যাত্রাবাড়ীতে নিহতদের নাম-পরিচয়–সংবলিত স্মৃতিফলক উন্মোচন

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় নিহতদের নাম-পরিচয় সংবলিত স্মৃতিফলক ‘শহীদী ঐক্য চত্বর’-এর উন্মোচন করেছে জুলাই বিপ্লব পরিষদ। স্মৃতিফলকে প্রাথমিকভাবে ৪৮ শহীদের নাম স্থান পেয়েছে। ভবিষ্যতে যাচাই-বাছাই করে আরও নাম যুক্ত হবে।

শহীদ পরিবারের সদস্য, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠনের নেতারা আজ সোমবার বিকেলে যাত্রাবাড়ী গোলচত্বরে নির্মিত এই স্মৃতিফলক উন্মোচন করেন।

স্মৃতিফলকে নামের পাশাপাশি শহীদদের পেশা, জন্ম ও মৃত্যুর তথ্য যুক্ত করা হয়েছে। এতে স্থান পাওয়া শহীদদের মধ্যে শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, সাংবাদিক, প্রবাসী, ফ্রিল্যান্সার (স্বাধীন পেশার মানুষ), মিস্ত্রি, শ্রমিক, ব্যবসায়ী, অটোরিকশাচালকসহ নানা পেশার মানুষ রয়েছেন।

জুলাই বিপ্লব পরিষদ জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে যাত্রাবাড়ীতে ৫৮ নিহত ব্যক্তির নাম পেলেও যাচাই-বাছাই করে ৪৮ জনের তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। স্মৃতিফলকে আপাতত তাঁদের নাম-পরিচয় যুক্ত করা হয়েছে। যাচাই-বাছাই করে পরবর্তী সময়ে এখানে আরও নাম যুক্ত করা হবে।

স্মৃতিফলক উন্মোচন অনুষ্ঠানের শুরুতে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে যোগদানকারীদের অনেকে কালো পোশাক পরে আসেন। ‘আবু সাঈদ, মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না’সহ বিভিন্ন ধরনের স্লোগানও দেন উপস্থিত ছাত্র-জনতা।

স্মৃতিফলক উন্মোচনের আগে নিহতদের পরিবার, আন্দোলনকারী ও আয়োজকেরা বক্তব্য দেন। সন্তান হারানোর কথা বলতে গিয়ে নিহত ব্যক্তিদের মা-বাবাদের কেউ কেউ কান্নায় ভেঙে পড়েন।

মারা যাওয়ার তিন দিন পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছেলে আশরাফুলের মরদেহের খোঁজ পেয়েছিলেন মা হামিদা বানু। কথা বলতে গিয়ে সন্তান হত্যার বিচার চেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। হামিদা বানু বলেন, ‘বাঁইচা থাকলে আমার ছেলে ডাক্তার হইত, আমার ছেলে মাওলানা হইত, আমার ছেলে ইঞ্জিনিয়ার হইতে পারত। আমার ছেলেরে ওই সুযোগটা দেওয়া হয় নাই।’

শহীদ মিরাজের বাবা রব মিয়া বলেন, ‘ সরকার আন্দোলনে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের পরিবারের পাশে যেভাবে দাঁড়িয়েছে, একইভাবে সব নিহতের পাশে দাঁড়াক।’ এই আন্দোলনে নিহতদের শহীদের মর্যাদা দেওয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সরকার যেন হত্যাকারীদের বিচার করে।’

স্মৃতিফলকে প্রাথমিকভাবে ৪৮ জনের নাম স্থান পেয়েছে। পরবর্তীতে যাচাই-বাছাই করে আরও শহীদের নাম যুক্ত করা হবে। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী গোলচত্বরে নবনির্মিত  ‘শহীদী ঐক্য চত্বর’, ২১ অক্টোবর ২০২৪

চাকরিজীবী আব্দুর রহমানকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে তাঁর বাবা বাবুল সরদার বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ও তাদের অনুগত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে আমার সন্তানের মৃত্যু হয়েছে। এই বাংলার মাটিতে আওয়ামী লীগ আর যেন রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন না করতে পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে।’

নিহত মো. ইয়াসির সরকারের বাবা ইউসুফ সরকার বলেন, ‘আমার ছেলের বুকে দুটি ও পেটে একটি গুলি লেগেছিল; কিন্তু আমি এখনো ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে মৃত্যুসনদ পাইনি।’

বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠী গণ-অভ্যুত্থানের একক কৃতিত্ব নেওয়ার চেষ্টা করছে উল্লেখ করে জুলাই বিপ্লব পরিষদের স্থায়ী কমিটির সদস্য শাহনেওয়াজ ফাহাদ বলেন, ‘কোনো একটি পক্ষ নয়, সমন্বিত শক্তি ফ্যাসিস্ট সরকারকে তাড়িয়েছে। একটি রাজনৈতিক শক্তি (আওয়ামী লীগকে) তাড়িয়েছে, এটা ফ্যাসিস্টদের জন্য সম্মানজনক। (কিন্তু) ছাত্র-জনতা তাড়িয়েছে, এটা তাদের জন্য সম্মানজনক নয়।’

শাহনেওয়াজ ফাহাদ আরও বলেন, ‘একজন ট্রাফিক পুলিশের চাঁদাবাজি ধরে, কিংবা একটি হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে সংকটের সমাধান হবে না। এ জন্য নীতির সংস্কার করতে হবে।’

শহীদী ঐক্য চত্বরের স্মৃতিফলক উন্মোচন অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন জুলাই বিপ্লব পরিষদের স্থায়ী কমিটির সদস্য শাকিল আহমেদ, আবুল হাসান, বিএনপি নেতা নবী উল্লাহ নবী, রাষ্ট্র সংস্কারের নির্বাহী কমিটির অর্থনৈতিক সমন্বয়ক দিদারুল ভূঁইয়া, জাগ্রত বাংলাদেশের সভাপতি আজমুল জিহাদ। এবি পার্টির নেতা আব্দুল ওহাবসহ নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের অনেকে এ সময় উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জুলাই বিপ্লব পরিষদের সদস্য আসিফ আদনান।