এসব বিদ্যালয়ের ফুটপাতের দোকান সরিয়ে টবে লাগানো ফুল ও ফলের গাছ রাখা হয়েছে।
দুই সপ্তাহ আগেও বিদ্যালয়টির মূল ফটকের দুই পাশে ছিল সবজি ও খাবারের দোকান। সব সময় ভিড় লেগেই থাকত। ভিড় ঠেলে বিদ্যালয়ের ফটক পর্যন্ত যেতে রীতিমতো হিমশিম খেত শিক্ষার্থীরা। সেসব দোকান এখন আর নেই। সেখানে টবে লাগানো ফুল ও ফলের গাছ রাখা হয়েছে। স্বচ্ছন্দে আসা-যাওয়া করছে শিক্ষার্থীরা। পুরান ঢাকার টিকাটুলীর কামরুন্নেসা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সামনের চিত্র এটি।
শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকেরা জানান, স্কুলের সামনে বাজার বসলে সারাক্ষণ যানজট লেগে থাকে। দুর্ঘটনাও ঘটে। ছাত্রীরা উত্ত্যক্তের শিকারও হয়। দোকান সরিয়ে সেখানে টবে লাগানো ফুল ও ফলের গাছ রাখায় স্কুলের সামনের পুরো চিত্রই বদলে গেছে।
ঢাকার ওয়ারী, কাপ্তানবাজার, যাত্রাবাড়ী ও দনিয়া এলাকার পাঁচটি বিদ্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, বিদ্যালয়গুলোর সামনের ফুটপাতে আগে দোকানপাট ছিল। সেসব দোকানপাট সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আবার যাতে দোকান না বসে, সে জন্য টবে লাগানো ফুল ও ফলের গাছ রেখেছে পুলিশ।
গত দুই সপ্তাহে প্রায় ১৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনের ফুটপাত থেকে দোকান সরিয়ে দেওয়ার কথা জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ওয়ারী বিভাগ। বলছে, পর্যায়ক্রমে অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনের ফুটপাত থেকেও দোকানপাট সরিয়ে দেওয়া হবে।
পুরান ঢাকার টিকাটুলী এলাকার কামরুন্নেসা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনের দুই পাশে সারি সারি করে টবে লাগানো ফুল ও ফলের গাছ রাখা। সেখানে সুতা টানিয়ে সীমানা করে দেওয়া হয়েছে।
স্কুলের সামনে যদি তরকারি আর মাছের দোকান বসে, তাহলে দেখতে কেমন লাগে বলেন।বিমল ভৌমিক, অভিভাবক
বিদ্যালয়ের ভেতরে গিয়ে দেখা গেল শীতের পিঠা উৎসব চলছে। পিঠা খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে সহপাঠীরা মিলে ছবি তুলছে, আড্ডা দিচ্ছে। কথা হয় দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাহেলা আমিরের সঙ্গে। সে প্রথম আলোকে বলে, ‘আগে স্কুলের সামনে সারাক্ষণ যানজট লেগে থাকত। মানুষের ভিড়ের কারণে স্কুলে আসা-যাওয়ার সময় গায়ে গায়ে ধাক্কা লাগত। এখন পরিবেশ অনেক সুন্দর হয়েছে।’
সাহেলা যখন কথা বলছিল, তখন পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন বিমল ভৌমিক নামের একজন অভিভাবক। তিনি নিজ থেকেই বলতে শুরু করেন, ‘স্কুলের সামনে যদি তরকারি আর মাছের দোকান বসে, তাহলে দেখতে কেমন লাগে বলেন।’
কামরুন্নেসা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের বিপরীত পাশে শহীদ নবী মডেল সরকারি প্রাথমিক ও উচ্চবিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়ের প্রাথমিক শাখায় পড়াশোনা করে চার শতাধিক শিক্ষার্থী। বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক অর্চনা রানী রায় বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, এই উদ্যোগের কারণে শুধু বিদ্যালয়ের সামনের পরিবেশই সুন্দর হয়নি, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাও বেড়েছে।
নিঃসন্দেহে এটা পুলিশের ভালো উদ্যোগ। দোকান সরিয়ে দেওয়ার পরও অনেকে আবার দোকান বসানোর পাঁয়তারা করছেন। পুলিশ সদস্যরা নিয়মিত নজরদারি করলে আর দোকান বসতে পারবে না।নবাবপুর সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেবেকা সুলতানা
কাপ্তানবাজারের ভেতরের নবাবপুর সরকারি উচ্চবিদ্যালয়টি পুরান ঢাকার অন্যতম ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান। এই বিদ্যালয়ে দুই হাজারের মতো শিক্ষার্থী রয়েছে। বিদ্যালয়ের মূল ফটকের পাশের দেয়াল ঘেঁষে দীর্ঘদিন দোকানপাট ছিল।
অনেকবার উদ্যোগ নিয়েও দোকান সরানো যায়নি। বিরক্ত হয়ে প্রায় পাঁচ শ অভিভাবক মিলে দোকানপাট সরিয়ে দিতে সংশ্লিষ্টদের কাছে লিখিত আবেদনও করেছিলেন। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। অবশেষে পুলিশের উদ্যোগে এ সমস্যার সমাধান হয়েছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেবেকা সুলতানা বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাজার ও দোকানপাটের কারণে অনেক অভিভাবক আমাদের স্কুল থেকে তাঁদের সন্তানদের সরিয়ে নিয়ে গেছেন। রিকশায় এসে ফটকে নামাও যেত না।’
তবে রেবেকা সুলতানা বলেন, ‘নিঃসন্দেহে এটা পুলিশের ভালো উদ্যোগ। দোকান সরিয়ে দেওয়ার পরও অনেকে আবার দোকান বসানোর পাঁয়তারা করছেন। পুলিশ সদস্যরা নিয়মিত নজরদারি করলে আর দোকান বসতে পারবে না।’
এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে আর কখনোই দোকান বসতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার ইকবাল হোসাইন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পর্যায়ক্রমে অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে থেকেও দোকানপাট সরিয়ে দেওয়া হবে। কেউ দোকান বসানোর চেষ্টা করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।