সাংসদ হাজি সেলিমের পরিবারের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আসছে, সেগুলোকে ‘অপবাদ’ বলছে পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীদের একটি সংগঠন। ব্যবসায়ী ঐক্য ফোরাম নামের সংগঠনটি সংবাদ সম্মেলন করে বলেছে, হাজি সেলিম সুখে-দুঃখে তাঁদের পাশে ছিলেন।
পুরান ঢাকার মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির কার্যালয়ে আজ বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে ব্যবসায়ী ঐক্য ফোরাম। এতে মূল বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আবু মোতালেব। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাদের সংবাদ সম্মেলনটি যানজট নিরসন, ট্রেড লাইসেন্সে উৎসে কর প্রত্যাহার ও মূল্য সংযোজন কর আইন (ভ্যাট আইন) নিয়ে ছিল। এতে একটি অংশে হাজী সেলিম পরিবারের প্রসঙ্গটি এসেছে।
নৌ বাহিনীর এক কর্মকর্তাকে মারধরের ঘটনার পর গত সোমবার র্যাব পুরান ঢাকার বড় কাটরায় হাজি সেলিমের বাড়িতে অভিযান চালায়। সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় অস্ত্র, মাদক, দুরবিন, ওয়াকিটকি, ভেরি হাই ফ্রিকোয়েন্সি সেটসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম। মাদক রাখার দায়ে হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিম এখন কারাগারে রয়েছেন। তাঁকে কাউন্সিলর পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছে। এদিকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে হাজী সেলিম ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নানা ‘অপকর্মের’ খবর আসছে। তবে এসব অভিযোগ ‘অপবাদ’ বলে দাবি করে ঐক্য ফোরাম।
লিখিত বক্তব্যে আবু মোতালেব বলেন, হাজি সেলিমকে জড়িয়ে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মতো বিভিন্ন অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এতে পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীদের চলমান ব্যবসা দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ব্যবসায়ীরা হলফ করে ঘোষণা করছি যে, আমাদের কোনো ব্যবসায়ী সমিতি বা সংগঠনে অদ্যাবধি তাঁর (হাজি সেলিম) এবং তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে উল্লিখিত বিষয়ে কোনো অভিযোগ আজও আমরা পাইনি। আমরা এ বিষয়ে গভীর দুঃখ প্রকাশ করছি।’
লিখিত বক্তব্যে হাজি সেলিমের মালিকানাধীন মদিনা গ্রুপকে একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান উল্লেখ করে আবু মোতালেব বলেন, এতে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার কর্মী কাজ করেন। তিনি এসব কর্মীর পরিবারের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বিষয়টি তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত হাজি সেলিম ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার প্রচার থেকে বিরত থাকা জন্য গণমাধ্যমের প্রতি অনুরোধ জানান।
২০১৬ সালে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকরের বিরুদ্ধে কর্মসূচি পালন করে আলোচনায় এসেছিল ব্যবসায়ী ঐক্য ফোরাম। ২০১৭ সালের মে মাসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের পরামর্শক সভায় ভ্যাট আইন নিয়ে তখনকার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে বাহাসে জড়িয়েছিলেন আবু মোতালেব। তিনি তখন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক ছিলেন। পাশাপাশি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। যদিও রাতে আবু মোতালেব প্রথম আলোকে বলেন, তিনি এখন আর রাজনীতি করেন না। সংবাদ সম্মেলনে ৩০টি ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
লিখিত বক্তব্যের শুরুতে জানানো হয়, পুরান ঢাকার চকবাজার থেকে মিটফোর্ড, বেড়িবাঁধ, বাবুবাজার, মৌলভীবাজার, সোয়ারীঘাট, বেগমবাজার, মোগলটুলীতে যানজট নিরসনের এক মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে, যা চলমান রয়েছে। যানজটের কারণে পুরান ঢাকার ব্যবসা হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। এ জন্য স্থানীয় সাংসদ (হাজি সেলিম) আমন্ত্রণে ব্যবসায়ীদের সমন্বয়ে যানজট নিরসনে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। তবে যানজট এখনো পুরোপুরি নিরসন না হওয়ায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সিটি করপোরেশন, পুলিশ কমিশনার ও ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের সহযোগিতা কামনা করা হয়। এ ছাড়া ট্রেড লাইসেন্সে উৎসে কর না কাটা ও ভ্যাটের হার কমানোর দাবি জানানো হয়।