পানিতে তলিয়ে থাকা ঢাকার বিভিন্ন সড়কে মধ্যরাতেও আটকে ছিল শত শত গাড়ি। মানুষের প্রচণ্ড দুর্ভোগ।
অতি ভারী বৃষ্টিতে ব্যাপক ভোগান্তি পোহালেন ঢাকাবাসী। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে টানা কয়েক ঘণ্টার মুষলধারে বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার রাস্তা। পানিতে তলিয়ে থাকা রাস্তায় কোথাও কোথাও বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। এ ছাড়া বিভিন্ন জায়গায় জমে থাকা পানিতে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়ছে; কোথাও কোথাও আগুন লেগেছে—এমন খবরও পাওয়া গেছে গতকাল রাতে।
জলমগ্ন সড়কে আটকা পড়ে দীর্ঘ সময় পার করতে হয়েছে অনেককে। তাদের একজন ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী চন্দ্রিকা রহমান। সে প্রথম আলোকে জানায়, স্কুল ছুটির পর কোচিং করে মায়ের সঙ্গে রাত নয়টায় সিদ্ধেশ্বরী থেকে বাসায় ফিরছিল। তাদের বাসা পশ্চিম ধানমন্ডির মিতালী সড়কে।
ফেরার পথে রাত ১০টার দিকে ধানমন্ডি-৫ নম্বর সড়কসংলগ্ন সাতমসজিদ সড়কে এলে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় পানি ঢুকে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ সময় কোনো যানবাহন না পেয়ে বন্ধ অটোরিকশায় বসে থাকতে হয় তাদের।
অতি বৃষ্টিতে ড্রেনেজ সমস্যায় ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থান পানিতে ডুবে গেছে। বেশি পানি জমে যাওয়ায় কোনো কোনো স্থানে গাড়ি চলছে না। আবার বৃষ্টি ঝরতে থাকায় সড়ক থেকে পানি কমছে না। এসব কারণে রাস্তায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।মো. মুনিবুর রহমান, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অফিস শেষে রাত পৌনে ১০টায় বের হয়েছিলেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মানসুরা হোসাইন। তখন মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিল। মানসুরা হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, অফিসের সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে এক সহকর্মীর সঙ্গে বাসার উদ্দেশে রওনা দেন তিনি। পথে বিজয় সরণিতে সড়কের পানিতে অটোরিকশাটি বন্ধ হয়ে যায়। তখন অটোরিকশা থেকে নেমে রিকশায় করে কলেজ গেট পর্যন্ত পৌঁছান তিনি। সেখান থেকে মোটরসাইকেলযোগে মোহাম্মদপুরের শেখেরটেকে যখন নিজের বাসায় যান, ঘড়িতে তখন বাজে রাত সাড়ে ১২টা।
শুধু তিনিই নন, টানা ভারী বৃষ্টিতে রাজধানীর সড়কে জলাবদ্ধতা ও যানজটে প্রচণ্ড দুর্ভোগে পড়েছেন ঘরমুখী অনেকে। রাত ৯টার দিকে ধানমন্ডি ১৪ নম্বরের ২২ নম্বর বাড়ির সামনে একটি কড়ইগাছ ভেঙে সড়কের ওপর পড়ে। এতে কেউ হতাহত না হলেও রাস্তায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। ফায়ার সার্ভিস জানায়, গাছটি এতই বড় যে তা ফায়াার সার্ভিসের পক্ষে সরানো সম্ভব হয়নি। রাতে ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে বলা হয়, বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়ছে, আবার আগুন লেগেছে—এমন খবর দিয়ে সাহায্য চাওয়া হচ্ছে।
গতকাল রাত ১১টার দিকে রাজধানীর বেগম রোকেয়া সরণিতে কয়েক শ গাড়ি আটকা পড়ে। এর আধা ঘণ্টা আগেই তলিয়ে যায় গ্রিন রোড এলাকা। রাত সোয়া ১০টার দিকে ওই সড়কে বহু গাড়ি আটকে থাকতে দেখা যায়।
রাত সাড়ে ১০টার দিকে নীলক্ষেত, কাঁটাবন, হাতিরপুল এলাকার সড়কেও পানি জমতে দেখা যায়। আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকায় সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ১১৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আজও ঢাকায় বৃষ্টি হতে পারে বলে জানান এই আবহাওয়াবিদ।
গতকাল রাতের ঢাকার পরিস্থিতি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে হতাশা প্রকাশ করেছেন। একজন লিখেছেন, ‘পান্থপথ সিগন্যাল থেকে সেন্ট্রাল রোডে রিকশাভাড়া চাইল ২০০ টাকা। মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে অবাক হুওয়ার কিছু নেই। আমাদের মাঝে জিম্মি করার প্রবণতা বেশি, সব পেশাজীবীর মধ্যেই।’
আরেকজন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘মহাখালী থেকে শেওড়াপাড়া আসতে প্রায় ৪ ঘণ্টা! এখন রাত মাত্র ১টা! বাসায় যাব কখন!’
যানজটের পরিস্থিতি তুলে ধরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মো. মুনিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, অতি বৃষ্টিতে ড্রেনেজ সমস্যায় ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থান পানিতে ডুবে গেছে। বেশি পানি জমে যাওয়ায় কোনো কোনো স্থানে গাড়ি চলছে না। আবার বৃষ্টি ঝরতে থাকায় সড়ক থেকে পানি কমছে না। এসব কারণে রাস্তায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।