রাজধানীর কলাবাগানের ওয়েস্টার্ন স্ট্রিটের একটি বাড়ির নিচতলায় মেসে থাকা আট শিক্ষার্থীর তিনটি কক্ষের তালা ভেঙে তাদের শিক্ষাসনদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিবন্ধনপত্র, বই–খাতাসহ যাবতীয় মালামাল ময়লায় ফেলে দিয়েছেন বাড়িওয়ালা।
মেসে থাকা শিক্ষার্থীরা জানান, করোনা পরিস্থিতিতে তাঁদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। সারা দেশে লকডাউন হওয়ায় ২০ মার্চের দিকে আট শিক্ষার্থী সবাই তাঁদের কক্ষগুলো তালা মেরে গ্রামের বাড়িতে চলে যান। এ সুযোগে বাড়ির মালিক তাঁদের কক্ষ ভেঙে শিক্ষাসনদসহ সব মালামাল ফেলে দেন। মাত্র ৩৫ হাজার টাকা ভাড়ার জন্য বাড়িওয়ালা এই কাজ করেছেন।
নিউ মার্কেট ও কলাবাগান অঞ্চলের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার মো. আবুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, গত বুধবার গভীর রাতে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থী সজীব মিয়া বাদী হয়ে কলাবাগান থানায় বাড়ির মালিক মুজিবুল হকের বিরুদ্ধে চুরির মামলা করেন। ঘটনার পর ওই বাড়ি মালিক পালিয়ে গেছেন। তিনি একটি ব্যাংকের সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। ফেলে দেওয়া শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সনদসহ মালপত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মামলার বাদী ও ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থী সজীব মিয়া ঢাকা কলেজের ইসলামের ইতিহাসের (সম্মান) চূড়ান্ত বর্ষের ছাত্র। আজ বৃহস্পতিবার তিনি প্রথম আলোকে বলেন, চার বছর ধরে তাঁরা নয়জন শিক্ষার্থী ৪/এ ওয়েস্টার্ন স্ট্রিটের একটি বাড়ির নিচতলার তিনটি কক্ষ ২৫ হাজার টাকায় ভাড়া দেন। তাঁদের মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ ও আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থী রয়েছেন। গত মার্চে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতিতে কলেজ বন্ধ হয়ে যায়। ২৬ মার্চ সারা দেশে লকডাউন হওয়ার পাঁচ-ছয় দিন আগে তাঁরা সবাই গ্রামের বাড়িতে চলে যান। ওই কারণে তাঁরা গত মার্চ মাসের ভাড়া দিয়ে যেতে পারেননি। গত জুনে বাড়ি মালিক তাঁকে ফোন করে এপ্রিল থেকে মে পর্যন্ত তিন মাসের ভাড়া চান।
সজীব মিয়া বলেন, বাড়ির মালিককে তিনি বিদ্যুৎ ও গ্যাসের বিল ছাড়াও বাড়তি কিছু টাকাসহ ১৫ হাজার টাকা বিকাশ করে পাঠিয়ে দেন এবং বলেন তাঁরা ফিরে এসে বাকি টাকা দিয়ে দেবেন। তখন বাড়িওয়ালা তাতে কোনো আপত্তিও করেননি। কয়েক দিন আগে তিনি লোকমুখে জানতে পারেন, ২৫ জুন বাড়ির মালিক তাঁদের তিন কক্ষের তালা ভেঙে বইপত্র-খাতা, ল্যাপটপ, চেয়ার-টেবিল, খাট, লেপ–তোশক, আসবাবপত্র, স্যুটকেস, থালা–কাগজপত্র ফেলে দন। তাঁদের এক রুমমেট মালিকের সঙ্গে সমঝোতা করে তাঁর মালপত্র নিয়ে গেছেন। খবর পেয়ে তাঁরা পাঁচ-ছয়জন শিক্ষার্থী ২৯ জুন ঢাকায় আসেন। কিন্তু বাড়ির মালিক তাঁদের ঢুকতে দেননি। পরে তাঁরা কলাবাগান থানার পুলিশ নিয়ে এলেও তাঁদের ঢুকতে দেননি বাড়ির মালিক।
