রেখার গতি, ছন্দের নান্দনিক উপস্থাপনা

শিল্পী আমিনুল ইসলামের রেখাচিত্র প্রদর্শনী ‘অর্গানিসিটি’র সমাপনী অনুষ্ঠানে ‘অঙ্কন থেকে দৃশ্যকল্প’ শীর্ষক বক্তব্য দেন শিল্পী শিশির ভট্টাচার্য। আজ শনিবার রাজধানীর ধানমন্ডির বেঙ্গল শিল্পালয়ে
ছবি: সংগৃহীত

বেঙ্গল শিল্পালয় আয়োজিত শিল্পী আমিনুল ইসলামের রেখাচিত্র প্রদর্শনী ‘অর্গানিসিটি’ শেষ হলো। সমাপনী উপলক্ষে আজ শনিবার বিকেল পাঁচটায় শিল্পী শিশির ভট্টাচার্যের ‘অঙ্কন থেকে দৃশ্যকল্প’ শীর্ষক বক্তৃতার আয়োজন করা হয়।

গত ১৬ মে রাজধানীর ধানমন্ডির বেঙ্গল শিল্পালয়ের আয়োজনে শিল্পী আমিনুল ইসলামের ৯৭টি রেখাচিত্র নিয়ে এ প্রদর্শনী শুরু হয়। বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়েরের সংগ্রহে থাকা শিল্পী আমিনুল ইসলামের তিন শতাধিক রেখাচিত্র থেকে এই কাজগুলো বাছাই করেছেন কিউরেটর ওয়াকিলুর রহমান। এ শিল্পকর্মগুলো ১৯৭০ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে এঁকেছেন শিল্পী।

প্রদর্শনীতে স্থান পাওয়া শিল্পকর্মগুলোর আছে বিশেষ গতি আর সৌন্দর্য। সেগুলো কখনো জ্যামিতিক নকশা সৃষ্টি করে, আবার কখনো লতার মতো জড়িয়ে থেকে ঐক্যের বিন্যাস সৃষ্টি করে। খুব সাদামাটা উপাদান দিয়ে যে কাগজের ওপর অত্যন্ত গভীর নান্দনিক ব্যঞ্জনা সৃষ্টি করা যায়, এই কাজগুলোতে আমিনুল ইসলাম তা দেখিয়েছেন।

সমাপনী অনুষ্ঠানে ‘অঙ্কন থেকে দৃশ্যকল্প’ শীর্ষক বক্তৃতা করেন শিশির ভট্টাচার্য। রেখাচিত্র বা ড্রয়িং কী? কীভাবে সৃষ্টি হয় রেখাচিত্র? দৃশ্যকল্পে রেখাচিত্রের ভূমিকা কী? কিংবা এর সম্ভাবনা কত দূর? এর সীমাবদ্ধতা কী—এসব বিষয় নিয়ে বিশদ আলোচনা করেন তিনি। পাশাপাশি অঙ্কনের ভেতর দিয়ে শিল্পী ও দর্শকের মধ্যে সেতুবন্ধ গড়ে ওঠে, তার অন্তর্নিহিত শক্তির দিকটি তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী, উপস্থিত ছিলেন কিউরেটর শিল্পী ওয়াকিলুর রহমান।

শিল্পী আমিনুল ইসলামের জন্ম ১৯৩১ সালে। মৃত্যু ২০১১ সালের ৮ জুলাই। তিনি ১৯৪৮ সালে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন প্রতিষ্ঠিত ঢাকা আর্ট কলেজের (এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ) প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শেষে তিনি ইতালির ফ্লোরেন্স থেকে উচ্চতর শিক্ষা নিয়ে দেশে ফিরে চারুকলা অনুষদে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। শিক্ষকতা করেন তিন দশক। তিনি ছিলেন দেশের আধুনিক চিত্রকলা আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ।

বাম চেতনায় উজ্জীবিত শিল্পী আমিনুল নান্দনিক বোধ, মানবিক চেতনা, সমাজের প্রতি দায়, আধুনিক মনস্কতা ও নিরন্তর নিরীক্ষার মাধ্যমে দেশের শিল্পকলায় এক স্বকীয় চিত্রভাষা যুক্ত করেছেন। চিত্রকলা চর্চার পাশাপাশি শিল্প-সমালোচনাতেও ছিলেন অগ্রগণ্য। জীবিতকালে তাঁর ৯টি একক ও দেশ-বিদেশে ৪৩টি দলীয় প্রদর্শনী হয়।

স্বাধীনতা পদক, একুশে পদক, পঞ্চম তেহরান বিয়েনালে গ্র্যান্ড ইম্পেরিয়াল পুরস্কারসহ অনেকগুলো পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন তিনি।