নতুন পেনশন কর্মসূচি ‘প্রত্যয়’ প্রত্যাহার করে স্বতন্ত্র বেতন স্কেলের দাবিতে সর্বাত্মক আন্দোলন কর্মসূচি শুরু করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। ভাষাশহীদ রফিক ভবনের সামনে শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচি। ঢাকা, ১ জুলাই
নতুন পেনশন কর্মসূচি ‘প্রত্যয়’ প্রত্যাহার করে স্বতন্ত্র বেতন স্কেলের দাবিতে সর্বাত্মক আন্দোলন কর্মসূচি শুরু করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। ভাষাশহীদ রফিক ভবনের সামনে শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচি। ঢাকা, ১ জুলাই

‘প্রত্যয় প্রত্যাহার’ ও কোটা বাতিলের পরিপত্র পুনর্বহাল: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবেশ, কর্মবিরতি

২০১৮ সালে কোটাপদ্ধতি বাতিল করে জারি করা পরিপত্রটি পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আজ সোমবার ক্যাম্পাসে এক ছাত্রসমাবেশ থেকে এমন দাবি জানানো হয়।
‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়’ ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়টির ভাষা শহীদ রফিক ভবনের সামনে এই ছাত্রসমাবেশ হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।

এদিকে নতুন পেনশন কর্মসূচি ‘প্রত্যয়’ প্রত্যাহার করে স্বতন্ত্র বেতন স্কেলের দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ও দাপ্তরিক দায়িত্ব পালন না করে সর্বাত্মক আন্দোলন কর্মসূচি শুরু করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। একই দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও কর্মবিরতি পালন করছেন।

কোটা সংস্কারের দাবি

সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে ২০১৮ সালে বড় ছাত্র আন্দোলন হয়েছিল। সেই আন্দোলনের জেরে এক পরিপত্রের মাধ্যমে সরকার কোটাব্যবস্থাই বাতিল করে দেয়। সম্প্রতি এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে সেই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটার অংশটি বাতিল করেন উচ্চ আদালত। এরপর আবারও শুরু হয়েছে আন্দোলন।

এর অংশ হিসেবে আজ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত ছাত্রসমাবেশে অংশগ্রহণকারীরা কোটাব্যবস্থা বাতিলের পরিপত্রটি পুনর্বহালের আহ্বান জানিয়ে চার দফা দাবি উপস্থাপন করেন। দাবিগুলো হলো, ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটাপদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখা। পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে (সব গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দেওয়া এবং কোটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে নিয়ে আসা (এ ক্ষেত্রে সংবিধান অনুযায়ী কেবল অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে)।

বাকি দুটি দাবির একটি হলো, সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা–সুবিধা একাধিকবার ব্যবহারের সুযোগ না দেওয়া এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোয় মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া। অপর দাবিটি হলো, দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জসীম উদ্দিন বলেন, ‘সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে কোটা নয়, মেধাকে যাচাই করে চাকরি নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্বে বিভিন্ন দেশের মতো আমাদের দেশেও কোটা আধুনিকায়ন করতে হবে।’

বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, তৃতীয় ও চতুর্থ গ্রেডে কোটাপদ্ধতি প্রয়োগের ক্ষেত্রে আমূল সংস্কার করতে হবে। এ ছাড়া একই কোটা বারবার প্রয়োগের বিষয়টি বাতিল হওয়া উচিত।

স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর যে দেশের শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ কর্মহীন, সেখানে এ ধরনের কোটাপ্রথা রীতিমতো বৈষম্য।

কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা সমাবেশ শেষে একটি কোটাবিরোধী বিক্ষোভ মিছিল করেন।

মিছিলটি ক্যাম্পাসের প্রধান ফটক থেকে বের হয়ে পুরান ঢাকার শাঁখারী বাজার, মহানগর ও দায়রা জজ আদালতের সামনে দিয়ে রায়সাহেব বাজার মোড় ঘুরে ইংলিশ রোড, ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ ও বাহাদুর শাহ পার্ক ঘুরে আবার ক্যাম্পাসে এসে শেষ হয়।

পবিত্র ঈদুল আজহার আগে গত ৫ জুন সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন করপোরেশনের চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে (৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড) মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন উচ্চ আদালত। ওই দিন থেকেই বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী আন্দোলনে নামেন। এ অবস্থায় আদালতের ওই রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করে। আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে আবেদনটির ওপর শুনানির জন্য ৪ জুলাই দিন নির্ধারণ করা হয়।

কর্মবিরতিতে শিক্ষক-কর্মচারীরা

নতুন পেনশন কর্মসূচি ‘প্রত্যয়’ প্রত্যাহার করে স্বতন্ত্র বেতন স্কেলের দাবিতে আজ সকাল থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ও দাপ্তরিক দায়িত্ব পালন না করে সর্বাত্মক আন্দোলন কর্মসূচি শুরু করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা।

ভাষা শহীদ রফিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষকেরা। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাড়ে ৭০০ শিক্ষকের মধ্যে প্রায় শতাধিক শিক্ষক অংশ নেন। পাশেই নতুন ভবনের সামনে অস্থায়ী প্যান্ডেল করে কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।

কর্মসূচির কারণে অধিকাংশ বিভাগেই শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল না।

কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া শিক্ষকেরা বলেন, দাবি পূরণ না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগের ও ইনস্টিটিউটের ক্লাসগুলো বন্ধ রয়েছে। এই সময় অনলাইন, সান্ধ্যকালীন, শুক্র ও শনিবারের প্রফেশনাল কোর্সের ক্লাস ও অন্যান্য কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। বিভাগীয় অফিস, সেমিনার, কম্পিউটার ল্যাব ও গবেষণাগারও বন্ধ থাকবে। পাশাপাশি মিডটার্ম, ফাইনাল, মৌখিক, ভর্তি পরীক্ষাসহ কোনো পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে না।

শিক্ষকেরা আরও বলেন, একাডেমিক কমিটি, পরিকল্পনা কমিটি, প্রশ্নপত্র সমন্বয় ও অন্যান্য সভা অনুষ্ঠিত হবে না। ভর্তি পরীক্ষাসহ ডিন অফিসের সব কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। কোনো সেমিনার, কনফারেন্স ও ওয়ার্কশপ অনুষ্ঠিত হবে না এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো শিক্ষক প্রশাসনিক কোনো দায়িত্ব পালন করবেন না।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ মাশরিক হাসান প্রথম আলোকে বলেন, কর্মসূচিটি শুধু বর্তমান শিক্ষকদের জন্য নয়, আগামী দিনে যে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকতায় আসবেন, তাঁদের জন্যও। এই আন্দোলন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসমাজের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসনে হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে আন্দোলন। শিক্ষকদের ন্যায্য দাবিগুলো আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালিত হবে।