ব্যাংক ও আর্থিক কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্ত পি কে হালদার হিসেবে পরিচিত প্রশান্ত কুমার হালদারের অন্যতম সহযোগীর দুই মেয়ে গতকাল বুধবার রাতে মুক্তি পেয়েছেন।
দুই মেয়ের পরিবারের চার সদস্যের পাসপোর্ট ও দুই সদস্যের জাতীয় পরিচয়পত্র জমা দেওয়ার পর তাঁদের র্যাব হেফাজত থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।
বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের একক হাইকোর্ট বেঞ্চে (কোম্পানি কোর্ট) আজ বৃহস্পতিবার দুই মেয়ের আইনজীবী মো. আবু তালেব এই তথ্য জানান। পি কে হালদারের সহযোগী পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের (পিএলএফএসএল) সাবেক পরিচালক মো. খবির উদ্দিনের দুই মেয়ে হলেন, শারমিন আহমেদ ও তানিয়া আহমেদ।
এর আগে গত ৭ মার্চ একই বেঞ্চ আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিংয়ের ঋণখেলাপি ৬৪ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে তলব করেন। হাজির না হলে তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির কথাও সেদিন বলেন আদালত। ওই তালিকায় শারমিন ও তানিয়া ছিলেন। তাঁরাসহ ৩০ ব্যক্তি হাজির না হওয়ায় গত ১৯ এপ্রিল আদালত তাঁদের গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেন।
এরপর গতকাল ভোরে রাজধানীর ধানমন্ডি ও শ্যামলী থেকে মো. খবির উদ্দিনের দুই মেয়ে শারমিন আহমেদ ও তানিয়া আহমেদ গ্রেপ্তার করে র্যাব-৩। দুপুরে তাঁদের হাইকোর্টের কোম্পানি বেঞ্চে হাজির করা হয়। আদালত তাঁদের শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিতে নির্দেশ দেন। তাঁদের পাসপোর্টও আদালতে জমা দেওয়া হয়। পিএলএফএসএল খবির উদ্দিনসহ তাঁর পরিবারের ১১ সদস্যের কাছে ১৯৬ কোটি টাকা পাবে বলে দাবি করছে। এই ঋণের ৫ শতাংশ অর্থ ৩০ দিনের মধ্যে জমা দিয়ে আদালতে প্রতিবেদন দিতে দেওয়া বলা হয়। এরপর তাঁদের র্যাব হেফাজতে নিয়ে যাওয়া হয়।
শারমিন ও তানিয়ার আইনজীবী মো. আবু তালেব আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘১১ সদস্যের মধ্যে দুই বোনসহ পরিবারের ছয় সদস্যের পাসপোর্ট ও দুই সদস্যের জাতীয় পরিচয়পত্র র্যাবের কাছে জমা দেওয়ার পর গতকাল রাতে দুই বোনকে র্যাব হেফাজত থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। অপর তিনজন সরাসরি খবির উদ্দিনের পরিবারের সদস্য নন, দূর সম্পর্কের আত্মীয় বলে আদালতকে জানানো হয়। আদালত এ বিষয়ে আগামী সোমবার লিখিতভাবে জানাতে বলেছেন।’
এর আগে গতকাল র্যাবের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পি কে হালদারের অন্যতম সহযোগী খবির উদ্দিন পিএলএফএসএলের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত পরিচালক ছিলেন। এ সময় তিনি প্রায় ২০০ কোটি টাকা পরিবারের বিভিন্ন সদস্যের নামে-বেনামে ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেন। পরে ২০১০ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে এ পদ থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার দুই নারী বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে আত্মসাতের উদ্দেশ্যে ঋণ গ্রহণের সঙ্গে তাঁদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য দিয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা বলেন, বাবা খবির উদ্দিনের মাধ্যমে ঋণ নিয়েছেন তাঁরা। প্রায় দেড় যুগ ধরে কানাডায় আছেন শারমিন ও তানিয়া।
র্যাব জানায়, তাঁদের মধ্য শারমিন ৩১ কোটি ও তানিয়া ৩৩ কোটি টাকা পিপলস লিজিংয়ের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছেন। তাঁরা ২৮ জুলাই বাংলাদেশে আসেন এবং গতকাল কানাডার উদ্দেশ্যে দেশত্যাগের পরিকল্পনা করছিলেন।
গত মে মাসে পি কে হালদার ও তাঁর পাঁচ সহযোগীকে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে গ্রেপ্তার করে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)।