ঈদে নীলফামারীতে গ্রামের বাড়িতে যাবেন ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মারুফ হোসেন। ট্রেনের টিকিট কাটতে গত রোববার ইফতারের পর এসে রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে লাইনে দাঁড়ান। কিন্তু রোববার টিকিট পাননি। তবু তিনি লাইন ছেড়ে যাননি। গতকাল সোমবার সারা দিনও লাইনে ছিলেন। অবশেষে ৩৮ ঘণ্টা পর টিকিট পেলেন এই তরুণ।
মারুফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সকাল ৯টার দিকে ৪টি নন–এসির টিকিট পেয়েছি। আজকে সেই সোনার হরিণটি মিলল। এত কষ্ট মুখে বলে বোঝানো যাবে না। ইফতার-সাহ্রি সব স্টেশনেই করলাম।’ টিকিট ও বিছানার চাদর হাতে মতিঝিল এলাকার এই বাসিন্দাকে হাসিমুখে কমলাপুর রেলস্টেশন ত্যাগ করতে দেখা যায়।
ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গত শনিবার থেকে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার চতুর্থ দিনে সকাল আটটা থেকে অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়। আজ বিক্রি হচ্ছে ৩০ এপ্রিলের টিকিট। ঈদের সম্ভাব্য তারিখ হচ্ছে ২ মে। ঈদের ছুটি বিবেচনায় গত কয়েক দিনের টিকিটের তুলনায় ৩০ এপ্রিলের টিকিটের চাহিদা অনেক বেশি। ফলে ওই দিনের টিকিট কাটতে রেলস্টেশনে টিকিটপ্রত্যাশীদের ভিড়ও অনেক।
আজ সকালে রাজধানীর কমলাপুর স্টেশনে কাউন্টারগুলোতে টিকিটপ্রত্যাশীদের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। কেউ রাতে স্টেশনে এসেছেন, কেউবা এসেছেন গতকাল রাতে, সন্ধ্যায় বা বিকেলে। লাইনে থাকা ব্যক্তিদের কেউ কেউ কাঙ্ক্ষিত টিকিট কিনতে এসেছেন দেড় দিন আগে।
একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন মো. ইউসূফ। তিনি কমলাপুর রেলস্টেশনে এসেছেন গতকাল সকাল ৯টায়। আজ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তিনি তখনো টিকিট পাননি। ইউসূফ বলেন, ‘২৪ ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছি। টিকিটের ব্যবস্থাপনা অনেক দুর্বল। লাইনে প্রশাসনের লোকজন বহিরাগত ব্যক্তিদের ঢুকিয়ে দিচ্ছে। অফিস থেকে মৌখিক ছুটি নিয়ে এসেছি। চারটি টিকিট দরকার। এসির টিকিটের জন্য এত কষ্ট করা।’
‘অনলাইনে ঢুকতেই পারছি না’
ভোর চারটার দিকে কমলাপুর রেলস্টেশনে এসেছেন রাজধানী শাহবাগের বাসিন্দা মহুয়া পারভীন।
তিনি ঈদে রংপুর যাবেন। চারটি টিকিট প্রয়োজন তাঁর। মহুয়া বলেন, ‘টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে সকাল আটটায়। তবে বিক্রি হচ্ছে অনেক ধীরগতিতে। প্রায় সময়ই বিদ্যুৎ থাকছে না। একজনের টিকিট বিক্রিতে কাউন্টারের কর্মকর্তারা দেরি করছেন। বাসের জার্নিটা আমার অনেক কষ্ট লাগে, যানজটেও পড়তে হয়।’
মহুয়ার অভিযোগ, অনলাইনে তো টিকিটই পাওয়া যায় না। সার্ভারে লগইন করতে অনেক সমস্যা হয়। সার্ভারে একবার প্রবেশ করতে পারলেও টিকিট কাটা যায় না, আসন ফাঁকা দেখায়।
অনলাইন নিয়ে একই ধরনের অভিযোগ করলেন আরেক নারী টিকিটপ্রত্যাশী আশামণি। তিনি দিনাজপুর যাবেন। আজ সাহ্রির আগে দিবাগত রাত তিনটায় রেলস্টেশনে এসে লাইনে দাঁড়ান। তিনি বলেন, ‘টিকিটের লাইন খুব কম আগাচ্ছে। তবু আশা আছে টিকিট পাব। এদিকে সকালে অনলাইনেও বেশ কয়েকবার টিকিট কাটার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি।’
আজ ঈদযাত্রার অগ্রিম টিকিট বিক্রি চলবে বিকেল চারটা পর্যন্ত। স্টেশনে কাউন্টার আছে ২৩টি। এর মধ্যে ১৬টি কাউন্টার থেকে ঈদযাত্রার অগ্রিম টিকিট বিক্রি হচ্ছে।
কাউন্টার থেকে এক ব্যক্তি চারজনের টিকিট কাটতে পারছেন। তবে এর জন্য প্রত্যেক যাত্রীর জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি দিতে হচ্ছে। ঈদযাত্রার প্রতিটি ট্রেনে নারী ও প্রতিবন্ধী যাত্রীদের জন্য একটি করে আলাদা কোচ সংযোজন করা হচ্ছে।