বিএনপির মহাসমাবেশ

বিরোধীদের সব কর্মসূচি হবে ঢাকাকেন্দ্রিক

আজ শুক্রবার বেলা দুইটায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এ মহাসমাবেশ হবে।

ঢাকায় বিএনপির সমাবেশ
প্রতীকী ছবি

অবশেষে রাজধানীর নয়াপল্টনেই আজ শুক্রবার মহাসমাবেশ করতে যাচ্ছে বিএনপি। সমাবেশস্থলের অনুমতি নিয়ে দুই দিন ধরে চলা উত্তেজনা, অনেক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার, বাসাবাড়ি ও আবাসিক হোটেলে তল্লাশি অভিযানসহ নানা কারণে ‘এক দফার’ আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ের এই মহাসমাবেশ দলের জন্য ‘ভাবমূর্তির’ বিষয় হয়ে উঠেছে বলে মনে করে বিএনপি।

বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, ঢাকার এই মহাসমাবেশ থেকে সরকার হটানোর এক দফার দাবিতে আন্দোলনের মোড় ঘোরানো কর্মসূচির ঘোষণা আসবে। তবে সে কর্মসূচির ধরন কী হবে, তা নিয়ে নানা ভাষ্য পাওয়া গেলেও নির্দিষ্ট করে জানা যায়নি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ধাপে ধাপে অনেকটা ধারাবাহিক কর্মসূচি দেওয়া হবে। তবে এখন থেকে সব কর্মসূচি হবে মূলত ঢাকাকেন্দ্রিক। এ পর্যায়ে এসে নতুন করে ঢাকার বাইরে মাঠপর্যায়ে বড় কর্মসূচির সম্ভাবনা কম।

শেখ হাসিনার পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচনসহ এক দফা দাবিতে বিএনপি এই মহাসমাবেশ করছে। আজ বেলা দুইটায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এ মহাসমাবেশ হবে। ২৩টি শর্তে বিএনপিকে মহাসমাবেশের অনুমতি দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।

একই দিনে ৬–দলীয় জোট গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২-দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি, গণ অধিকার পরিষদের দুই অংশ, লেবার পার্টি ও গণফোরামসহ ৩৬টি দলও পৃথক সমাবেশ করবে। এর বাইরে এবি পার্টিও বিজয়-৭১ চত্বরে প্রতিবাদী অবস্থান ও বিক্ষোভ করবে।

এক বছর ধরে সারা দেশে পর্যায়ক্রমে বিক্ষোভ সমাবেশ, বিভাগীয় গণসমাবেশ, পদযাত্রা, তারুণ্যের সমাবেশসহ নানা কর্মসূচির পর ঢাকায় মহাসমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি। এতে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মহাসমাবেশের পর এক দফায় সর্বশক্তি দিয়ে এগোবে যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত সরকারবিরোধী সব দল ও জোট।

নয়াপল্টনে জড়ো হতে বাধা

আগের দিনের মতো গতকাল বৃহস্পতিবারও সকাল থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাঁদের জটলা বাঁধতে দেয়নি। সকাল থেকে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন দেখা যায়। সকাল ১০টা থেকে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা নেতা-কর্মীরা নয়াপল্টনে স্লোগান দিতে শুরু করেন। তখন পুলিশ তাঁদের সরিয়ে দেয়। সকাল থেকে একাধিক সাঁজোয়া যান, জলকামান ও প্রিজন ভ্যানও দাঁড়ানো ছিল বিএনপির কার্যালয়ের পাশে। বিকেলের দিকে সাঁজোয়া যান, জলকামানসহ পুলিশের ছয়টি গাড়ি নয়াপল্টন, বিজয়নগর, কালভার্ট রোড, ফকিরাপুল এলাকায় সাইরেন বাজিয়ে কয়েকবার চক্কর দেয়। এ সময় লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়।

এ অবস্থায় বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান, দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম ও কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী দুই দফায় নেতা-কর্মীদের রাস্তায় জটলা না করে চলে যেতে বলেন। মহাসমাবেশ যেহেতু শুক্রবার, তাঁদের সেদিন দুপুরে আসতে বলেন।