পরে সজীব মিয়া কলাবাগান থানায় বাড়ি মালিকের বিরুদ্ধে একটি চুরির মামলা করেন।
সজীব মিয়া বলেন, ‘তিন মাসের ভাড়া ৭৫ হাজার টাকা হলেও আমরা এর মধ্যে ৪০ হাজার টাকা বাড়ি মালিককে আগেই দিয়েছিলাম। কাউকে না জানিয়ে বাড়ির মালিক আমাদের সবার শিক্ষাজীবন ও স্বপ্ন ধ্বংস করে দিল। এখন আমাদের শিক্ষাজীবনের মূল্যবান কাগজপত্র বাড়িমালিককে উদ্ধার করে দিতে হবে এবং তার সুষ্ঠু বিচার করতে হবে।’ তিনি জানান, বাড়ি মালিক তাঁদের বাড়িতে ঢুকতে না দেওয়ায় এক দিন রাস্তায় কাটিয়েছেন তাঁরা।
৫০ শিক্ষার্থীর মালামাল গায়েব
একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫০ শিক্ষার্থী তিন মাসের ভাড়া না দেওয়ায় তাঁদের শিক্ষাসনদ ও মালামাল গায়েব করে দিয়েছে পূর্ব রাজাবাজারে আলিফ নামের একটি ছাত্রাবাসের মালিক খোরশেদ আলম। বুধবার গভীর রাতে পুলিশ এ ঘটনায় খোরশেদকে গ্রেপ্তার করেছে।
রাজধানীর গ্রিন রোডের বেসরকারি সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটির ৫০ শিক্ষার্থী রাজাবাজারে আলিফ নামের একটি ছাত্রাবাসে ভাড়া থাকতেন। এ জন্য প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে তিন বেলার থাকা–খাওয়ার খরচসহ সাড়ে চার হাজার টাকা দিতে হতো।
শিক্ষার্থীদের মালামাল গায়েব করার ঘটনায় সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী মো. সোহান বাদী হয়ে কলাবাগান থানায় ছাত্রাবাসের মালিক খোরশেদ আলমের বিরুদ্ধে চুরির মামলা করেন।
সোহান প্রথম আলোকে বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে গত মার্চে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হলে তাঁরা সব শিক্ষার্থী তাঁদের কক্ষে তালা লাগিয়ে বাড়িতে চলে যান। কিছুদিন আগে জানতে পারেন ছাত্রাবাস মালিক খোরশেদ আলম গত এপ্রিল থেকে মে পর্যন্ত তিন মাসের ভাড়া না পেয়ে তাঁদের কক্ষ ভেঙে চেয়ার টেবিল, বই-খাতা, আসবাবপত্রসহ মালামাল সরিয়ে ফেলেছেন। গত বুধবার সকালে ৫০ শিক্ষার্থী সবাই ঢাকায় আসেন। তাঁরা খোরশেদ আলমকে ফোন করলে তিনি এসে বলেন বকেয়া টাকা দিলে মালামাল দেওয়া হবে। শিক্ষার্থীদের চাপে বুধবার রাতে যেখানে মালামাল রাখা হয়েছে, সেখানে তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা দেখতে পান, তাদের প্রত্যেকের সুটকেসের তালা ভাঙা। লেপ–তোশক ছাড়া, কোনো মালপত্রই নেই। পরে রাত ১২টার দিকে শিক্ষার্থীরা কলাবাগান থানায় যান। পরে ছাত্রাবাসের মালিক খোরশেদ আলমের বিরুদ্ধে চুরির মামলা দেন। এরপর পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে।
সোহান জানান, স্যুটকেসে সব শিক্ষার্থীর শিক্ষাসনদ ছিল। লেপ–তোশক ছাড়া তাঁরা কোনো মালপত্রই তারা পাননি। তাঁদের শিক্ষাজীবন ধ্বংস হয়ে গেছে। এখন তাঁরা দিশেহারা।
পুলিশ কর্মকর্তা আবুল হাসান বলেন, খোরশেদ একটি ভবনের কয়েকটি তলা ভাড়া নিয়ে ছাত্রাবাস পরিচালনা করে আসছিলেন। কাল শুক্রবার খোরশেদকে ঢাকা মুখ্য মহানগর আদালতে হাজির করা হবে।