শিক্ষার্থীদের জন্য বাসে অর্ধেক বা হাফ ভাড়া চালু করা বিষয়ে বিআরটিএ এবং পরিবহনমালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় বৈঠকেও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে এটি চালু করতে সরকারের কাছে কয়েক দফা প্রস্তাব তুলে ধরেছেন পরিবহননেতারা।
এদিকে বৈঠক শেষে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেছেন, ‘ঢাকায় চলাচলকারী পরিবহনমালিকদের ৮০ শতাংশ গরিব। একটি বাস দিয়ে নিজের সংসার চালায় কেউ কেউ। তারা কীভাবে ক্ষতি সামলাবে।’
এর আগে গত বৃহস্পতিবার হাফ ভাড়া নিয়ে সড়ক পরিবহনসচিবের সভাপতিত্বে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব পর্যায়ে বৈঠক হয়। পরিবহনমালিক ও শ্রমিকনেতারা ওই বৈঠকে অংশ নেন।
আজ শনিবার রাজধানীর বনানীতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) কার্যালয়ে এই কর্তৃপক্ষ এবং পরিবহনমালিক ও শ্রমিকনেতাদের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে হাফ ভাড়া কার্যকর করা নিয়ে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেন পরিবহননেতারা।
বৈঠকে খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, হাফ ভাড়ার দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে। তাদের দাবির যৌক্তিক সমাধানে প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।
হাফ ভাড়া চালু হলে মোট ক্ষতি বা ভর্তুকি নিয়ে এনায়েত উল্লাহ বলেন, তাৎক্ষণিক কিছু করা যাবে না। সময়ের প্রয়োজন আছে, টাস্কফোর্স ছাড়া এটি সম্ভব নয়। সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠান নিয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। হাফ ভাড়ায় ক্ষতির পরিমাণ টাস্কফোর্স নির্ধারণ করবে।
হাফ ভাড়ার প্রচলিত রেওয়াজ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পরিবহনমালিক নেতারা দাবি করেন, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাফ ভাড়া নেওয়ার কোনো বিধান আগেও ছিল না, এখনো নেই। ছাত্রদের বচসায় কোনো কোনো পরিবহনশ্রমিক এটা মেনে নিতেন। তবে সরকারিভাবে সিদ্ধান্ত হলে এটি সবাইকে দিতে হবে। যে দেশে ভোটার আইডি কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স জাল হয়, সেখানে ছাত্রত্ব কীভাবে প্রমাণ হবে।
বৈঠক শেষে ছাত্রদের শ্রেণিকক্ষে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, ‘ছাত্রদের দাবি সরকারের কাছে পৌঁছেছে। সরকার ছাত্রদের যৌক্তিক দাবির বিষয়ে আন্তরিক। এটাকে আইনি কাঠামোর মধ্যে আনতে সময় লাগবে।’
অপর দিকে পরিবহনমালিক ও শ্রমিকনেতাদের পক্ষ থেকে দেওয়া প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ঢাকা শহরের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াতে কত শিক্ষার্থী বাস ব্যবহার করে, তার পরিসংখ্যান দরকার। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের জন্য পরিবহন কার্ড চালু করা যেতে পারে, তাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যাবে। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিজেরা পরিবহন চালু করতে পারে। বিআরটিসি বাস আরও বাড়লে তা দিয়ে শিক্ষার্থীদের ঢাকায় আনা-নেওয়া করা যায়। কেননা, বিআরটিসি বাস সরকারের ভর্তুকি পায়।
পরিবহননেতারা বলেন, বেসরকারি পরিবহনমালিকেরা কোনো সুবিধা পান না। তাই হাফ ভাড়া চালু করলে ভাড়ার অবশিষ্ট টাকা কোন তহবিল থেকে, কীভাবে পূরণ হবে, তা জানা দরকার। যেসব পরিবহন হাফ ভাড়া কার্যকর করবে, তাদের মালিকদের বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা কীভাবে হবে, সেটিও জানতে চান নেতারা। এ ছাড়া প্রতিবছর শিক্ষা বাজেট থেকে টাকা ফেরত যায় উল্লেখ করে এই টাকা ভর্তুকি বাবদ পরিবহন খাতে কাজে লাগানোর প্রস্তাব দেন তাঁরা।
পরিবহনমালিকেরা বলেন, অনেক বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেয়। এসব প্রতিষ্ঠান নিজস্ব পরিবহন চালু করতে পারে। শুধু সরকার নয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেও ছাড় দিতে হবে।
বৈঠকে বিআরটিএ চেয়ারম্যান বলেন, হাফ ভাড়া চালু বিষয়ে মালিকদের প্রস্তাব নিয়ে খুঁটিনাটি আলোচনা হয়েছে। এটি চালু হলে যারা পড়াশোনা করে না, তারাও নকল শিক্ষার্থী পরিচয়পত্র তৈরি করতে পারে। কোন ছাত্রের জন্য প্রযোজ্য হবে, সেটিরও নিশ্চয়তা চান বাসমালিকেরা। এর আগের বৈঠকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। সমাধানের দিকে যেতে নিয়মিত বৈঠক হচ্ছে, আরও হবে।