সরকারি হাসপাতালেই চেম্বার করবেন চিকিৎসকেরা: বিষয়টি কী

চিকিৎসক
প্রতীকী ছবি

আগামী মার্চ মাসের শুরু থেকে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা অফিস সময়ের পরে নিজের হাসপাতালেই চেম্বার করবেন। অর্থাৎ বিকেলে বা সন্ধ্যায় যেসব সরকারি চিকিৎসক বেসরকারি ক্লিনিক, হাসপাতাল বা ওষুধের দোকানে রোগী দেখতেন, সেসব চিকিৎসক ওই সময় রোগী দেখবেন নিজের হাসপাতালে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এমনই একটা কথা গত রোববার সচিবালয়ে বলেছেন।

অনেকেই প্রশ্ন করছেন, বিষয়টি কী? এতকাল দেশের মানুষ জেনে এসেছেন, চেম্বার করা মানে ব্যক্তিগতভাবে পেশার চর্চা করা। নিজের বাড়িতে, ব্যক্তিমালিকানাধীন ক্লিনিকে বা হাসপাতালে অথবা ওষুধের দোকানের এক পাশে সরকারি চিকিৎসকেরা সরকারি কাজের শেষে রোগী দেখেন, চিকিৎসাসেবা দেন। তবে সেটি সরকারি হাসপাতালে হবে কেমন করে? তাঁরা কি সেখান থেকে টাকা পাবেন? তাঁদের এ কাজ কি বাধ্যতামূলক হবে?

অধ্যাপক প্রাণ গোপাল দত্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য থাকার সময় সেখানে ‘ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস’ বলে একটি বিষয় চালু করেছিলেন। সে অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকদের বিকেলে হাসপাতালে ব্যক্তিগত চেম্বারের আদলে রোগী দেখতে হবে। তবে ব্যক্তিগত চেম্বারে ফি নির্ধারণ করেন চিকিৎসক নিজে। এখানে ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

আজ সোমবার সকালে বিএসএমএমইউর কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আতিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বেলা তিনটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপকদের বহির্বিভাগে পালা করে রোগী দেখতে হয়। রোগীপ্রতি ফি ২০০ টাকা। এর মধ্যে ১৩৫ টাকা পান চিকিৎসক, বাকি ৬৫ টাকা পান কর্মচারীরা।

এতে লাভ হচ্ছে রোগীর। বিএসএমএমইউর চিকিৎসককে ফার্মগেট, গ্রিন রোড, এলিফ্যান্ট রোডসহ ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানের বেসরকারি ক্লিনিক বা বেসরকারি হাসপাতালে দেখাতে ফি দিতে হয় এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা। সেখানে শাহবাগে লাগছে ২০০ টাকা।

এটাই ‘ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস’। অনেক দেশেই এটা আছে। অধ্যাপক প্রাণ গোপাল দত্ত বিএসএমএমইউতে এটা চালু করার সময় অনেকেই এর বিরোধিতা করেছিলেন, অনেকে সমালোচনা করেছিলেন। এরপর বারডেম এটা চালু করে।

ঠিক কী আদলে সারা দেশের সরকারি হাসপাতালে এটা চালু হবে, তা এখনো স্পষ্ট করে জানা যায়নি। একটা খসড়া নীতিমালা তৈরি হয়েছে। এই নীতিমালা প্রণয়ন কমিটির প্রধান বিএসএমএমইউর উপাচার্য মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধ হবে না, করা যাবে না। তবে সাধারণ মানুষ কীভাবে উপকৃত হতে পারে, সেটাই আমরা করার চেষ্টা করেছি।’

নীতিমালা অনুসারে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দিশারি প্রকল্প করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে যেন সরকার অভিজ্ঞতা নিয়ে সারা দেশে কাজে লাগায়, সে কথা বলা হয়েছে। ফি ঠিক কত হবে, তা এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি।

প্রস্তাব করা হয়েছে, বেলা তিনটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত চিকিৎসকেরা নিজ হাসপাতালে পালা করে এই চর্চা করবেন। ছয়টার পরে কী হবে—এমন প্রশ্নের উত্তরে অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘কেউ যদি ছয়টার পরে অন্য কোথাও কাজ করে তো করুক, আপনি ঠেকাবেন কী করে? আপনি দেখবেন তিনি সরকারি হাসপাতালের কাজটি ঠিকমতো করছেন কি না।’