জাতীয় কন্যাশিশু দিবস উপলক্ষে রাজধানীর শিশু একাডেমি থেকে একটি র‌্যালি বের করা হয়। ঢাকা, ৩০ সেপ্টেম্বর
জাতীয় কন্যাশিশু দিবস উপলক্ষে রাজধানীর শিশু একাডেমি থেকে একটি র‌্যালি বের করা হয়। ঢাকা, ৩০ সেপ্টেম্বর

জাতীয় কন্যাশিশু দিবস

নিরাপদ বাংলাদেশের প্রত্যাশা কিশোরীদের

বাংলাদেশ হবে নিরাপদ ও সুরক্ষিত। থাকবে বলার স্বাধীনতা, চলার স্বাধীনতা। যেখানে থাকবে না যৌন নিপীড়ন, ধর্ষণ। বন্ধ হবে শিশুশ্রম, বাল্যবিবাহ।

আজ সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) জাতীয় কন্যাশিশু দিবস উদ্‌যাপন অনুষ্ঠানে মে‍য়েশিশুরা কেমন বাংলাদেশ চায় জানতে চাইলে এই প্রত্যাশার কথা জানায় একদল কিশোরী। বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে যৌথভাবে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি ও জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম।

অনুষ্ঠানে জামিলা আক্তার নামের এক কিশোরী বলে, ‘এমন বাংলাদেশ চাই, যাতে নিরাপদে চলাচল করতে পারি। যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণমুক্ত বাংলাদেশ চাই।’ তার সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে শারমীন আক্তার নামের আরেক কিশোরী বলে, ‘ভবিষ্যতের বাংলাদেশ যেন এমন হয় যে আমি স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশ করতে পারি, সুরক্ষিত থাকি এবং অন্যরা যেন আমার প্রতি সম্মান দেখায়।’ আর তৃষা, মিম ও জেরিন—এই তিন কিশোরীর প্রত্যাশা স্বাধীনভাবে চলতে পারা, চলার পথে বাধাবিপত্তি না থাকা, নির্যাতন-বৈষম্য-শিশুশ্রম ও বাল্যবিবাহমুক্ত দেশ।

দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় কীভাবে নিজের বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করেছিলেন, অনুষ্ঠানে সেই বর্ণনা দেন মিম নামের এক কলেজছাত্রী। তিনি বলেন, পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা থেকেই তিনি বাল্যবিবাহে রাজি হননি। নারী মৈত্রী নামে একটি বেসরকারি সংস্থার এক প্রকল্পের সহায়তা নিয়ে তিনি এখন পড়াশোনা করছেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেন, মেয়েরা নির্ভয়ে চলার যে স্বপ্ন দেখছে, তা বাস্তবায়ন করতে হবে বড়দের। এই সরকারের প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য নির্যাতন কমিয়ে আনা। এ লক্ষ্যে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রশাসন, পুলিশ, আইনজীবী ও তরুণ ‘যোদ্ধাদের’ নিয়ে প্রতিটি জেলায় র‌্যাপিড রেসপন্ডস টিম (দ্রুত সাড়াদানকারী দল) গড়ে তুলবে।

যৌথভাবে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি ও জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম। ঢাকা, ৩০ সেপ্টেম্বর

জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে শিশু-কিশোরেরা যে সত্য ও সাহস দেখিয়েছে, তা অতুলনীয় বলে উল্লেখ করেন উপদেষ্টা শারমীন। তিনি শিশুদের প্রতি অধিকার আদায়ের পাশাপাশি নিজের মধ্যে দায়িত্ববোধ তৈরি করারও আহ্বান জানান।

কিশোরীদের প্রত্যাশার কথা শোনার লক্ষ্যে আয়োজিত মুক্ত আলোচনা পর্বটি সঞ্চালনা করেন জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সভাপতি বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, এমন একটি পরিবেশ তৈরি করতে হবে, যাতে শিশুদের স্বপ্ন, প্রত্যাশা ও আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়। বড়দের দায়িত্ব হচ্ছে, শিশুদের গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়টি উপলব্ধি করে তাদের জন্য সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা। তাহলেই ৫ আগস্ট গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশে যে সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে, তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।

আলোচনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কেয়া খান, বাংলাদেশ শিশু একাডেমির মহাপরিচালক তানিয়া খান ও সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর রিফাত বিন সাত্তার। স্বাগত বক্তব্য দেন জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সহসভাপতি শাহীন আক্তার।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমা মোবারেক। সঞ্চালনা করে দুই শিশু সৈয়দ তানহা মাহবুব ও নওরীন নাজিফা।

আলোচনার শুরুতে ‘কন্যাশিুদের চোখে আগামীর বাংলাদেশ’ শিরোনামে একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের প্রয়াত সম্পাদক নাছিমা আক্তার জলির ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করে তাঁর প্রতি সম্মান জানানো হয়।

আলোচনা শেষে জাতীয় কন্যাশিশু দিবস উদ্‌যাপন উপলক্ষে প্রকাশিত পোস্টার ও কন্যাশিশু বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন অতিথিরা। পরে শিশুদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ ছাড়া অনুষ্ঠান শুরুর আগে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি প্রাঙ্গণে শিশুদের অংশগ্রহণে একটি র‌্যালির আয়োজন করা হয়।