সাঈদীর গায়েবানা জানাজার অনুমতি নয়: ডিএমপি কমিশনার

সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক
 ছবি: প্রথম আলো

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমৃত্যু কারাদণ্ড পাওয়া দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাজা করার অনুমতি দেবে না পুলিশ। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক এই তথ্য জানিয়েছেন।

সাঈদী গতকাল সোমবার রাত ৮টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর শাহবাগের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে মারা যান। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। সাঈদী জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ছিলেন। তিনি জামায়াতের রাজনীতির পাশাপাশি ওয়াজ করা বা ধর্মীয় বক্তা হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

সাঈদীর মারা যাওয়ার পরের ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে জানাতে আজ মঙ্গলবার রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, বিএসএমএমইউ হাসপাতালে সাঈদী মারা যাওয়ার সময় তাঁর দুই ছেলে উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বলেছিলেন, হাসপাতাল থেকে সাঈদীর মরদেহ পিরোজপুরে নিয়ে যাবেন। পরে কারা কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে সাঈদীর মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তরের কথা জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ জন্য সুরতহাল প্রস্তুত করা হয়। ময়নাতদন্তের জন্য তাঁর মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজে নেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হয়। তখন সাঈদীর পরিবারের পক্ষ থেকে ময়নাতদন্ত ছাড়া মরদেহ হস্তান্তরের কথা বলা হয়।

খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, গতকাল দিবাগত রাত একটার দিকে জামায়াতে ইসলামীর কয়েক হাজার নেতা-কর্মী সাঈদীর জানাজা পড়ার দাবি তোলেন। কিন্তু তাঁরা জানাজা না পড়িয়ে আধঘণ্টা ধরে মোনাজাত করেন। বিএসএমএমইউ হাসপাতাল থেকে সাঈদীর মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স সড়কে বের হলে জামায়াতের নেতা-কর্মীরা সামনে শুয়ে পড়েন। এ সময় ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনারসহ অ্যাম্বুলেন্সটির আশপাশে থাকা পুলিশ কর্মকর্তাদের গায়ে হাত তোলেন জামায়াতের নেতা-কর্মীরা। তাঁরা পুলিশের চার থেকে পাঁচটি গাড়ি ভাঙচুর করেন। পুলিশের দুটি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়। তারপরও পুলিশ সব সহ্য করে।

খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, ফজরের নামাজের পরও জামায়াতের নেতা-কর্মীরা সাঈদীর জানাজা পড়েননি। তাঁরা ফেসবুকে জামায়াতের নেতা-কর্মীদের শাহবাগে আসার আহ্বান জানান। আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটার আশঙ্কায় তখন পুলিশ জামায়াতের নেতা-কর্মীদের ওপর সীমিত আকারে শক্তি প্রয়োগ করে। কিছু কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করা হয়। এরপর জামায়াতের নেতা-কর্মীরা ছাত্রভঙ্গ হয়ে যান।

পরে অ্যাম্বুলেন্সে সাঈদীর মরদেহ ঢাকা থেকে পিরোজপুরের উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়। জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীদের এমন কর্মকাণ্ডের জন্য সাঈদীর গায়েবানা জানাজা করার কোনো অনুমতি দেবে না পুলিশ।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, গতকাল রাত ৯টার পর থেকে জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা শাহবাগে হাসপাতালের সামনে জড়ো হচ্ছিলেন। এই তথ্য পুলিশের জানা ছিল। পুলিশ অনেক ধৈর্য দেখিয়েছে। তবে জামায়াত-শিবিরের চরিত্র মোটেও বদলায়নি। তারা তা গতকাল রাতে আবার প্রমাণ করেছে।