ছয় মাস বয়সে পিতৃহারা হওয়ার পর পিতার বন্ধু ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের কারও কারও সহযোগিতা এবং সর্বশেষ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভালোবাসায় ক্ষত কিছুটা হলেও ভরাট হয়েছিল৷ কিন্তু পৈতৃক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হওয়ার বেদনা তাঁকে মর্মাহত করে৷
১৯৮৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ঢাকার ফুলবাড়িয়ায় পুলিশের ট্রাকচাপায় নিহত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা ইব্রাহিম সেলিমের মেয়ে নুসরাত জাহান ইব্রাহিম ডরোথি এ অভিযোগ করেন গতকাল শুক্রবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে। একই সঙ্গে তিনি ‘ষড়যন্ত্রের হাত থেকে বাঁচার’ আকুতি জানান৷
সংবাদ সম্মেলনে নুসরাত জাহান ইব্রাহিম বললেন, ‘বাবা যখন শহীদ হন, তখন আমার বয়স মাত্র ৬ মাস। আমার মা আমাকে নিয়ে চরম অসহায় জীবন যাপন করেছেন। বিভিন্ন লাঞ্ছনা, বঞ্চনা আর দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে মা আমাকে বড় করে তুলেছেন। আমার চাচা কিংবা বাবার বাড়ির কোনো আত্মীয়স্বজন সহযোগিতার হাত বাড়াননি। ওই চরম দুঃসময়ে আমার বাবার বন্ধু সাবেক সচিব আবদুল মালেক, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিষ্ট্রার বাহাউদ্দিন গোলাপ, বাউফল পৌরসভার মেয়র জিয়াউল হক জুয়েল, বরিশালের সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্নভাবে সাহায্য করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা মমত্ব আর ভালোবাসা দিয়ে আমাকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি দিয়েছেন। তাঁরা আমাকে বরিশালে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিয়েছেন, আমার স্বামীকে চাকরি দিয়ে আমাকে ও আমার পরিবারকে তাঁরা চিরঋণী করেছেন।’
শহীদ-কন্যা নুসরাত জাহান ইব্রাহিমের অভিযোগ, বাবার মৃত্যুর পর থেকে তাঁদের পৈতৃক সম্পত্তি ও অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন। নিকটাত্মীয়রা তাঁকে নানাভাবে হয়রানি করছেন বলে তিনি পটুয়াখালীর বাউফল থানায় সাধারণ ডায়েরিও করেছেন।
১৯৮৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ঢাকার ফুলবাড়িয়ায় পুলিশের ট্রাকচাপায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা ইব্রাহিম সেলিম ও কাজী দেলোয়ার মারা যান। ইব্রাহিম সেলিমের বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার নাজিপুর গ্রামে। কাজী দেলোয়ারের বাড়ি পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার উত্তর পৈকখালী গ্রামে।
সংবাদ সম্মেলনে নুসরাত জাহান ইব্রাহিম ডরোথি বলেন, ৩৬ বছর আগে তাঁর বাবা শহীদ হলেও এই দীর্ঘ সময়ে তাঁর স্মৃতি রক্ষার্থে তেমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারদা সূর্য সেন হলের সামনে ইব্রাহিম সেলিমের একটি ভাস্কর্য স্থাপন এবং তিনি যে রাস্তায় শহীদ হয়েছিলেন, সেই রাস্তাটির (ফুলবাড়িয়া সংলগ্ন) নাম ‘শহীদ সেলিম-দেলোয়ার’ করার দাবি জানান তিনি।