মশা নিয়ন্ত্রণে বিশেষজ্ঞের মতামত শুনবেন হাইকোর্ট

হাইকোর্ট
ফাইল ছবি

ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকায় মশা নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে বিশেষজ্ঞের মতামত শুনবেন হাইকোর্ট। এ জন্য মশাবিশেষজ্ঞ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশারকে আগামী ২ এপ্রিল বেলা সাড়ে ১১টায় আদালতে আসতে বলা হয়েছে।

একই সঙ্গে বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশেনের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ওই দিন একই সময়ে আদালতে উপস্থিত হতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক–আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ সোমবার এ আদেশ দেন।

চলতি মাসের ৬ তারিখ আদালতে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মশার ধরন, উৎপত্তিস্থল ও লার্ভার উপস্থিতি বিষয়ে জরিপ এবং মশার উৎপাত নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ ও কার্যক্রমের অগ্রগতিবিষয়ক প্রতিবেদন তুলে ধরেন বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশেনের আইনজীবীরা। প্রতিবেদন উপস্থাপনের পর রিট আবেদনকারী আইনজীবীকে তাঁর মতামত দিতে বলে শুনানির জন্য ১৩ মার্চ দিন রাখেন। রিট আবেদনকারী তাঁর বক্তব্যসহ প্রস্তাব আদালতে তুলে ধরেন।

 আদালতে রিটের পক্ষে আবেদনকারী আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদ নিজে শুনানি করেন। বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের পক্ষে আইনজীবী সাইফুর রশীদ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষে আইনজীবী রিমি নাহরীন শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।

২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ‘শাহজালাল বিমানবন্দর: মশার পরান বধিবে কে?’ শিরোনামে ও ‘ছেঁকে ধরে ঝাঁকে ঝাঁকে মশা’ শিরোনামে একই বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোয় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই বছরের ৩ মার্চ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদ। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১৯ সালের ১২ মার্চ হাইকোর্ট রুল দেন।

পরবর্তী সময়ে গত বছরের নভেম্বরে হাইকোর্ট বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ও উত্তর সিটি করপোরেশনকে একসঙ্গে বসে বিমানবন্দরে মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। নির্দেশনা বাস্তবায়ন বিষয়ে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। এর ধারাবাহিকতায় মশার ধরন, উৎপত্তিস্থল ও লার্ভার উপস্থিতি বিষয়ে জরিপ এবং কার্যক্রম জানিয়ে পৃথক প্রতিবেদন দাখিল করেন বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের আইনজীবী।

আজ এ বিষয়ে শুনানির শুরুতে আইনজীবী তানভীর আহমেদ বলেন, ‘বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের দাখিল করা জরিপ প্রতিবেদন স্পষ্টভাবে বোঝা যায় না। এ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পেতে অধ্যাপক কবিরুল বাশারের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি জানান, বিমানবন্দর এলাকায় মশার উপস্থিতি আছে। বিমানবন্দরের মধ্যে একটি জায়গায় ১০ হাজার লার্ভা আছে, যা উদ্বেগজনক। বিমানবন্দরসংলগ্ন সিটি করপোরেশনের এলাকার মধ্যেও লার্ভা আছে।

আদালত বলেন, কবে জরিপ করা হয়েছে? তখন তানভীর আহমেদ বলেন, গত ডিসেম্বরে। অবস্থার উন্নতি হলো কি না, তা–ও প্রতিবেদনে উল্লেখ নেই। বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের পক্ষে আইনজীবী সাইফুর রশীদ বলেন, ‘উন্নতি আছে। সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি।’  

আদালত বলেন, ‘তাহলে প্রতিফলন দেখান। পরীক্ষায় আপনি শূন্য পেলেন, তাহলে কীভাবে বুঝব আপনি খুব খেটে পড়াশোনা করেছেন?’ তখন সাইফুর রশীদ বলেন, ‘দুই বছর ধরে জরিপ করা হচ্ছে, সুপারিশ অনুসারে কাজ করা হচ্ছে।’ একপর্যায়ে আদালত বলেন, কোনো ডেভেলপমেন্ট নেই।  

শুনানির একপর্যায়ে আইনজীবী তানভীর আহমেদ বলেন, বিশেষজ্ঞ হিসেবে অধ্যাপক কবিরুল বাশারের মতামত আদালত চাইলে শুনতে পারেন। আদালত বলেন, ‘তাহলে কোথায় কী সমস্যা আছে, ওনাকে শুনি।’

তখন সাইফুর রশীদ বলেন, সামনে দুটি অবকাশ আছে। ঈদের (ঈদুল ফিতর) পরে হলে ভালো হতো।

আদালত বলেন, ‘বৃষ্টির মৌসুম আসছে, তখন সমস্যা বেশি হবে। ঈদ ও রমজানে কি মানুষ বসে থাকে? বৃষ্টি শুরু হলে মশার উপদ্রব বাড়বে।’ পরে আদালত ওই আদেশ দেন।