রাজধানীর কমলাপুর স্টেশনে টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ার মিনিট পনেরো পরেই কয়েকটি গন্তব্যের তাপানুকূল চেয়ারের (এসি) টিকিট শেষ হয়ে যায়। কাউন্টার থেকে টিকিট শেষ হওয়ার কথা জানালে এ সময় সারিতে থাকা অপেক্ষমাণ মানুষেরা হইচই করে ওঠেন।
তেমনই একজন রামপুরা থেকে এসেছেন চাকরিজীবী কাওসার আহমেদ। তিনি যাবেন রংপুর। নীলসাগর এক্সপ্রেসের দুটি এসির টিকিট কিনবেন তিনি। স্টেশনে এসেছেন ভোর চারটায়। কাওসার বলেন, ‘এসির টিকিট তো আসলে কাউন্টারেও পাওয়া যায় না, অনলাইনেও পাওয়া যায় না। গতকাল অনলাইনে চেষ্টা করেছি, কিন্তু পারিনি। আজ এ জন্য কাউন্টারে টিকিট নিতে এসেছি, কিন্তু এসির টিকিট পাইনি। টিকিটের অর্ধেক অনলাইনে, অর্ধেক কাউন্টারে। কাউন্টারে প্রথম ১০ থেকে ১২ জনের পরই বলে এসির টিকিট শেষ। ১৫ মিনিটের ব্যবধানে এত এসির টিকিট গেল কই। এত টিকিট কাটল কে?’
গতকাল রাত তিনটায় ফার্মগেট থেকে কমলাপুর স্টেশনে এসে টিকিট কাটার লাইনে দাঁড়িয়েছেন সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আরেফীন। তাঁর অভিযোগ, এসির টিকিট তিনি কাউন্টারেও পাননি, অনলাইনেও পাননি। বললেন, ‘সাহ্রি খেয়ে স্টেশনে এসেছি। সকাল আটটায় অনলাইনে টিকিট বিক্রি শুরু হয়। সার্ভারে লগইন করেছি তখন। কিন্তু সার্ভারে প্রবেশ করতে লেগেছে ২৬ মিনিট। সার্ভারে ঢুকে দেখি টিকিট বিক্রি ততক্ষণে শেষ।’
শাহরিয়ার প্রথম আলোকে বলেন, এভাবে অনলাইনে টিকিট দেওয়ার কোনো মানে হয় না। নীলসাগর এক্সপ্রেসের দুটি এসির টিকিট দরকার ছিল। এখন শোভন চেয়ার টিকিট কিনে ফেরত যেতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে কমলাপুর রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাসুদ সারোয়ার বলেন, ‘আমরা জেনেছি অনলাইনে অনেকে টিকিট কাটতে পারছেন না। এ বিষয়ে সহজ ডটকম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানায়, সবাই যখন সকাল আটটায় টিকিটের জন্য একসঙ্গে সার্ভারে লগইন করে, তখন সার্ভারে সাইবার জ্যাম হচ্ছে। এ কারণে সকাল ১০টা ১০ মিনিট নাগাদ টিকিট পেতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে।’
মোহাম্মদ মাসুদ সারোয়ার আরও বলেন, ‘টিকিট কাটার সময় জন্মনিবন্ধন বা জাতীয় পরিচয়পত্র দেখা হচ্ছে, যাতে টিকিটটা বাইরে বা কোনো কালোবাজারির হাতে না যায়। এ ব্যাপারে আমরা সচেষ্ট। টিকিট অন্য কোথাও পাওয়ার সুযোগ নেই।’
প্রতিবার ঈদ এলে স্টেশনে টিকিট কাটতে ভিড় হয়, টিকিট কাউন্টারের সংখ্যা কেন বাড়ানো হয় না—এমন প্রশ্নের জবাবে স্টেশন ব্যবস্থাপক বলেন, টিকিট কাউন্টারের সংখ্যা পর্যাপ্ত। একটা টিকিটের বিপরীতে কখনো ৭০০ মানুষের চাহিদা। আগে কমলাপুর থেকে সব ট্রেনের টিকিট বিক্রি হতো। এবার সেটি ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। ঢাকার অন্য আরও চারটি স্থান থেকে টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। তবু স্টেশনে মানুষের চাপ নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।
স্টেশনে মানুষের চাপের ব্যাখ্যায় মোহাম্মদ মাসুদ সারোয়ার বলেন, ‘কোনো কোনো পথের ট্রেনে টিকিট ৭০০। এর মধ্যে কাউন্টারে ৩৫০ টিকিট। কিন্তু মানুষ টিকিটের সারিতে দাঁড়িয়েছে প্রায় দুই হাজার। এত চাপ নেওয়া কঠিন। যেহেতু আসনসংখ্যা সীমিত, তাই সীমিতসংখ্যক যাত্রীকে টিকিট দিতে পারব।’
কাউন্টারে টিকিট কেনায় ধীরগতি প্রসঙ্গে স্টেশন ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাসুদ সারোয়ার বলেন, মানুষ টিকিট পাওয়ার জন্য ভোর রাতে বা রাতে এসে দাঁড়িয়েছে। এনআইডি নম্বর নেওয়া হচ্ছে। টিকিট কাটতে গিয়ে একজন যাত্রী অনেক অপশনে সময় নিচ্ছে ফলে দেরি হচ্ছে।
যাত্রার সময় যাত্রীর জন্মনিবন্ধন বা জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাই করা হবে কি না, জানতে চাইলে স্টেশন ব্যবস্থাপক মাসুদ সারোয়ার বলেন, স্টেশনের কর্মকর্তারা, ট্রেনের টিকিট এক্সামিনাররা এটা নিশ্চিত করবেন। যে এনআইডি দিয়ে টিকিট কেনা হয়েছে, যাত্রীর সঙ্গে সে এনআইডি থাকতে হবে। ভ্রমণের সময় যাত্রীকে এনআইডির কপি রাখতে হবে।
কমলাপুর স্টেশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কমলাপুর স্টেশনে সমগ্র পশ্চিমাঞ্চল ও খুলনাগামী ট্রেনের টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশনে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীগামী আন্তনগর ট্রেনের টিকিট এবং তেজগাঁও স্টেশনে ময়মনসিংহ, জামালপুরগামী, দেওয়ানগঞ্জ স্পেশালসহ ওই অঞ্চলের সব আন্তনগর ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে। ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে মোহনগঞ্জ ও হাওর এক্সপ্রেস ট্রেনের এবং ফুলবাড়িয়া পুরোনো রেলওয়ে স্টেশন থেকে সিলেট ও কিশোরগঞ্জগামী আন্তনগর ট্রেনের টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে।