'ভাগাড়ে' সবুজের ছোঁয়া

সবুজে ভরে উঠেছে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় মেয়র মোহাম্মদ হানিফ উড়ালসড়কের নিচের অংশ। ছবি: প্রথম আলো
সবুজে ভরে উঠেছে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় মেয়র মোহাম্মদ হানিফ উড়ালসড়কের নিচের অংশ।  ছবি: প্রথম আলো

করলাগাছের বাড়ন্ত লতা উড়ালসড়ক ছুঁই–ছুঁই। মরিচগাছটিতে ছোট ছোট সাদা ফুল ফুটেছে। বটগাছটি মাথা উঁচু করে জানান দিচ্ছে ভবিষ্যতে ছায়া দেওয়ার সক্ষমতার কথা। ডালপালা মেলেছে ঔষধি নিমগাছ। মনে হতে পারে এটা কোনো নার্সারি কিংবা গ্রামীণ কোনো দৃশ্যপট। তবে তা নয়। মেয়র মোহাম্মদ হানিফ উড়ালসড়কের নিচে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তার এক অংশের দৃশ্য এটি।

একসময় উড়ালসড়কের নিচের ওই জায়গা ছিল ‘ভাগাড়’। আশপাশের লোকজন সেখানে ময়লা ফেলতেন। রাতে ভবঘুরেদের আড্ডা বসত। এখন সেখানে গাছের সমারোহ সেখানে। বড়ই, খেজুর, পেঁপে, চালতা, আম, জাম কিংবা লিচুর মতো নানান ফলদ উদ্ভিদ। বনজ উদ্ভিদের মধ্যে আছে বটগাছ, মেহগনি, রাবার, কাঠবাদাম ও অশ্বত্থগাছ। এ ছাড়া সেখানে নিজের সৌন্দর্য মেলে ধরেছে পাতাবাহার, ঝাউ আর গাঁদাফুল।

যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা থেকে ডেমরা যাওয়ার সড়কের খানিকটা অংশজুড়ে এসব গাছ লাগানো হয়েছে। ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পূর্ব বিভাগের ডেমরা জোনের পরিদর্শক গোলাম মোস্তফার উদ্যোগে একই জোনের ২২ জন সার্জেন্ট এই সবুজ পরিবেশ গড়ে তুলেছেন।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে দেখা যায়, যাত্রাবাড়ী-ডেমরার সড়কটিতে যানজট লেগে যাচ্ছিল খানিক বাদে বাদে। বাসে বসে ঘামছিলেন বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীরা। তবে জানালার পাশের আসনে বসা যাত্রীরা মাথা বের করে এ সৌন্দর্য উপভোগ করছিলেন। মৃদুমন্দ বাতাসে গাছগুলো দোল খাচ্ছিল।

তানিয়া আক্তার যানজটে রিকশায় বসে গাছের দিকে তাকিয়ে সবুজের স্নিগ্ধতা উপভোগ করছিলেন। বললেন, অল্প জায়গাজুড়ে এ সবুজায়ন হলেও বেশ প্রশংসনীয় উদ্যোগ। সড়কের পাশজুড়ে থাকা এ সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে যদি গন্তব্যে যাওয়া যেত, তবে প্রাণটাই যেন জুড়িয়ে যেত। আর মোটরবাইকে চেপে গন্তব্যে যাওয়া হিমেল আহমেদ বললেন, ‘রাজধানীর সড়কের পাশজুড়ে কিংবা এমন করে ফ্লাইওভারের নিচে যদি গাছের সমারোহ ঘটানো যায়, তাতে কিছুটা হলেও আমরা যান্ত্রিকতা থেকে মুক্তি পাব।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডেমরা জোনের পরিদর্শক গোলাম মোস্তফা বলেন, ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা রোদে দাঁড়িয়ে তাঁদের দায়িত্ব পালন করেন। আর যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তাকে কেন্দ্র করে গাড়ির চাপ সব সময় লেগেই থাকে। তখন মনে হলো চৌরাস্তার এ খালি জায়গাটায় কিছু গাছ লাগানো যায়, তবে কিছুটা সবুজ তাঁদের স্বস্তি দেবে। আর গাছ বড় হলে ছায়াও পাওয়া যাবে। ট্রাফিক সার্জেন্টদের তখন জানালে সবাই তাতে উৎসাহবোধ করেন। সবাই একটি করে গাছও দেবেন বলে জানান তাঁরা। পরে গত বছরের অক্টোবর মাসে জুরাইন থেকে গাছের উপযোগী মাটি আনা হয়। একটি নার্সারির দুজন কর্মচারী ও কয়েকজন দিনমজুরকে দিয়ে গাছগুলো লাগানো হয়েছে। তা দেখে স্থানীয়রাও কয়েকটি গাছ দিয়েছে। একজন একটা কলাগাছ এনে দিয়ে গেছেন।

গোলাম মোস্তফা জানান, বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে তাঁরা গাছ লাগিয়েছেন। বেশি রোদ পড়ে এমন স্থানে বনজ আর কম পড়ে এমন স্থানে ফলদ বৃক্ষ লাগানো হয়েছে। তবে গাছগুলো বাঁচিয়ে রাখাই ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ, গরমে পানি দিতে হয় নিয়মিত। প্রথমদিকে ট্রাফিক পুলিশের কার্যালয় থেকেই পানি দেওয়া হতো। পরে ওয়াসার গাড়িতে পানি কিনে প্রতি সপ্তাহে দু–একবার দেওয়া হয়। গাছগুলো দৃশ্যমান হয়েছে। আম ও জাম্বুরাগাছ ফলও দিয়েছে কয়েকটি।

২০১৩ সালে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ উড়ালসড়ক গাড়ি চলাচল করার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। একপর্যায়ে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় উড়ালসড়কের এই অংশের নিচে ময়লা–আবর্জনা ফেলতে থাকে লোকজন। ২০১৭ সালের শেষ দিকে উড়ালসড়কের নিচে বেড়া দেওয়ার কাজ শুরু হয়। এতে ময়লা ফেলার পরিমাণ কমে এলেও জায়গাটি খালিই পড়ে থাকে।

গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘গাছগুলো বাঁচিয়ে রাখার জন্য নিয়মিত পরিচর্যা ও পানি দিতে হয়। তাতে বেশ খরচই হয়। হয়তো শখের বশে আমরা এটা করেছি। তবে ব্যাপারটি প্রতীকী। সিটি করপোরেশন যদি পুরো উড়ালসড়কের নিচটাজুড়ে এমন সবুজায়ন করে, তাহলে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এ উড়ালসড়কের নিচটা সবুজে ছেয়ে যাবে।’