২০০২ সালে ছাত্রদলের দুই গ্রুপের বন্দুকযুদ্ধে নিহত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্রী সাবেকুন নাহার সনির বাবা হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। আজ শনিবার সকালে রাজধানীর একটি হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। হাবিবুর রহমান ভূঁইয়ার পরিবারের সদস্যরা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সনির ভাই মাকসুদুর রহমান রানা মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাবা আজ সকাল সাড়ে আটটার মধ্যে যেকোনো সময় মারা গেছেন। আমরা তাঁর লাশ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিয়ে যাব। এ মুহূর্তে এর বেশি আর কোনো কথা বলতে পারছি না।’
২০০২ সালের ৮ জুন দরপত্র নিয়ে বুয়েট ছাত্রদলের মুকি এবং এসএম হল ছাত্রদলের টগর গ্রুপের বন্দুকযুদ্ধের মাঝখানে পড়ে নিহত হন বুয়েটের কেমিকৌশল বিভাগের ১৯৯৯ ব্যাচের ছাত্রী সাবেকুন নাহার সনি। এ ঘটনার পর সারা দেশে আন্দোলন হয়। সনি হত্যা মামলার রায় হলেও দুই আসামি এখনো পলাতক। সনির বাবা হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া মেয়ের হত্যাকারীদের বিচারের পাশাপাশি সন্ত্রাসমুক্ত শিক্ষাঙ্গনের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিলেন।
গত বছর সনির ২০তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বুয়েট ক্যাম্পাসে সনির স্মৃতিফলকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছিল। এ সময় অন্যদের সঙ্গে সনি হত্যার দিনটিকে (৮ জুন) ‘সন্ত্রাসমুক্ত শিক্ষাঙ্গন দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করার দাবি করেছিলেন সনির বাবা।
প্রথম আলোতে প্রকাশিত খবর বলছে, সনির ২০তম মৃত্যুবার্ষিকীতে মানববন্ধনে সনির বাবা হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া বলেছিলেন, ‘কোনো বাবা যেন আর কোনো সনিকে না হারায়। আমি এক সনিকে হারিয়ে আমার চোখে হাজারো সনিকে দেখেছি। শিক্ষাঙ্গন একদিন সন্ত্রাসমুক্ত হবে। জানি তার জন্য অনেক দিন অপেক্ষা করতে হবে। তবে আমি হতাশ নই। একদিন দেশে সুদিন আসবে। হাজারো বেঁচে থাকা সনিদের জন্য আমাদের সুন্দর পরিবেশ গড়ে তোলার অঙ্গীকার করতে হবে।’
হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া ব্লাড ক্যানসারে (থার্ড স্টেজ) ভুগছিলেন। গত বছর সেপ্টেম্বরে ক্যানসার ধরা পড়ে। জানুয়ারি মাসে প্রথম কেমো নেওয়ার পর নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন। ভর্তি ছিলেন রাজধানীর কল্যাণপুরের ইবনে সিনা হাসপাতালে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সনির বাবার জন্য সহায়তা চেয়েছিলেন সংযোগ কানেক্টিং পিপলস ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও বুয়েটের সাবেক শিক্ষার্থী আহমেদ জাভেদ জামাল। তাতে মানুষ সাড়াও দিয়েছিল। প্রায় ১১ লাখ টাকা সহায়তা পাওয়া গিয়েছিল। সে টাকা সনির ভাই মাকসুদুর রহমান রানার হাতে তুলে দেওয়া হয়।
আহমেদ জাভেদ জামাল আজ প্রথম আলোকে বলেন,‘সনির জন্য আন্দোলন করেছিলাম ২০০২ সালে। কিছুই হয়নি। ২০২৩ সালে সনির বাবার চিকিৎসা সহায়তায় পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলাম। তা–ও কিছু করতে পারলাম না। একটা পরিবার কী পরিমাণ দুঃখ নিয়ে বেঁচে আছে, তা ভেবেই মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে।’
আহমেদ জাভেদ জামাল আরও বলেন, পরিবার সনির বাবার চিকিৎসার খরচ বহনের জন্য বুয়েট প্রশাসন এবং সরকারের কাছে আবেদন করেছিল। কিন্তু সে আবেদনে কেউ সাড়া দেয়নি।
ঢাকার বিচারিক আদালতে সনি হত্যা মামলার রায় হয় ২০০৩ সালের ২৯ জুন। রায়ে ছাত্রদলের নেতা মুশফিক উদ্দিন ওরফে টগর, মোকাম্মেল হায়াত খান ওরফে মুকি ও নুরুল ইসলাম ওরফে সাগরকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া পাঁচজনকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
পরে ২০০৬ সালের ১০ মার্চ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিনজনের সাজা কমিয়ে তাঁদেরও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন উচ্চ আদালত। পাশাপাশি যাবজ্জীবন দণ্ড পাওয়া পাঁচ আসামির মধ্যে দুজনকে খালাসও দেওয়া হয়। এ হত্যাকাণ্ডে দণ্ডিত ছয় আসামির মধ্যে চারজন কারাগারে আছেন। মোকাম্মেল ও নুরুল এখনো পলাতক।