মিডওয়াইফ বা ধাত্রী নিয়োগ দেওয়ার কারণে মাতৃমৃত্যু কমেছে, পাশাপাশি স্বাভাবিক প্রসব বেড়েছে। তবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে তাঁদের নার্স হিসেবে কাজে লাগানো হচ্ছে। মিডওয়াইফ কর্মসূচি নিয়ে নজরদারির ঘাটতি আছে।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সরকারি কর্মকর্তা ও গবেষকেরা এ কথা বলেন। নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর; ব্র্যাক জেমস পি গ্রান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। দেশে ধাত্রীবিদ্যা শিক্ষা ও সেবা পরিস্থিতির মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাকসুরা নূর বলেন, স্বাস্থ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে ২২ হাজার ধাত্রী নিয়োগ দিতে হবে। দেশে এ পর্যন্ত ধাত্রী তৈরি হয়েছে সাত হাজার। এর মধ্যে আড়াই হাজার ধাত্রী কাজ করছেন সরকারি হাসপাতালে। বাকিরা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। তিনি আরও বলেন, দেশে এ বিষয়ে কাজ শুরু হয়েছে ১০ বছর আগে। প্রথম ধাত্রী নিয়োগ হয় ২০১৮ সালে। খুব শিগগির জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে ৫১৮ জন ধাত্রী নিয়োগ দেওয়া হবে। এ ছাড়া ১০ হাজার ধাত্রীর পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের মিডওয়াইফারি কার্যক্রমের প্রধান শারমিনা রহমান। তিনি বলেন, কার্যক্রম অল্প দিন আগে শুরু হলেও বাংলাদেশের অগ্রগতি অনেক।
শারমিনা রহমান বলেন, ২ হাজার ৫৫৬ জন ধাত্রী সরকারি হাসপাতালে কাজ করছেন। কিন্তু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে তাঁদের দিয়ে নার্সের কাজ করানো হচ্ছে। তিনি বলেন, ধাত্রীবিদ্যা শিক্ষা ও সেবা নিয়ে নজরদারি ও মূল্যায়ন নেই বললেই চলে।
দেশে মাতৃমৃত্যুর হার অনেক বেশি। ২০৩০ সালের মধ্যে এই হার ৭০–এ নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা আছে। অনেকে মনে করেন, এটা কঠিন কাজ।
এই লক্ষ্য অর্জনে অন্যান্য উদ্যোগের পাশাপাশি সরকার আরও অনেক দেশের মতো ধাত্রী নিয়োগের পদক্ষেপ নেওয়ায় ইতিমধ্যে সুফল পাওয়া গেছে।
অনুষ্ঠানে ইউএনএফপিএর প্রতিনিধি এমদাদ হোসেন বলেন, গত এক বছরে ৩৯৬টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মাতৃমৃত্যু কম দেখা গেছে, অস্ত্রোপচারে প্রসব কম হয়েছে, স্বাভাবিক প্রসব বেড়েছে।
মাতৃস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র অ্যাসোসিয়েট হালিদা হানুম আক্তার বলেন, যে দেশ যত দ্রুত ধাত্রী নিয়োগ দিতে পেরেছে, সে দেশ তত দ্রুত মাতৃমৃত্যু কমাতে পেরেছে। তিনি বলেন, দেশে ৪৮ শতাংশ গর্ভধারণ হচ্ছে অনাকাঙ্ক্ষিত। পাশাপাশি দেশে গর্ভপাতজনিত মৃত্যু বাড়ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাতৃ, নবজাতক ও কৈশোর স্বাস্থ্য কর্মসূচির পরিচালক নিজাম উদ্দিন বলেন, মানসিকভাবে প্রস্তুত না হলে একজন মা সুস্থ শিশু জন্ম দিতে পারেন না। অনেকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রসব করাতে চান না অস্ত্রোপচার করা হবে এই ভয়ে। গোপনীয়তা থাকে না বলে অনেকে যান না। অনেকে বাচ্চা চুরির ভয়ে থাকেন। কেউ কেউ মনে করেন, বাচ্চা পাল্টে যেতে পারে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জাতীয় কর্মসূচি কর্মকর্তা মো নুরুজ্জামান। আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা বলেন, ধাত্রীদের স্বাধীন পেশাজীবী হিসেবে কাজ করতে দিতে হবে, শিক্ষার মান উন্নত করতে হবে, বেসরকারি খাতের ওপর নজরদারি বাড়াতে হবে।
ইউএনএফপিএর ধাত্রী বিশেষজ্ঞ জয় কেম্প বলেন, ধাত্রীদের কাজের সঠিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।