বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর উদ্ভূত জটিল সংকটগুলোর একধরনের সরল ব্যাখ্যা পাওয়া যায় জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাকের ভাবনায়। তিনিই বাঙালি মুসলমান রূপকল্পটি সামনে নিয়ে এসেছিলেন। তাঁর চোখ ছিল জহুরির। বাঙালি মুসলমান মধ্যবিত্তের বিকাশ নিয়ে তিনি অন্তর্দৃষ্টিময় নানা পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন।
জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক স্মরণে আলোচনা সভায় এ কথাগুলো উঠে আসে। সোমবার বিকেলে বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার হলে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাকের গবেষণা অবলম্বনে ভারতের রাজনৈতিক ও সামাজিক সংকট নিয়ে আলোচনা করেন বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউবি) উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস। তিনি বলেন, রাজ্জাক স্যারকে নিয়ে অনেক মিথ তৈরি হয়েছে। সেই মুখরোচক আলোচনায় তাঁর অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভাবনার কথা চাপা পড়ে গেছে। তাঁকে নিয়ে লেখা আহমদ ছফার ‘যদ্যপি আমার গুরু’ পড়লে বোঝা যায় তাঁর চোখ ছিল জহুরির চোখ।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম বলেন, ‘অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক সামাজিক-অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে পূর্ণমূল্য দিয়ে তাঁর সময়কে ব্যাখ্যা করতে জানতেন। ভারতীয় উপমহাদেশে সংঘটিত ঔপনিবেশিক আধুনিকতা, ঔপনিবেশিক পশ্চিমায়ন নিয়ে সমালোচনা করেও তিনি উপনিবেশের ইতিবাচক দিকগুলো গ্রহণ করতে অনুদারতায় ভোগেননি। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর উদ্ভূত জটিল সংকটগুলোর সরল ব্যাখ্যা আমরা তাঁর কাছ থেকে পেয়েছি।’
আলোচনায় বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ বলেন, ‘আব্দুর রাজ্জাকের সবচেয়ে বড় অবদান, বাঙালি মুসলমান বলতে আমরা যা বুঝি, সেই রূপকল্পটি তিনি সামনে নিয়ে এসেছিলেন। তাঁর জীবনযাপন, আড্ডা থেকে শুরু করে শিষ্যদের প্রভাবিত করার মধ্য দিয়ে তিনি এ কাজটি করেছেন। এ কাজটি তিনি করেছেন খুব সরলভাবে, নিজের জীবনযাপন, আড্ডা থেকে শুরু করে শিষ্যদের প্রভাবিত করার মধ্য দিয়ে। তাই (দেশের বর্তমান) সংকট বুঝতে আব্দুর রাজ্জাককে বোঝা জরুরি।’
ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেডের (ইউপিএল) সম্পাদক ফিরোজ আহমেদ অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের পিএইচডি অভিসন্দর্ভ ‘ভারতের রাজনৈতিক দলসমূহ’ নিয়ে আলোচনা করেন। এ গবেষণায় উঠে আসা আমলাতন্ত্রের ভূমিকা ও রাজনীতির নানা দিক তুলে ধরেন তিনি। অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের সরল যাপন আর গভীর চিন্তাশীলতার বিভিন্ন উদাহরণ তুলে ধরেন তিনি। ফিরোজ আহমেদ বলেন, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আব্দুর রাজ্জাক ঔপনিবেশিক কালপরিধির পরিসরে বাঙালি মুসলমান মধ্যবিত্তের বিকাশ নিয়ে অন্তর্দৃষ্টিময় পর্যবেক্ষণ পেশ করেছেন।
স্বাগত বক্তব্যে বাংলা একাডেমির সচিব মোহা. নায়েব আলী অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের বেড়ে ওঠা ও তাঁর কাজ নিয়ে আলোচনা করেন। তিন বলেন, আব্দুর রাজ্জাক নির্মোহ লক্ষ্যে এগিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি ভিন্নতার মধ্যে ঐক্য তৈরির চেষ্টা করতেন। নতুন প্রজন্মের জন্য তা অনুসরণীয়।
জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক স্মরণে আয়োজিত আলোচনা সভাটি সঞ্চালনা করেন বাংলা একাডেমির উপপরিচালক সায়েরা হাবীব।