থ্রি টু ওয়ান…গো! বলার সঙ্গে সঙ্গে ছুটছেন একেকজন সাইক্লিস্ট। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে একেকটা সাইকেলে যেন আসুরিক শক্তি ভর করছে। শীতের সকালের মিষ্টি রোদ, ঠান্ডা, কুয়াশা ভেদ করে তিরবেগে ছুটছে একেকজন। সবার আগে ফিনিশ লাইন ছুঁতে হবে।
কাকডাকা ভোরেই রাজধানীর হাতিরঝিলের পুলিশ প্লাজার সামনের সড়কদ্বীপ, রাস্তার দুই পাশে অসংখ্য মানুষ। কয়েক শ সাইক্লিস্ট, স্বেচ্ছাসেবক, দর্শকের ভিড়ে জায়গাটা গমগম করছে। সাইক্লিস্টদের ছোট ছোট দল ছুটে যাচ্ছে, আর রাস্তার দুপাশ থেকে দর্শকেরা করতালি দিয়ে উৎসাহ দিচ্ছেন। একেকটা সাইকেল ফিনিশ লাইন ছোঁয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাশে রাখা স্ক্রিনে ভেসে উঠছে কে কত মিনিট, কত সেকেন্ডে চালানো শেষ করলেন।
প্রতিযোগিতায় ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, সাতক্ষীরা থেকে সাইক্লিস্টরা এসেছেন। প্রতিযোগী, স্বেচ্ছাসেবী সবাই বেশ খুশি। কারণ একটাই, বহুদিন পর ঢাকায় সাইক্লিংয়ের কোনো আসরের আয়োজন হলো। যেখানে প্রচুর লোকসমাগম হয়েছে। এবার ‘ঢাকা ম্যাক্স-২০২৩’ প্রতিযোগিতার আয়োজক রেস বাংলাদেশ। প্রতিযোগিতায় সহযোগিতা করেছে বাংলাদেশ সাইক্লিং ফেডারেশন, বিডিসাইক্লিস্টস ও প্রথম আলো।
‘এমন আয়োজন আরও যত বেশি হবে ততই ভালো’, বললেন আয়রনম্যান শামসুজ্জামান আরাফাত। জার্সি, শর্টস, হেলমেট পরে সাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। খানিক আগেই তাঁর প্রতিযোগিতা শেষ হয়েছে। দৌড়ের মানুষ আরাফাত সুযোগ পেলে সাইকেল নিয়েও প্রতিযোগিতায় নামেন। আজ রোডবাইক নিয়ে ট্র্যাকে নেমে সেই জাদু দেখালেন আয়রনম্যান। ২৩ মিনিট ৩৬ সেকেন্ড সময় নিয়ে একক টাইম ট্রায়ালে প্রথম স্থান অর্জন করেছেন।
প্রতিযোগিতার শুরুটা হয়েছিল সকাল ৬টায় রোডবাইকে দলীয় টাইম ট্রায়াল দিয়ে। চারজনের একেকটা দল সাইকেল নিয়ে ছোটে। পুরো হাতিরঝিল দুবার চক্কর দিলে ১৫ কিলোমিটার হয়। টিমবিডিসি নিউক্লিয়ার ২৩ মিনিট ১৮ সেকেন্ড সময় নিয়ে টাইম ট্রায়ালের এই পর্বে প্রথম হয়েছে।
তারপর ছিল রোডবাইক নিয়ে একক টাইম ট্রায়াল। এই পর্বে আরাফাত প্রথম স্থান, ২৪ মিনিট ২৮ সেকেন্ড ও ২৪ মিনিট ৪২ সেকেন্ড সময় নিয়ে দ্বিতীয় ও তৃতীয় হন যথাক্রমে শাহাদৎ হোসেন ও ইমতিয়াজ ইলাহী।
মাউন্টেন বাইক (এমটিবি) নিয়ে নারীদের একক টাইম ট্রায়ালে ১৬ মিনিট ১২ সেকেন্ড সময় নিয়ে প্রথম হন মৌসুমি আক্তার। জুনিয়র এমটিবি একক টাইম ট্রায়ালে প্রথম হন খাজা মইনুদ্দিন। তিনি সময় নিয়েছেন ১২ মিনিট ৫১ সেকেন্ড। এ দুটি ইভেন্টে প্রতিযোগীরা হাতিরঝিল এক চক্কর দেন। তাই সময় লেগেছে কম।
আজকের প্রতিযোগিতার সর্বশেষ ও সবচেয়ে আকর্ষণীয় ইভেন্ট ছিল মাউন্টেন বাইক ম্যাস স্টার্ট (পুরুষ)। প্রায় এক শ প্রতিযোগী অংশ নেন এতে। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইও ছিল এই পর্বে। কয়েকজন অবশ্য দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। ২৫ মিনিট ৩৫ সেকেন্ড সময় নিয়ে এই পর্বে প্রথম হন রয়্যাল বেঙ্গল রেসারসের (আরবিআর) আদনান রহমান। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসিতে পড়েন আদনান। তাঁর মতে, আরেকটু ভালো ট্র্যাক পেলে আরও ভালো করতেন। মাউন্টেন বাইক বা এমটিবি চালানোর উপযোগী ট্র্যাকের বড্ড অভাব আমাদের দেশে। গত কয়েক বছরে দেশের বাইরেও নানা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে ভালো করেছেন তরুণ এই সাইক্লিস্ট। আরও সহায়তা পেলে দেশের ভেতরেই ভালো সাইক্লিস্ট উঠে আসবেন।
এবারের আয়োজন নিয়ে বেশির ভাগ সাইক্লিস্ট সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তবে যে রাস্তা ধরে বা ট্র্যাকে তাঁদের সাইকেল চালাতে হয়েছে, সেটাকে বিপজ্জনক মনে করছেন তাঁরা। আরেকটু ভালো জায়গা-রাস্তা পেলে মন্দ হয় না। সে ক্ষেত্রে অনেকে ৩০০ ফুটের সার্ভিস লেনটিকে সাইক্লিস্টদের জন্য ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ জানালেন। বিশেষ করে সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে রাস্তাটি ফাঁকা পেলে ঢাকার সাইক্লিস্টরা উপকৃত হবেন, বললেন টিমিবিডিসি নিউক্লিয়ারের প্রতিযোগী রাকিবুল ইসলাম।
এবারের প্রতিযোগিতা নিয়ে তেমন একটা ব্র্যান্ডিং না হওয়ায় আফসোস আছে প্রতিযোগিতার পরিচালক (রেস ডিরেক্টর) সাজনান মোহাম্মদের। তবে প্রচুর সাইক্লিস্টের অংশগ্রহণ তাঁকে অনুপ্রাণিত করেছে। ভবিষ্যতে আরও বড়সড় আয়োজন করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন এই তরুণ।