প্লাস্টিক বর্জ্য
প্লাস্টিক বর্জ্য

আইনের সঠিক ব্যবহার হলে প্লাস্টিকের বিকল্প গড়ে উঠবে

প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার বন্ধে আইনের সঠিক প্রয়োগ করা গেলে বিকল্প গড়ে উঠবে। তখন সবাই প্লাস্টিকের বিকল্প পণ্য ব্যবহার করতে বাধ্য হবে। প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার বন্ধে ২০০২ সালে আইন করা হলেও গত ২২ বছরে তার সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকার সেই কাজে হাত দিয়েছে।

৩১ অক্টোবর বিশ্ব শহর দিবস উপলক্ষে ব্র্যাক আয়োজিত ‘প্লাস্টিক বর্জ্য হ্রাস, জাতীয় নীতি ও টেকসই পদক্ষেপ’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেছেন। সোমবার রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত ব্র্যাক সেন্টারে ওই আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্।

ড. ফারহিনা আহমেদ বলেন, ‘আজ আমরা যেসব প্লাস্টিক বর্জ্য হিসেবে ফেলে দিচ্ছি, তার কোনো কোনোটি আগামী ৪০০ বছরেও ধ্বংস হবে না। ২২ বছর আগে প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। এত দিন পরে এসে যখন বলা হয় বিকল্প নেই, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ ক্ষেত্রে সরকার সব রকমের সহায়তা দেবে। কিন্তু সাজিয়ে-গুছিয়ে বিকল্প তৈরি করে দেবে না। আমরা সবাই আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদের রক্ষক। প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে আমরা সকলের প্রতি আহ্বান জানাই।’

অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ব্র্যাকের ক্লাইমেট চেঞ্জ, আরবান ডেভেলপমেন্ট ও ডিজাস্টার রিস্ক ম্যানেজমেন্টের পরিচালক ড. মো. লিয়াকত আলী। তিনি বলেন, ‘টেকসই প্লাস্টিক ব্যবস্থাপনার জন্য জাতীয় কর্মপরিকল্পনার ভিত্তিতে আমাদের লক্ষ্য হলো ২০২৫ সালের মধ্যে ৫০ ভাগ পুনর্ব্যবহারযোগ্যতা অর্জন এবং ২০৩০ সালের মধ্যে প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদন ৩০ শতাংশ কমানো।’

ব্র্যাক এন্টারপ্রাইজের ঊর্ধ্বতন পরিচালক মোহাম্মদ আনিসুর রহমান বলেন, শক্ত প্লাস্টিক প্রায় শতভাগ ক্ষেত্রেই পুনর্ব্যবহার হয়। কারণ, এর একটা বাজারমূল্য রয়েছে। অন্যদিকে নরম বা একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের পুনর্ব্যবহারের বাণিজ্যিক মূল্য নেই। তাই তা পথে-ঘাটে সবখানে দেখতে পাওয়া যায়। তাইওয়ানের মতো সরকার একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে ভর্তুকি দিচ্ছে।

নেস্‌লে বাংলাদেশের কোম্পানি সেক্রেটারি এবং হেড অব লিগ্যাল অ্যান্ড ট্যাক্সেশন দেবব্রত রায় চৌধুরী বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে নেস্‌লের শতভাগ পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্যাকেজিংয়ের পরিকল্পনা আছে। তবে এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো মোট প্লাস্টিক বর্জ্যের মাত্র ৩০ শতাংশ আনুষ্ঠানিক খাত থেকে আসে এবং বাকিটা অনানুষ্ঠানিক খাত থেকে উৎপন্ন হয়।

এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (ইএসডিও) ইকোলজিস্ট অ্যান্ড সোশ্যাল জাস্টিস অ্যাডভোকেট ড. শাহরিয়ার হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশই বিশ্বে প্রথম প্লাস্টিক ব্যাগ নিষিদ্ধ করে। কিন্তু আমরা এখনো তা কার্যকর করতে পারিনি। ২২ বছরেও আইনের প্রয়োগ না হওয়ায় প্লাস্টিকের বিকল্প গড়ে ওঠেনি। আমরা প্লাস্টিকের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছি। আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমেই প্লাস্টিকের বিকল্প গড়ে উঠবে।’