বাস তৈরি হয়নি, ঢাকার দুই রুটে নতুন বাস চলাচল পেছাল

বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির ২৪তম সভা অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রধান কার্যালয় নগর ভবনে
ছবি: প্রথম আলো

নতুন বাস তৈরির কাজ শেষ না হওয়ায় ঢাকার দুই রুটে নগর পরিবহনের বাস চালুর সময় পেছাল। দুটি রুটসহ মোট তিন রুটে গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে বাস চালুর ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। তবে আজ মঙ্গলবার দক্ষিণ সিটির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস জানিয়েছেন, আগামী ১৩ অক্টোবর থেকে দুটি রুটে ঢাকা নগর পরিবহনের বাসসেবা চালু হবে।

বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির ২৪তম সভা শেষে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। আজ দুপুরে ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রধান কার্যালয় নগর ভবনের বুড়িগঙ্গা হলে এ সভার আয়োজন করা হয়।

ঢাকার গণপরিবহনের শৃঙ্খলা ফেরানো ও যানজট নিরসনের লক্ষ্যে গঠিত হয়েছে বাস রুট রেশনালাইজেশন। সভা শেষে এ কমিটির আহ্বায়ক দক্ষিণ সিটির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস সাংবাদিকদের বলেন, জাহান এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের অসহযোগিতার কারণে একটি রুটে (২৩ নম্বর রুটে) বাস নামানো সম্ভব হয়নি। বাকি দুটি রুটের (২২ ও ২৬ নম্বর রুট) যেসব বাস নামানোর কথা ছিল, সেগুলো এখনো পুরোপুরি প্রস্তুত করা যায়নি। তাই দুই রুটে ১৩ অক্টোবর থেকে ঢাকা নগর পরিবহনে বাসসেবা চালু হবে। আর অন্য রুটটিতে বাস নামানোর জন্য ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সময় সীমা ঠিক করা হয়েছে।

এর আগে দক্ষিণ সিটির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছিলন, নতুন ৩টি রুটের মধ্যে ২২ নম্বর রুটে ৫০টি, ২৩ নম্বর রুটে ১০০টি ও ২৬ নম্বর রুটে ৫০টি বাস নামানো হবে। এই তিন রুটের সব বাসই হবে নতুন। তিনটি রুটে যাত্রীছাউনি, বাস বে ও আনুষঙ্গিক অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ গত ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে শেষ হবে।

বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটি জানিয়েছে, ২২ নম্বর রুটটি হলো—ঘাটারচর থেকে বছিলা, মোহাম্মদপুর টাউন হল, আসাদগেট, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, কাকরাইল, ফকিরাপুল, মতিঝিল, টিকাটুলি, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, কোনাপাড়া হয়ে ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার পর্যন্ত।

২৩ নম্বর রুট হচ্ছে—ঘাটারচর থেকে বছিলা, মোহাম্মদপুর শিয়া মসজিদ, শ্যামলী, কলেজগেট, আসাদগেট, কলাবাগান, সায়েন্সল্যাব, শাহবাগ, মৎস্যভবন, প্রেসক্লাব, গুলিস্তান, দৈনিক বাংলা, কমলাপুর, ধলপুর, যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া, রায়েরবাগ, মাতুয়াইল, সাইনবোর্ড, চিটাগাং রোড পর্যন্ত।

আর ২৬ নম্বর রুট হলো—ঘাটারচর থেকে বছিলা, মোহাম্মদপুর টাউন হল, আসাদগেট, কলাবাগান, সায়েন্সল্যাব, নিউমার্কেট, আজিমপুর, পলাশী মোড়, চাঁনখারপুল, পোস্তগোলা হয়ে কদমতলী পর্যন্ত।

গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর রুটে পরীক্ষামূলকভাবে ঢাকা নগর পরিবহনের যাত্রা শুরু হয়। ঢাকা নগর পরিবহনের অধীন থাকা বাসগুলোয় টিকিট ছাড়া উঠা যায় না। এই বাসগুলো যত্রতত্র থামে না। নির্দিষ্ট কাউন্টার থেকে যাত্রীদের বাসে উঠতে হয়। ৫০টি বাস দিয়ে এই পথে ঢাকা নগর পরিবহনের বাসসেবা চালু হয়েছিল।

এদিকে আজকের সভা শেষে দক্ষিণ সিটির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর রুটে বর্তমানে ঢাকা নগর পরিবহনের যে বাস চলাচল করছে, এই বাসে গত ৮ মাসে ২৪ লাখ যাত্রী চলাচল করেছেন। গত আগস্ট মাস পর্যন্ত বাসমালিকেরা ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা আয় করেছেন।

নতুন যাত্রাপথে পুরোপুরি নতুন বাস নামানো হবে জানিয়ে শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, যেহেতু জাহান এন্টারপ্রাইজ প্রতিশ্রুতি দিয়েও (২৩ নম্বর রুটের জন্য) বাস নামাতে পারেনি, সেহেতু তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মেয়র তাপস আরও বলেন, ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর রুটে এখনো পরীক্ষামূলকভাবে ঢাকা নগর পরিবহনের বাসসেবা চলছে। ঘাটারচর থেকে মোট ৯টি যাত্রাপথে সবুজ রঙের ঢাকা নগর পরিবহন বাস চলাচল করবে। এসব রুটে বাস চলাচল চালু হলে একটা কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করা হবে। তখন ঢাকা নগর পরিবহনকে পুরোপুরি সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় আনা সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।

বাস রুট রেশনালাইজেশনের এই সভায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ আতিকুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকার গণপরিবহনের মালিকের সংখ্যা দুই হাজারের বেশি। আর ঢাকা ও আশপাশে ২০০-এর বেশি পথে (রুট) বাস চলাচল করে। যাত্রী তোলার জন্য এক বাসের চালক অন্য বাসের সঙ্গে পাল্লায় লিপ্ত হন ফলে দুর্ঘটনা বাড়ে। এ ব্যবস্থা পরিবর্তনে ২০০৪ সালে ঢাকার জন্য করা ২০ বছরের পরিবহন পরিকল্পনায় ‘বাস রুট রেশনালাইজেশন’ বা বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজ চালু করার পরামর্শ দেওয়া হয়। বিশেষ এ ব্যবস্থার মূল লক্ষ্য হচ্ছে লক্কড়ঝক্কড় বাস তুলে নেওয়া।

সহজ শর্তের ঋণে নতুন বাস নামানো। বাস চলবে পাঁচ-ছয়টি কোম্পানির অধীন। মালিকেরা বিনিয়োগের হার অনুসারে লভ্যাংশ পাবেন।