'এন-৯৫' মাস্কের নামে কী দেওয়া হচ্ছে

রাজধানীর মুগদা জেনারেল হাসপাতাল। ছবি: প্রথম আলো
রাজধানীর মুগদা জেনারেল হাসপাতাল। ছবি: প্রথম আলো

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বা সন্দেহভাজন রোগীদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য বিশেষ সুরক্ষাসামগ্রী দিচ্ছে সরকার। এর মধ্যে মাস্কও আছে। রাজধানীর মুগদা জেনারেল হাসপাতালে ‘এন–৯৫’ মাস্কের নামে যেসব মাস্ক দেওয়া হয়েছে, সেগুলো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের (সিএমএসডি) সূত্র জানায়, সিএমএসডি থেকে মুগদা জেনারেল হাসপাতাল ছাড়াও ঢাকা ও ঢাকার বাইরে আরও কয়েকটি হাসপাতালে একই ধরনের মাস্ক সরবরাহ করা হয়েছে। এই মাস্কগুলোর কার্যকারিতা সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ মতামত প্রয়োজন বলে মনে করছে হাসপাতালের করোনাভাইরাস কমিটি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মুগদা হাসপাতালে ৩০০ মাস্ক দেওয়া হয়। যেগুলোর মোড়কে ‘এন–৯৫ ফেস মাস্ক’ লেখা। এগুলো দেখে চিকিৎসকদের সংশয় তৈরি হয়। হাসপাতালটির পরিচালক সাদিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোনে কিছু বলতে রাজি হননি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, মুগদার ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক শহিদ মো. সাদিকুল ইসলাম গতকাল বুধবার অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে এ বিষয়ে একটি চিঠি দিয়েছেন। তাতে বলা হয়েছে, হাসপাতালের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩০ মার্চ কেন্দ্রীয় ঔষধাগার অন্যান্য মালামালের সঙ্গে ৩০০টি এন–৯৫ মাস্ক সরবরাহ করেছে। মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ার একটি প্রতিষ্ঠান এই মাস্কের প্রস্তুতকারী। এই মাস্কগুলো প্রকৃতপক্ষে ‘এন–৯৫’ কি না, সে বিষয়ে হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় সাংসদ সাবের হোসেন চৌধুরী টেলিফোনে হাসপাতালের পরিচালকের কাছে জানতে চেয়েছেন। চিঠিতে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় মতামত দেওয়ার অনুরোধ করা হয়।

সাংসদ সাবের হোসেন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এন–৯৫ একটি বিশেষায়িত মাস্ক। চিকিৎসক ও নার্স, যাঁরা সরাসরি রোগীদের সেবা দেন, তাঁদের সুরক্ষায় এটি জরুরি। মুগদা হাসপাতালে কিছু মালামাল এসেছে। কয়েকজন চিকিৎসক আমার কাছে অভিযোগ করেছেন, মাস্কগুলো মানসম্মত এবং এন–৯৫ বলে মনে হচ্ছে না।’ তিনি বলেন, তাঁর জানা মতে দেশে এন–৯৫ মাস্ক তৈরি হয় না। আমদানি করতে হয়। এর দামও বেশি। কিন্তু মুগদা হাসপাতালে যে মাস্ক দেওয়া হয়েছে, তা মুন্সিগঞ্জে তৈরি। কীভাবে এটি হলো, কেনাকাটায় কোনো অনিয়ম হয়েছে কি না, তা তদন্ত করার জন্য তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও কেন্দ্রীয় ঔষধাগারকে বলেছেন।

‘এন-৯৫ একটি বিশেষায়িত মাস্ক। প্রতীকী ছবি। ছবি: রয়টার্স

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এই মাস্কগুলোর বিষয়ে গতকাল মুগদা জেনারেল হাসপাতালের করোনাভাইরাস কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় কমিটির সদস্যরা একমত হন যে কেন্দ্রীয় ঔষধাগার থেকে সরবরাহ করা এন–৯৫ মাস্কের কার্যকারিতা সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ মতামত প্রয়োজন। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে (আইইডিসিআর) চিঠি দিয়ে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।

কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের পরিচালক মোহাম্মদ শহীদউল্লা প্রথম আলোকে বলেন, মাস্কের মোড়কে এন–৯৫ লেখা ছিল। তবে এগুলো ‘এন–৯৫’ না। তিনি দাবি করেন, এগুলো স্বাভাবিক মাস্ক, তবে ভালো মানের। সার্জিক্যাল মাস্কের চেয়ে উন্নত। একটি বড় কোম্পানি এগুলো তৈরি করেছে। 

বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস সংক্রমণের চিকিৎসার ক্ষেত্রে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের এন–৯৫ মাস্ক পরার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজেস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) তথ্য অনুযায়ী, এন-৯৫ মাস্ক হলো এমন মাস্ক, যা বাতাসে ভেসে বেড়ানো সূক্ষ্ম কণা আটকে দেয়। এটি খুবই সূক্ষ্ম কণা কমপক্ষে ৯৫ শতাংশ ফিল্টার করতে সক্ষম। এটি ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস ফিল্টার করতেও সক্ষম।

সরকার চিকিৎ​সকদের ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রীর (পিপিই) যুক্তিসংগত ব্যবহার নিয়ে যে নীতিমালা তৈরি করেছে, তাতে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সেবা দেওয়ার সময় স্বাস্থ্যকর্মীকে অ্যারোসল, ড্রপলেট উৎপাদনকারী পদ্ধতিগুলো থেকে সুরক্ষার জন্য অন্যান্য সুরক্ষাসামগ্রীর সঙ্গে এন–৯৫ মাস্ক বা এফএফপি–২ মানের অথবা সমমানের মাস্ক পরার কথা বলা আছে।