রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় এক রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীকে পিটিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শাহনেওয়াজ ছাত্রাবাসের একদল শিক্ষার্থী। ছাত্রদের দাবি, রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়া ছাত্রাবাসের এক ছাত্রের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও তাঁর শার্টের কলার টেনে ছিঁড়ে ফেলায় ওই ব্যবসায়ীকে মারধর করা হয়। আর ব্যবসায়ীর দাবি, ছাত্রাবাসের এক শিক্ষার্থীর কাছে নগদ টাকা ছিল না। তিনি ওই ছাত্রকে বিকাশ থেকে সেন্ড মানি করতে বলেন। এরপর ওই শিক্ষার্থী বিল পরিশোধ করে হলে গিয়ে অন্যদের নিয়ে এসে তাঁকে ধরে ছাত্রবাসে নিয়ে যান এবং মারধর করেন।
গতকাল বুধবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে শাহনেওয়াজ ছাত্রাবাসে এ ঘটনা ঘটে। নিউমার্কেটের কাঁচা বাজারসংলগ্ন এই ছাত্রাবাস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হলের বর্ধিত ভবন হিসেবে পরিচিত। চারুকলা অনুষদের ছাত্ররা সেখানে থাকেন। আর ছাত্রাবাসের পাশের গলি যা আইয়ুব আলী কলোনি নামে পরিচিত, সেখানে নেয়ামতউল্লাহ গত মাস থেকে রাইস কিং নামে একটি রেস্তোরাঁ চালাচ্ছেন।
গতকালের ঘটনার বিষয়ে শাহনেওয়াজ ছাত্রাবাসের আশপাশের ভ্রাম্যমাণ দোকানি ও প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ব্যবসায়ী নেয়ামতউল্লাহ কিছুটা বদমেজাজি। তিনি প্রায়ই আইয়ুব আলী কলোনি ও শাহনেওয়াজ ছাত্রাবাসের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। গতকাল শাহনেওয়াজের এক ছাত্র তাঁর রেস্তোরাঁয় খেতে গেলে খাবারের বিল দেওয়া নিয়ে তাঁর সঙ্গে নেয়ামতউল্লাহর কথা-কাটাকাটি হয়।
পরে শাহনেওয়াজের ছাত্ররা একজোট হয়ে নেয়ামতউল্লাহকে তাঁর দোকান থেকে ধরে ছাত্রাবাসের দিকে নিয়ে যান। এরপর নেয়ামতউল্লাহর এক আত্মীয় ৯৯৯ নম্বরে ফোন করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের সহায়তায় আহত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
মারধরের শিকার ব্যবসায়ী নেয়ামতউল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘শাহনেওয়াজ ছাত্রাবাসের অনেক ছাত্র বাকি খেয়ে চলে যান। টাকা চাইলে বিকাশ থেকে তুলে দেবেন বলে আর দেন না। গতকাল এক ছাত্র আমার রেস্তোরাঁয়া খাওয়ার পর বিকাশ থেকে টাকা তুলে এনে দেবেন বললে আমি বিকাশে সেন্ড মানি করতে বলি। বিল হিসেবে ৯০ টাকা সেন্ড মানি করে তিনি চলে যান। কিছুক্ষণ পর ছাত্ররা এসে আমাকে হলের ভেতর নিয়ে যান। এর আগে তাঁরা দোকানের চেয়ার–টেবিল ভাঙচুর করেন এবং দোকানের সিসিটিভি ক্যামেরা ভেঙে ফেলেন। আমাকে হলে নিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে লাঠি ও হকিস্টিক দিয়ে মারধর করা হয়। পরে একটি কক্ষে নিয়ে ২০-২৫ জন মিলে মারধর করেন। আমি তিনবার অজ্ঞান হয়ে যাই।’
ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিয়ে নেয়ামতউল্লাহ এখন বাসায়। তিনি এ ঘটনায় মামলা করবেন বলে জানান। পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেন।
বিভিন্ন পক্ষের ভাষ্যে গতকালের এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের মধ্যে শাহনেওয়াজ ছাত্রাবাসের ছাত্র তাওহীদুল ইসলামের নাম উঠে এসেছে। তিনি চারুকলা অনুষদের গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তাওহীদুল প্রথম আলোকে বলেন, গতকালের ঘটনায় পুরো ছাত্রাবাসের শিক্ষার্থীরা জড়িত। তাই তিনি আলাদা করে কারও নাম বলতে চান না। তাঁর দাবি, ব্যবসায়ী নেয়ামতউল্লাহ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। বুধবার খেতে গেলে বিল নিয়ে কথাবার্তার জেরে তাঁর কলার টেনে ছিঁড়ে ফেলেন নেয়ামতউল্লাহ। তবে নেয়ামতউল্লাহকে মারধরের অভিযোগ সরাসরি স্বীকার করেননি তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মো. মাকসুদুর রহমান আজ বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘শাহনেওয়াজ ভবনে বুধবারের ঘটনায় আমরা এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’