যানজট কমাতেই ঢাকা উড়ালসড়ক

বিমানবন্দর থেকে সাভারের ইপিজেড পর্যন্ত নির্মাণাধীন আরেকটি উড়ালসড়কের কাজ শেষ হলে এ প্রকল্পের পুরোপুরি সুফল মিলবে।

ঢাকা উড়ালসড়ক থেকে ফার্মগেট এলাকায় নামার পথ (র‌্যাম্প)। কাওলা থেকে আসা যানবাহন এ পথে নামবে। গতকাল দুপুরে ফার্মগেটে
ছবি: প্রথম আলো

যানজটের নগরী ঢাকার ওপর যানবাহনের চাপ কমাতেই দ্রুতগতির ঢাকা উড়ালসড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। মূল লক্ষ্য হচ্ছে উড়ালপথে ঢাকার আশপাশের বড় মহাসড়কগুলোর সঙ্গে একে যুক্ত করা। তবে এর জন্য অপেক্ষা করতে হবে পুরো উড়ালসড়ক চালু পর্যন্ত। এ ছাড়া বিমানবন্দর থেকে সাভারের ইপিজেড পর্যন্ত নির্মাণাধীন আরেকটি উড়ালসড়কের কাজ শেষ হলে এ প্রকল্পের পুরোপুরি সুফল মিলবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

আজ শনিবার আংশিক চালু হতে যাওয়া ঢাকা উড়ালসড়কটির শুরু হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে কাওলা থেকে। এরপর সেটি রেললাইন ঘেঁষে বনানী, তেজগাঁও, মগবাজার, কমলাপুর, মানিকনগর হয়ে যাত্রাবাড়ীর কাছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালীতে যাবে। তেজগাঁও থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত অংশ আগামী বছরের জুনে চালুর লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার।

বিমানবন্দর থেকে সাভার ইপিজেড পর্যন্ত প্রায় ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ আরেকটি উড়ালসড়ক নির্মাণ করছে সেতু বিভাগ। সাড়ে ১৭ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পে অর্থায়ন করছে চীন। এটির নাম ঢাকা-আশুলিয়া উড়ালসড়ক। ২০২৬ সালে এটি চালু হওয়ার কথা রয়েছে। গুলিস্তান থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত মেয়র হানিফ উড়ালসড়ক চালু হয়েছে আগেই। আজ চালু হতে যাওয়া ঢাকা উড়ালসড়কটি পুরোপুরি শেষ হলে তা হানিফ উড়ালসড়কে গিয়ে মিলবে।

প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ঢাকা উড়ালসড়ক পুরোপুরি চালু হলে ঢাকার যানজট এড়িয়ে দ্রুতগতিতে ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যেতে পারবে। আর আশুলিয়া পথের উড়ালসড়ক চালু হলে ইপিজেড ও উত্তরবঙ্গের যানবাহন ঢাকার যানজট এড়িয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পথে চলতে পারবে।

এতে চট্টগ্রাম, সিলেটসহ পূর্বাঞ্চল ও পদ্মা সেতু হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যানবাহন ঢাকায় প্রবেশ না করে সরাসরি উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে প্রবেশ করতে পারবে। একইভাবে উত্তরাঞ্চল থেকে আসা যানবাহনগুলো ঢাকাকে বাইপাস করে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সরাসরি যাতায়াত করতে পারবে। এ ছাড়া ঢাকার ভেতরে কারসহ ছোট ব্যক্তিগত যানবাহন সহজে যাতায়াত করতে পারবে। এতে নিচের সড়কে চাপ কমবে।

এই উড়ালসড়কের নির্মাণকাজ তিন পর্বে ভাগ করা হয়েছিল। কাওলা থেকে বনানী পর্যন্ত প্রথম পর্ব। এখন পর্যন্ত এই পর্বের ভৌত কাজ ৯৮ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। দ্বিতীয় পর্বের সীমানা বনানী থেকে মগবাজার। এই অংশের কাজ এগিয়েছে ৫৮ শতাংশ। এই অংশে মগবাজারের কাছে হাতিরঝিলের ওপর দিয়ে সোনারগাঁও সড়ক ধরে একটি ওঠানামার পথ চলে যাবে পলাশী মোড় পর্যন্ত। আর শেষ পর্বে রয়েছে মগবাজার থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত। এই অংশের কাজ মাত্র ৬ শতাংশ। প্রকল্পের আওতায় কুড়িলে একটি বহুতল কেন্দ্রীয় কার্যালয় নির্মাণ করা হচ্ছে। এর কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। সব মিলিয়ে প্রকল্পের কাজ ৬৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। সর্বশেষ সংশোধনী অনুসারে আগামী বছরের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে।

প্রথম পর্বের অংশ কাওলা-বনানী পর্যন্ত উড়ালসড়কের দৈর্ঘ্য ৭ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। দ্বিতীয় পর্বের বনানী রেলস্টেশন থেকে মগবাজার রেলক্রসিং পর্যন্ত দূরত্ব ৫ দশমিক ৮৫ কিলোমিটার। তৃতীয় ধাপ মগবাজার রেলক্রসিং থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত ৬ দশমিক ৪৩ কিলোমিটার।

প্রকল্পের অগ্রগতিসংক্রান্ত প্রতিবেদন অনুসারে, মগবাজার থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত প্রায় দেড় হাজার পাইল, সাড়ে ৩০০ পাইল ক্যাপ, সমপরিমাণ কলাম সম্পন্ন হয়েছে। এ ছাড়া ৩২৫টি ক্রস-বিম, তিন হাজারের বেশি গার্ডার নির্মাণ করা হয়েছে।

এ ছাড়া উড়ালসড়ক প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ঢাকার আশুলিয়ায় ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। সেখানে ক্ষতিগ্রস্তদের ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়া হবে।