেকে এখানে দাঁড়িয়েছি। বেশ কিছু সামগ্রী ফেরত দিয়ে গেছেন লোকজন।’

গণভবনের সামনে উৎসুক মানুষের ভিড়। ঢাকা, ০৭ আগস্ট

জিনিসপত্র ফেরত দেওয়ার সময় লোকজন কী বলেছেন, জানতে চাইলে জোবায়দুর বলেন, ‘লোকজন বলছেন, তাঁরা আনন্দে আত্মহারা হয়ে এসব নিয়ে গিয়েছিলেন। পরে বিষয়টি বুঝতে পেরে ফেরত দিয়েছেন।’

তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, মূল ফটকের কিছুটা দূর থেকেই ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছে। ব্যারিকেডের পেছনে সেনাবাহিনী ও পিজিআর সদস্যরা পাহারা দিচ্ছেন। কার্যালয়ের ভেতর থেকে বের করে আনা টেবিল, চেয়ার ও অন্যান্য বিভিন্ন জিনিসপত্র ফটকের কাছেই স্তূপ করে রাখা।