ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

উপাচার্যের বাসভবনের সামনে কুয়েত মৈত্রী হলের ছাত্রীদের অবস্থান

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলে আবাসনসংকট নিরসনের তিন দফা দাবি আদায়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছেন হলটির একদল ছাত্রী
ছবি: প্রথম আলো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলে আবাসনসংকট নিরসনের তিন দফা দাবি আদায়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছেন হলটির একদল ছাত্রী৷

দাবি আদায়ে আজ সোমবার বেলা একটার দিকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন কুয়েত মৈত্রী হলের একদল ছাত্রী। বেলা তিনটার কিছু আগে তিনজনের একটি প্রতিনিধিদল হলের প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে দেখা করতে যায়। অন্যরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান করছেন।

তাঁদের দাবিগুলো হলো, বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হল থেকে অন্তত ৩০০ জন শিক্ষার্থীকে অন্য হলে এক মাসের মধ্যে স্থানান্তরের মাধ্যমে বৈধ আসন নিশ্চিত করা, পরবর্তী সময় হলের আসনসংখ্যার সঙ্গে সমন্বয় রেখে নতুন শিক্ষার্থী অ্যালটমেন্ট দেওয়া এবং হলের সার্বিক সংকট বিবেচনায় মূল ভবনের প্রতি কক্ষে ছয়জনের বেশি শিক্ষার্থী বরাদ্দ দিয়ে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট না করা৷

গতকাল রোববার বিকেলে একই বিষয়ে শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। তার ঠিক আগে তাঁরা তিন দাবিতে উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানকে শতাধিক ছাত্রীর স্বাক্ষরসংবলিত স্মারকলিপিও দেন।

গতকালের সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রীরা বলেছেন, তাঁদের দাবির বিষয়ে উপাচার্য ইতিবাচক সাড়া দেননি। এরপর আজ ছাত্রীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিলেন। তাঁদের হাতে দাবিসংবলিত বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড আছে।

কুয়েত মৈত্রী হল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ছাত্রী হল। এটি নিউমার্কেট এলাকায় অবস্থিত।

আবাসনসংকট নিরসনে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেওয়া হলটির ছাত্রীরা বলছেন, অন্য ছাত্রীরা হলে ছয় মাস অতিথিকক্ষে থাকার পর বৈধ আসন পাওয়া যায়। কিন্তু বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলে সে রকম সুযোগ নেই। বর্তমানে চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীরাও এখনো অতিথিকক্ষে থাকছেন। অতিথিকক্ষে শিক্ষার্থীদের চাপ কমানোর জন্য বর্তমানে যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা হলো মূল ভবনের কক্ষগুলোতে প্রতিটিতে সাতজনকে আসন বরাদ্দ করা। কুয়েত মৈত্রী হলে মূল ভবনে বৈধ আসনের কক্ষের সংখ্যা ৮৯। ৫৭টি কক্ষে বর্তমানে সাতজন করে আসন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অন্য ৩১টি কক্ষে ৬ জন করে শিক্ষার্থী অবস্থান করছেন। সে ক্ষেত্রে সব কক্ষে সাতজন শিক্ষার্থীকে বরাদ্দ দেওয়া হলেও অতিথিকক্ষ থেকে সর্বোচ্চ ৩১ জন শিক্ষার্থীকে মূল ভবনে বৈধ আসন দেওয়া সম্ভব। অর্থাৎ, এই পদক্ষেপে প্রকৃতপক্ষে আসনসংকটের সমাধান হচ্ছে না। একই সঙ্গে মূল ভবনে এক কক্ষে সাতজন করে শিক্ষার্থী বরাদ্দ দেওয়ায় সেখানে বসবাসের অযোগ্য পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। শিক্ষা-উপযোগী পরিবেশ সেখানে একেবারেই থাকছে না।

দাবিসংবলিত বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড হাতে অবস্থান নেন বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলের একদল ছাত্রী

অবস্থান কর্মসূচিতে থাকা একাধিক ছাত্রী বলেন, কুয়েত মৈত্রী হলে আসন বরাদ্দ পাওয়া শিক্ষার্থীরা তৃতীয় বর্ষের আগে বৈধ আসন বরাদ্দ পান না। বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের তিনটি বছর বাইরে থাকার ব্যবস্থা করতে অপারগ শিক্ষার্থীরা হলের কথিত অতিথিকক্ষে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। বর্তমানে হলটির আবাসনসংকট চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলার পর্যায়ে পৌঁছেছে। ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ৩৫ জন শিক্ষার্থী এখনো অতিথিকক্ষে অবস্থান করছেন। চতুর্থ বর্ষে উঠেও এখনো তাঁরা বৈধ আসন পাননি। ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের একাংশকে বৈধ আসন দেওয়া হয়েছে। ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের বৈধ আসন দেওয়ার প্রক্রিয়া এখনো প্রশ্নাতীত—এমন অবস্থায় ইতিমধ্যে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষকে এই হলে অ্যালটমেন্ট দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, চারটি শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা কুয়েত মৈত্রী হলের আসন জটিলতায় তাঁদের বৈধ আসনের অধিকার হারাতে বসেছেন।

ছাত্রীরা আরও বলেছেন, কুয়েত মৈত্রী হলের মূল ভবনে পাঁচটি অতিথিকক্ষে থাকেন ১০০ জন শিক্ষার্থী। ১০০ জনের জন্য আছে মাত্র তিনটি শৌচাগার। ঝুঁকিপূর্ণ ও বসবাসের অনুপযোগী হলের সিকদার মনোয়ারা নামের ভবনের তৃতীয় তলার ১৫টি অতিথিকক্ষে বর্তমানে ১১০ জন শিক্ষার্থী অবস্থান করছেন এবং তাঁদের জন্য আছে মাত্র দুটি শৌচাগার। সময় বিশেষে সেখানে প্রতি কক্ষে ৩০ জনের বেশি শিক্ষার্থী অবস্থান করেছেন। একই ভবনের দ্বিতীয় তলায় এক কক্ষের ২৪ জন শিক্ষার্থীর জন্য একটি শৌচাগারের ব্যবস্থা আছে। অথচ হল প্রশাসন থেকে এই ভবনে শিক্ষার্থীদের উঠতে নিষেধ করা হয়।

অন্যদিকে এই ভবনের জন্য একজন আবাসিক শিক্ষকও নিয়োগ দিয়েছে হল প্রশাসন। হলের অতিথিকক্ষে শিক্ষার্থীদের চাপ কমানোর জন্য বর্তমানে মূল ভবনের কক্ষগুলোতে প্রতিটিতে ছয়জনের জায়গায় সাতজনকে আসন বরাদ্দ করা হয়েছে। এটি পড়াশোনা ও থাকাখাওয়ার পরিবেশকে আরও সংকীর্ণ করছে।