তিন বছরের ফুটফুটে শিশু মেহরাব। দিনভর বাড়ির উঠানে ছুটোছুটি, ভাঙা ভাঙা শব্দে কথা বলা—সব মিলিয়ে পুরো বাড়ি মুখর করে রাখত শিশুটি। সেই মেহরাব এখন ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের ২০৯ ওয়ার্ডের ১৯ নম্বর বেডে চুপচাপ শুয়ে থাকে। ব্লাড ক্যানসারের আক্রমণে কাবু হয়ে গেছে তার ছোট্ট শরীর। প্রায় সাড়ে তিন মাস ধরে এই হাসপাতালে আছে মেহরাব।
আজ মঙ্গলবার কথা হলো মেহরাবের মা মিতা হুছাইন ও বাবা মো. লাভলু হুছাইনের সঙ্গে। তাঁদের বাড়ি চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জে। জানালেন, তাঁদের দুই ছেলেমেয়ের মধ্যে মেহরাব ছোট। লাভলু মালয়েশিয়ায় চাকরি করতেন। ছেলের অসুস্থতার কারণে দেশে ফিরে এসেছেন।
লাভলু বলেন, ‘মালয়েশিয়া গিয়েছিলাম ঋণ নিয়ে। সেই ঋণ এখনো শেষ হয়নি। মালয়েশিয়ার চাকরিও আর থাকবে কি না, জানি না। আমি এখন বেকার। ছেলের এই অবস্থা। খুবই কষ্টে আছি ভাই। আমার ছেলেটার মুখের দিকে চেয়ে কিছু করেন।’ তিনি জানালেন, মেহরাবের চিকিৎসায় এখন পর্যন্ত প্রায় পাঁচ লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। ঋণ করেই চিকিৎসার খরচ মেটানো হচ্ছে।
মেহরাবের মা মিতা জানালেন, প্রায় চার মাস আগে মেহরাবের পায়ে একটি টিউমার দেখা দেয়। সেই চিকিৎসা করাতে প্রথমে তাকে নেওয়া হয় ঢাকা শিশু হাসপাতালে। সেখান থেকে নেওয়া হয় ঢাকার সিএমএইচে। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা যায়, মেহরাবের শরীরে ক্যানসার বাসা বেঁধেছে। তারপর তাকে ঢামেকে ভর্তি করানো হয়। মিতা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বললেন, ‘ভাই, আমি আপনার ছোট বোনের মতো, আপনার বোনের ছেলেটির জন্য কিছু করেন।’ মিতা আরও জানালেন, এখন পর্যন্ত মেহরাবের ছোট্ট শরীরে প্রায় ৩০টি কেমো দেওয়া হয়েছে। ছেলেকে বিদেশে চিকিৎসা করাতে চান তিনি।
মেহরাবের স্বাস্থ্যের খোঁজ নিতে কথা হলো ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু হেমাটোলজি ও অনকোলোজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক এ কে এম আমিরুল মোরশেদ খসরুর সঙ্গে। তিনি বললেন, ‘আমরা ক্যানসার রোগীদের দুই ভাগে ভাগ করি—ভালো হওয়ার সম্ভাবনা বেশি এবং ভালো হওয়ার সম্ভাবনা কম। মেহরাবের সম্ভাবনা কম। তবে বর্তমানে সে ভালো আছে। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের চিকিৎসা শেষ। তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপের চিকিৎসা এখনো বাকি।’ তিনি জানালেন, মেহরাবকে আরও দুই মাসের কোর্স করতে হবে। তারপর দুই বছর চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে থাকতে হবে।
সামনের দিনগুলোতে চিকিৎসায় আরও কত টাকা খরচ হবে, তা বলা কঠিন বলে জানালেন আমিরুল মোরশেদ। তিনি বলেন, ইনফেকশন না হলে এক-দেড় লাখ টাকায় হয়ে যাবে। কিন্তু ইনফেকশন হলেই সমস্যা। প্রতিটি ইনফেকশনের চিকিৎসার জন্যই ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়ে যায়।
হুছাইন দম্পতির চাওয়া তাঁদের ছেলে আবার সুস্থ হয়ে ঘর আলো করুক। তাই তাঁরা সবার কাছে ছেলের জন্য সাহায্য ও দোয়া চান। কেউ যদি মেহরাবের জন্য সাহায্য পাঠাতে চান, তাহলে এই ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠাতে পারেন, ডাচ্-বাংলা এজেন্ট ব্যাংক (চুয়াডাঙ্গা শাখা), অ্যাকাউন্ট নাম: মো. লাভলু হুছাইন, অ্যাকাউন্ট নম্বর: ৭০১৭০১৬৮২১১৯৪।