অমর একুশের বইমেলার বিদায় বেলা সমাগত। এ বছর ফেব্রুয়ারি মাস ২৯ দিনে হবে বলে আর মাত্র তিন দিন আছে মেলার মেয়াদ। গতকাল সোমবার সরকারি ছুটি থাকায় মেলা শুরু হয়েছিল দুপুর ১২টায়। নতুন বইয়ের প্রকাশনা, লোকসমাগম, বেচাকেনা—সবই বেড়েছিল। ছুটির দিনে ছিল আনন্দের রেশ।
প্রকাশকদের পরিকল্পনায় থাকা অধিকাংশ বই–ই ছাপা শেষে মেলায় এসেছে। এখন যাঁরা মেলায় আসছেন, তাঁরা মূলত বই কিনতেই আসছেন। গতকাল প্রথমার স্টলের সামনে দেখা গেল বেশ বড় এক দল গ্রন্থানুরাগী তাঁদের পছন্দের বই কিনছেন। কথা বলে জানা গেল, ‘ওপেন বুক’ নামে ফেসবুকে তাঁদের একটি গ্রুপ আছে। বই পড়া নিয়েই তাঁদের মধ্যে আলোচনা চলে। গ্রুপের ২৫ জন মেলায় এসেছেন বই কিনতে। তাঁদের কেউ ব্যবসায়ী, কেউ চাকরিজীবী, আবার কেউ গৃহিণী। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তাঁদের বসবাস। যেমন মোহাম্মদপুর থেকে এসেছেন গৃহিণী জাকিয়া সুলতানা, সবিতা ব্যাপারী মতিঝিলে সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তা, মিরপুরের রুমা আহমদ পেশায় পুষ্টিবিদ, শ্যামলীর ইমরান হোসেন ব্যবসায়ী, যাত্রাবাড়ীর মাসুম পারভেজ চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট—এমন ২৫ জন গ্রন্থানুরাগী স্টলে স্টলে ঘুরে ব্যাগ ভরে বই কিনেছেন। তাঁরা বলেন, আগেও তাঁদের কেউ কেউ মেলায় এসেছেন। তবে গতকাল ছুটি, তার ওপর মেলাও শেষ হয়ে যাচ্ছে। তাই সবাই মিলে এসেছেন বই কিনতে। প্রথমা থেকে তাঁরা প্রত্যেকে তাঁদের পছন্দমতো একাধিক বই কিনেছেন।
এবার মেলায় আসা নতুন বই ও স্টলগুলোর সাজসজ্জার জন্য সেরা পুরস্কার ঘোষণা করেছে বাংলা একাডেমি। শৈল্পিক ও গুণমান বিচারে এবার সেরা বইয়ের জন্য তিনটি বই পেয়েছে মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার-২০২৪। এর মধ্যে প্রথম বইটি প্রথমা প্রকাশনের মনজুর আহমদের শিক্ষা নিয়ে গবেষণামূলক বই একুশ শতকে বাংলাদেশ, শিক্ষার রূপান্তর। অন্য দুটি বই হলো ঐতিহ্য প্রকাশনীর মঈন আহমেদের যাত্রাতিহাস: বাংলার যাত্রাশিল্পের আদিঅন্ত এবং জার্নিম্যান বুকস থেকে প্রকাশিত আলমগীর সাত্তারের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কিলো ফ্লাইট।
এ ছাড়া গুণমানসম্মত সর্বাধিক বই প্রকাশের জন্য কথাপ্রকাশ চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার ও গুণমানসম্মত সর্বাধিক শিশুতোষ বই প্রকাশের জন্য ময়ূরপঙ্খি পেয়েছে রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার।
নান্দনিক অঙ্গসজ্জার জন্য অন্যপ্রকাশের প্যাভিলিয়ন, নিমফিয়া পাবলিকেশন ও বেঙ্গল বুকসের স্টল পেয়েছে শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার। একাডেমির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে ২৯ ফেব্রুয়ারি মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হবে।
