ঢাকা ওয়াসার পানি কেমন, তা প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) পান করানোর জন্য অপেক্ষা করছেন রাজধানীর কয়েকজন বাসিন্দা। কাচের জগ ও বোতলে ওয়াসার পানি, গ্লাস, লেবু ও চিনির প্যাকেট নিয়ে ওয়াসা ভবনের সামনে তাঁরা বসে আছেন। তবে এখনো এমডির দেখা পাননি।
আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে জুরাইন ও পূর্ব রামপুরা থেকে পাঁচজন রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ওয়াসা ভবনের সামনে আসেন। রাজধানীতে পানি সরবরাহের দায়িত্বে থাকা ওয়াসার পানি কতটা ‘সুপেয়’, তা দেখানো ও সেই পানি দিয়ে শরবত তৈরি করে এমডিকে পান করানোর জন্য তাঁরা কর্মসূচির অংশ হিসেবে এখানে আসেন। দুপুর ১২টা পর্যন্ত এমডি বা ওয়াসা কর্তৃপক্ষের কারও সঙ্গে তাঁরা দেখা করতে পারেননি।
ওয়াসা ভবনের সামনে পুলিশ ও আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। প্রতিবাদ করতে আসা ব্যক্তিদের দেড় ঘণ্টা ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পরে অবশ্য তাঁদের ভেতরে যেতে দেওয়া হয়।
১৭ এপ্রিল ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) গবেষণা উপস্থাপন করে জানায়, ঢাকা ওয়াসার পানির নিম্নমানের কারণে ৯৩ শতাংশ গ্রাহক বিভিন্ন পদ্ধতিতে পানি পানের উপযোগী করেন। এর মধ্যে ৯১ শতাংশ গ্রাহকই পানি ফুটিয়ে পান করেন। তবে টিআইবির এই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান বলেন, ওয়াসার পানি শতভাগ সুপেয়। তাঁর এ বক্তব্যের প্রতিবাদ করেছেন রাজধানীর কয়েক এলাকার বাসিন্দারা।
গতকাল সোমবার জুরাইনের এসব নাগরিকের পক্ষ থেকে ওয়াসার এমডিকে পানি খাওয়ানোর কর্মসূচির কথা জানানো হয়। সেই অনুযায়ী আজ এসব ব্যক্তি ওয়াসা ভবনের সামনে আসেন।
জুরাইন নাগরিক অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদের সমন্বয়ক মিজানুর রহমান ওয়াসার এমডির বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘দায়িত্বশীল পদে থেকে একজন এ রকম কথা কীভাবে বলেন!’ তিনি আরও বলেন, ওয়াসার এমডিকে তাঁর বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ করতে হবে। এ ছাড়া পানির জন্য এত দিন যে বিল দিয়ে এসেছেন, তা ফেরত দেওয়ার দাবি জানান। বলেন, বিশুদ্ধ পানি না দেওয়া পর্যন্ত তাঁরা পানির বিল দেবেন না।
মিজানুর রহমান স্ত্রী–সন্তান নিয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে আসেন। তাঁর হাতে থাকা কাচের জগে ঘোলাটে পানি দেখিয়ে জানান, তা ওয়াসার পানি।
পূর্ব রামপুরা থেকে আসা মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘পাঁচ বছরের কোনো শিশুও তো বলবে না যে ওয়াসার পানি ভালো।’ তিনি আরও বলেন, ‘পানির ট্যাংকে যদি ময়লা জমে, তা তো গায়েবি ময়লা না। ওয়াসার নোংরা পানি থেকেই সে ময়লা জমে।’
জুরাইনের বাসিন্দা মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে জানান, তাঁরা পূর্ব জুরাইনের বাসিন্দা। সেখানে ৩৫ বছর আগে ওয়াসার লাইন বসানো হয়। শুরুর ১০ বছর পানি ভালো ছিল। এরপর পানি নোংরা হতে শুরু করে। এখন সেই পানি ফুটিয়েও খাওয়ার অবস্থা নেই। ড্রেনের পানির মতো নোংরা পানি আসে। নানাভাবে ওয়াসাকে জানানো হয়। ২০১২ সালে বর্তমান এমডি বরারবর সাড়ে তিন হাজার স্বাক্ষর নিয়ে আবেদনও করা হয়। উনি এখন পর্যন্ত কোনো সাড়া দেননি। মিজানুর রহমান প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘এ অবস্থায় একজন এমডি কীভাবে বলেন, ওয়াসার পানি শতভাগ বিশুদ্ধ। আমার এর উত্তর জানতে চাই।’
আরও পড়ুন: