পুরান ঢাকার সিদ্দিকবাজারের সাততলা ভবনটির অনুমোদন ছিল পাঁচতলা পর্যন্ত। নিচতলার সামনের দিকের তিনটি দোকান ছাড়া ভবনের বাকি অংশ আবাসিক ব্যবহারের জন্য রাজউক অনুমোদন দিয়েছিল। কিন্তু ভবনটির বেজমেন্ট থেকে তিনতলা পর্যন্ত বাণিজ্যিক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল। চার থেকে সাততলা ছিল আবাসিক। পরে ১০ তলা করার জন্য আরেকটি নকশা তৈরি করেছিলেন মালিকেরা, কিন্তু সেটা শেষ পর্যন্ত দাখিল করেননি।
বিস্ফোরণের পর ভবনটির মালিকদের কাছ থেকে পাওয়া দুটি নকশার অনুলিপি পর্যালোচনা এবং গ্রেপ্তার হওয়া দুই মালিককে জিজ্ঞাসাবাদ করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) এসব তথ্য পেয়েছে।
গত মঙ্গলবার বিকেলে সিদ্দিকবাজারে ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর ঘটনাটি ডিবি ছায়া তদন্ত করছে। ডিবি সূত্র জানায়, তারা ১৯৫৯ সালের একটি নকশা পেয়েছে, তাতে দোতলা ভবনের অনুমোদন ছিল। সেই অনুমোদন নিয়েছিলেন রেজিয়া রহমান (গ্রেপ্তার থাকা বর্তমান ভবনমালিকদের দাদি)। পরে ১৯৮৩ সালে রেজিয়া রহমানের ছেলে রেজাউর রহমান আরেকটি নকশা অনুমোদন নেন। তাতে পাঁচতলার অনুমতি রয়েছে। পরে ১০ তলা করার জন্য আরেকটি নকশা তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু সেটা রাজউকে জমা দেওয়া হয়নি। এরই মধ্যে ভবনটি সাততলা করা হয়। এ ছাড়া নকশা অনুযায়ী ভবনের বেজমেন্ট গাড়ি পার্কিং হিসেবে ব্যবহার করার কথা। কিন্তু সেখানে কখনো খাবারের দোকান আবার কখনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দেওয়া হয়।
ডিবির লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ঘটনাটি ছায়া তদন্ত করছি। ঘটনায় কাদের অবহেলা রয়েছে, সেটা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’
তবে সংশ্লিষ্ট এলাকার দায়িত্বে থাকা রাজউকের অথরাইজড অফিসার রংগন মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, নকশার একটি অনুলিপি তাঁরা পেয়েছেন, তাতে ভবনটিকে বাণিজ্যিক হিসেবে ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আরও বিস্তারিত খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।
ভবনটির জমির দলিল অনুযায়ী, ঢাকার কোতোয়ালি থানার লুৎফর রহমান লেনের আবদুল লতিফের মেয়ে রেজিয়া রহমান ১৯৫৫ সালে এই জমিটি আগা মসিহ লেনের সাহাবুদ্দিন মিয়ার কাছ থেকে কিনেছেন। রেজিয়ার রহমানের মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে রেজাউর রহমান এর মালিকানা পান। তিনি ১৯৮৩ সালে পাঁচতলা ভবন নির্মাণের অনুমতি নিয়েছিলেন। তিনিই ভবনটি নির্মাণ করেন।
রেজাউর রহমানের মৃত্যুর পর তাঁর সন্তানেরা ভবনটির মালিকানা পান। রেজাউর রহমানের তিন ছেলের মধ্যে একজন (মশিউর রহমান) বিদেশে থাকেন। বাকি ছেলে ওয়াহিদুর রহমান ও মতিউর রহমানকে এবং ওই ভবনের একজন দোকানমালিক আবদুল মোতালিব হোসেনকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁরা এখন পুলিশের রিমান্ডে রয়েছেন।
এদিকে ওই ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনায় অবহেলার অভিযোগে পুলিশ বাদী হয়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে বংশাল থানায় একটি মামলা করে। তাতে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মো. জাফর হোসেন গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, অবহেলার অভিযোগে ৩০৪(ক) ধারায় মামলাটি হয়েছে। অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ বিস্ফোরণে ভবনের মালিক, গ্যাসসংযোগ, বাড়ির নকশাসহ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের কার কী দায় রয়েছে, সেটা তদন্তে উঠে আসবে।
ফৌজদারি কার্যবিধির ৩০৪(ক) ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি বেপরোয়াভাবে বা অবহেলার কারণে কারও মৃত্যু ঘটান এবং তা যদি শাস্তিযোগ্য নরহত্যা না হয়, তবে সে ব্যক্তি পাঁচ বছর পর্যন্ত সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ড অথবা অর্থদণ্ড অথবা উভয়বিধ দণ্ডেই দণ্ডিত হবেন।