তথ্যকেন্দ্রের হিসাবে গতকাল মেলায় নতুন বই এসেছে ২৪৬টি। প্রথমা প্রকাশনের প্যাভিলিয়নে গতকাল মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান অনূদিত কোরানশরিফ: সরল বঙ্গানুবাদ, শহীদ আখন্দ অনূদিত ইবনে ইসহাকের সিরাতে রাসুলুল্লাহ (সা.): মহানবীর প্রথম বিশদ জীবনী বই দুটি অনেক বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া বিশ্বজিৎ চৌধুরীর উপন্যাস আশালতা, আজিজুর রহমান খানের আমার সমাজতন্ত্র, আবুল বাসার অনূদিত স্টিফেন হকিং ও লিওনার্ড স্লোডিনোর দ্য গ্র্যান্ড ডিজাইন বইগুলো ভালো চলেছে।
অন্য নতুন বইয়ের মধ্যে শ্রাবণ এনেছে মো. মিনহাজ উদ্দীনের সাক্ষাৎকারভিত্তিক বই সাখাওয়াত আলী খান ও অন্যান্যের একাত্তর ও আফরোজা জামিল কঙ্কার মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক আমার বাবা শহীদ কর্নেল জামিল (বীর উত্তম), অনন্যা এনেছে বিশ্বজিৎ ঘোষের প্রবন্ধ জীবনানন্দ জসীমউদ্দীন এবং অন্যান্য, নৈঋতা ক্যাফে এনেছে তুহিন ওয়াদুদের নদনদী নিয়ে গবেষণামূলক বই নদী সুরক্ষায় দায়িত্বশীলতা, জার্নিম্যান এনেছে দেশভাগের গল্প নামে সাতটি বইয়ের সিরিজ। হিন্দি, উর্দু, সিন্ধি, তামিল, পাঞ্জাবি, ইংরেজি ভাষা থেকে গল্পগুলো অনুবাদ করেছেন জাভেদ ইকবাল ও মোস্তফা আজিজ জয়। আল গাজী এনেছে সেলিনা হোসেনের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বধ্যভূমিতে বসন্ত বাতাস, ক্রিয়েটিভ ঢাকা এনেছে আককাস মাহমুদের আলোকচিত্রবিষয়ক রমনার ছায়া-ছবি, ইত্যাদি এনেছে কবি সোহরাব পাশার নির্বাচিত কবিতা, পাঞ্জেরী এনেছে দন্ত্যস রওশনের নির্বাচিত কিশোর উপন্যাস, জিনিয়াস এনেছে সারওয়ার-উল-ইসলামের কিশোর গল্পসংগ্রহ, পুণ্ড্র এনেছে মুজিব ইরমের কাব্য উত্তরবিরহচরিত।
আজ মেলা শুরু হবে বেলা তিনটায়। চলবে যথানিয়মে রাত নয়টা পর্যন্ত।
বইমেলায় এবার প্রথমা প্রকাশন এনেছে আব্দুল কাইয়ুমের বিজ্ঞানবিষয়ক বই বিজ্ঞানের রাজ্যে কেন কেন এবং কেন। সব সময়ই চোখের সামনে থাকে বলে চারপাশের অনেক কিছুকেই আমরা প্রশ্নাতীতভাবেই মেনে নিই। তবে এগুলোর মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে আশ্চর্য সব প্রশ্ন, যেগুলোর উত্তর আরও বেশি আশ্চর্যজনক। যেমন আমরা কি ভেবেছি সব কটি গ্রহই গোল কেন? কেনই–বা কম্পাসের কাঁটা সব সময় উত্তর বা দক্ষিণমুখী থাকে? কেন পিরামিডের আকার এমন? এই বই এমনই অনেক প্রশ্ন আর সেগুলোর বিজ্ঞানসম্মত উত্তর দিয়ে তৈরি।
লেখক আব্দুল কাইয়ুম বিজ্ঞান ও গণিতের গভীর বিষয়গুলো নিয়ে সাধারণ পাঠকদের জন্য চিত্তাকর্ষকভাবে লেখার জন্য সুপরিচিত। এখন পর্যন্ত মোট ২৮টির অধিক বই প্রকাশিত হয়েছে তাঁর।