পুলিশের পক্ষ থেকে বারবার জানিয়ে দেওয়া হয়, বৃহস্পতিবার কর্মদিবসে সড়কে কোনো জটলা সৃষ্টি করা যাবে না। বিএনপির কার্যালয়ের অফিস ও নিরাপত্তাকর্মীরাও কার্যালয়ের সামনে নেতা-কর্মীদের ভিড় না করতে অনুরোধ করেন।

নোয়াখালী থেকে আসা মহিলা দলের কর্মী শারমিন সুলতানা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা তো কোনো যানবাহনে বাধা দিচ্ছি না। ফুটপাতে দাঁড়িয়ে একটু স্লোগান দিচ্ছি…আমার নেত্রী দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করছি…এতেই পুলিশ খেপে উঠেছে। পুলিশের মতো প্রতিষ্ঠানের এমন আচরণ করা ঠিক হচ্ছে?’

২৩ শর্তে মহাসমাবেশের অনুমতি দিয়ে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক সমাবেশে রাষ্ট্রদ্রোহী কোনো বক্তব্য দেওয়া যাবে না বলে সতর্ক করেন। এ ছাড়া সমাবেশে লাঠি ও ব্যাগ বহন না করারও নির্দেশনা দেন।

শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশ করতে চায় বিএনপি

বিএনপির উচ্চপর্যায়ের নেতারা বলছেন, তাঁদের লক্ষ্য যেকোনো ধরনের সংঘাত ও সহিংসতা এড়িয়ে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনে এগিয়ে যাওয়া। সংঘাত হতে পারে এমন পরিস্থিতি তাঁরা খুব সচেতনভাবে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছেন। যার কারণে পুলিশের আপত্তিতে পূর্বঘোষিত মহাসমাবেশ এক দিন পিছিয়ে শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে নেওয়া হয়। কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের তিন সংগঠন যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগও বিএনপিকে অনুসরণ করে তাদের কর্মসূচি পিছিয়ে আনে। তারাও আজ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে পাল্টা ‘শান্তি সমাবেশ’ করছে। এটাকে বিএনপির নেতারা ক্ষমতাসীনদের ‘পায়ে পা দিয়ে ঝগড়া বাধানোর চেষ্টা’ বলে মনে করছেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস গতকাল বিকেলে নয়াপল্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বিএনপি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে বলেই সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে এসেছে। কয়েক মাস ধরে শত উসকানি, দলের কর্মসূচির ওপর নৃশংস হামলা, গুলি, নেতা-কর্মীদের হত্যার পরও বিএনপি সহিংসতার পথে পা বাড়ায়নি।

বিএনপির এই নেতা বিলম্বে হলেও মহাসমাবেশস্থলের অনুমতি দেওয়ায় পুলিশ কর্তৃপক্ষের ‘ইতিবাচক’ ভূমিকার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘আমি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উদ্দেশে আবারও আহ্বান জানাই, আপনারা আগামীকাল (আজ) নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশের নিরাপত্তা বিধানে যথাযথ সহযোগিতা করবেন। আমি আশা করি, সমাবেশে আসার পথে জনগণ ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের কোনো প্রকার বাধা প্রদান করা হবে না।’

পুলিশের অনুমতি পাওয়ার পর সন্ধ্যার দিকে নয়াপল্টনে মহাসমাবেশের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করে বিএনপি। আয়োজনের খুঁটিনাটি সামাল দিতে বিকেলে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় নেতারা। বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা কর্মীরাও ভিড় জমান। গত রাত ১২টার দিকে িবএনপির বিপুলসংখ্যক নেতা–কর্মীকে নয়াপল্টনে দলের কার্যালয়ের সামনে ভিড় জমাতে দেখা যায়। বিপুলসংখ্যক পুলিশও আছে নয়াপল্টন এলাকায়। মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে এই মহাসমাবেশে অংশ নিতে ঢাকার আশপাশের জেলাগুলো থেকেও নেতা-কর্মীরা ঢাকায় এসেছেন।

বিএনপির নেতারা বলছেন, শেখ হাসিনার পদত্যাগসহ নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার এক দফা আন্দোলনে আজ সারা জাতি ঐক্যবদ্ধ। মহাসমাবেশ সফল করার জন্য ইতিমধ্যে তাঁরা প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। নেতা-কর্মীরা অত্যন্ত উৎসাহ-উদ্দীপনা সহকারে শান্তিপূর্ণ এই মহাসমাবেশে দলে দলে যোগ দেবেন।