‘প্রথম দিনে বইমেলায় আসার আনন্দই আলাদা। সেই প্রাণের টানেই অফিস থেকে সোজা মেলায় এসেছি’ বলছিলেন ব্যাংক এশিয়ার কারওয়ান বাজার শাখার কর্মকর্তা মফিজুর রহমান। ভাষার মাস ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন থেকেই বাংলা একাডেমির আয়োজনে শুরু হয়েছে অমর একুশে বইমেলা। বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করার পরে বিকেল পাঁচটা থেকে সর্বসাধারণের জন্য মেলার ফটক খুলে দেওয়া হয়।
এবারই প্রথম মেট্রোরেলে করে বইমোলায় আসার সুযোগ পাচ্ছেন গ্রন্থানুরাগীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেট্রোরেল স্টেশনটি ঠিক বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রবেশপথ লাগোয়া। যানজটের ধকল না থাকায় মহানগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে মেট্রোরেলে প্রথম দিনে মেলায় আসেন অনেকেই। মিরপুরের কাজীপাড়া থেকে তরুণ দম্পতি সোহরাব হোসেন ও রেবেকা সুলতানা এসেছিলেন মেলায়। তাঁরা বললেন, আকাশ মেঘলা দেখে দোটানায় ছিলেন মেলায় আসবেন কি না। তবে মেট্রোরেলের কথা মনে হতেই সব দ্বিধা ঝেড়ে ফেলে রওনা দিয়েছেন। আসতে কুড়ি মিনিটের মতো সময় লাগে। এবার আর বইমেলায় আসা নিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হবে না।
মেট্রোরেল নিয়ে দারুণ উচ্ছ্বাস ছিল ইমতিয়াজ আহমেদ, জান্নাতুন নাঈম ও সাদিয়া তাবাসসুমের। সন্ধ্যায় মেট্রোরেলের স্টেশন থেকে ফুটপাতে নামার মুখেই কথা হলা তাঁদের সঙ্গে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগে দ্বিতীয় বর্ষে পড়েন তাঁরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে এসেছেন ফার্মগেট পর্যন্ত। তারপর মেট্রোরেলে। এবারই তাঁরা প্রথমবার মেট্রোতে উঠলেন, তা–ও আবার বইমেলার প্রথম দিনে। সব মিলিয়ে পুরো ব্যাপারটাই তাঁদের কাছে ছিল দারুণ চমকের।
প্রথম দিনেই বৃষ্টিতে ভিজল অমর একুশের বইমেলা। গতকাল সকাল থেকেই বেলা বইছিল মেঘে মেঘে। বিকেলের দিকে বেশ ঘনঘোর হয়ে এল চারপাশ। লোকজন মেলায় এসে সবে স্টলে স্টলে ঘুরেফিরে নতুন বইয়ের খোঁজ করছিলেন, এমন সময় শুরু হলো ইলশেগুঁড়ি। অনেক স্টলেই এখনো বইপত্র তোলা হয়নি। ফলে সেখানে গিয়ে দাড়াঁলেন কেউ কেউ। আর অনেকে ছুটলেন মেলা থেকে বেরিয়ে যেতে। ক্রমে বৃষ্টির বেগও বাড়ল। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে রীতিমতো মাঝারি ধারার বৃষ্টি হলো প্রায় আধঘণ্টা ধারে। ফলে স্টল ভালো করে সাজিয়ে তোলার আগেই পসরা গুটিয়ে নিতে হলো স্টল ও প্যাভিলিয়নের বিক্রয়কর্মীদের।
কথা হচ্ছিল সময় প্রকাশনের স্টলে প্রকাশক ফরিদ আহমেদের সঙ্গে। তিনি বললেন, আবহাওয়ার কারণে প্রথম দিনে যেমন জনসমাগম হয়, এবার তেমন হয়নি। তবে দ্বিতীয় দিনে শুক্রবার। লোকসমাগম বাড়বে বলে তাঁর ধারণা।
প্রথমা প্রকাশনের প্যাভিলিয়ন পড়েছে এবার মেলার পশ্চিম প্রান্তে। উন্মুক্ত মঞ্চের পাশ দিয়ে লাল ইটের পায়ে চলার যে রাস্তা, তার পাশেই। গতকাল প্রথম দিনেই দেখা গেল সাজসজ্জার কাজ শেষ। বই সাজানোও হয়েছে। নতুন বইও আসতে শুরু করেছে প্রথম দিন থেকেই। এবারের নতুন বইয়ের মধ্যে আছে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের অর্থনীতিবিষয়ক প্রবন্ধ অর্থশাস্ত্র: ইতিহাস দর্শন রাজনীতি। এ ছাড়া মেলা শুরুর আগেই এসেছে আনিসুল হকের নতুন উপন্যাস কখনো আমার মাকে। নতুন বইয়ের পাশাপাশি আগের প্রকাশিত বইগুলোরও খোঁজ নিচ্ছিলেন পাঠকেরা। মিরপুর ১০ নম্বর থেকে আজিজুর রহমান দেখছিলেন আকবর আলি খানের লেখা বইগুলো। বিক্রয় প্রতিনিধিরা জানালেন, প্রথম দিন হিসেবে বিক্রির শুরুটা প্রত্যাশিতভাবেই শুরু হয়েছিল, তবে বৃষ্টি নামায় লোকজন দ্রুত মেলা ছেড়েছেন।
আজ শুক্রবার মেলা শুরু হবে বেলা ১১টায়, বেলা ১টা পর্যন্ত শিশুপ্রহর। মেলা চলবে রাত নয়টা অবধি।
প্রথমা প্রকাশন এনেছে হাসনাত আবদুল হাইয়ের জীবনীভিত্তিক নতুন উপন্যাস কল্যাণী/মমতাজ।
কল্যাণী রায় ওরফে মমতাজ বেগমের জীবন ছিল সাহস ও আত্মত্যাগের এক বিরল দৃষ্টান্ত। অভিজাত পরিবারে জন্মেছিলেন কল্যাণী রায়। বাবা ছিলেন হাইকোর্টের বিচারপতি। কল্যাণী ভালোবেসে একজনকে বিয়ে করেছিলেন, নাম বদলে হয়েছিলেন মমতাজ বেগম। এই নারী ভাষাসৈনিকের জীবন নিয়ে লেখা উপন্যাসটি পাঠককে শুধু যে এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার স্বাদ দেবে, তা-ই নয়; জানা ইতিহাসের এক অজানা অধ্যায়ের সঙ্গেও পরিচয় করিয়ে দেবে।
হাসনাত আবদুল হাই উচ্চশিক্ষা নিয়েছেন অর্থনীতি বিষয়ে। কিছুকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে যোগ দেন সরকারি চাকরিতে। সচিব পদ থেকে অবসর গ্রহণ ২০০০ সালে। লেখালেখির শুরু ছাত্রজীবন থেকে। উপন্যাস, ছোটগল্প , শিল্প সমালোচনা, নন্দনতত্ত্ব থেকে অর্থনীতি পর্যন্ত বিচিত্র বিষয়ে লিখে চলেছেন তিনি। পেয়েছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও একুশে পদক।