ক্ষমতাসীন দলের সাংসদ হাজি মো. সেলিমের দখল থেকে প্রায় ২০ শতক জমি উদ্ধার করেছে অগ্রণী ব্যাংক। ব্যাংকটির পুরান ঢাকার মৌলভিবাজারের করপোরেট শাখার এই জমি ১০ বছর দখল করে রেখেছিলেন ওই সাংসদ।
অগ্রণী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ গতকাল সোমবার শ্রমিক নিয়োগ করে নিজেদের ওই জমি দখলে নেয়। আজ মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে পুরান ঢাকার ৭৮/১ মৌলভিবাজারে দেখা যায়, ৩৫ থেকে ৪০ জন শ্রমিক ব্যাংকের ওই জমিতে থাকা ইট সরাচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, অবৈধ দখলদারেরা এখানে বহুতল ভবন নির্মাণ করার জন্য খোঁড়াখুঁড়ি করলেও কাজ শুরু করেননি। তবে তাঁরা অগ্রণী ব্যাংকের করপোরেট শাখার দোতলা ভবনটি গুঁড়িয়ে দিয়েছেন।
অগ্রণী ব্যাংকের হেড অব সিকিউরিটি প্রটোকল মেজর (অব.) মো. আসাদুজ্জামান আজ প্রথম আলোকে বলেন, সাংসদ হাজি সেলিম তাঁর স্ত্রী গুলশান আরার নামে জাল দলিল বানিয়ে সরকারি জমি দখল করে নিয়েছিলেন। জমিতে থাকা অগ্রণী ব্যাংকের দোতলা ভবনটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে থাকা ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র গায়েব হয়ে গেছে। তিনি বলেন, সরকারি জমি উদ্ধারে একটি মোক্ষম সুযোগের অপেক্ষায় ছিল ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। গতকাল সোমবার রাতে সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ১০ বছর পর জমিটি অবৈধ দখলমুক্ত করে নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এখন জমির চারদিকে পাকা সীমানাদেয়াল বানিয়ে ভেতরে স্থাপনা নির্মাণ করে এর নিরাপত্তায় আনসার মোতায়েন করা হবে।
ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, এর আগে অগ্রণী ব্যাংকের পক্ষ থেকে জমি উদ্ধারে চকবাজার থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার পাশাপাশি র্যাব-৩-এর টিকাটুলী কার্যালয়ে আবেদন করা হয়। এ নিয়ে ঢাকার যুগ্ম দায়রা জজ আদালতে মামলাও করা হয়েছে।
চলতি বছরের ২০ মে জিডি ও র্যাবের কাছে আবেদন করেন অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের মৌলভিবাজারের করপোরেট শাখার প্রধান সহকারী মহাব্যবস্থাপক বৈষ্ণব দাস মণ্ডল। এতে বলা হয়, অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড রাষ্ট্রমালিকানাধীন দেশের অন্যতম বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক। ১৯৪৭ সালের তৎকালীন হাবিব ব্যাংক, যা ১৯৭২ সাল থেকে অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড মৌলভিবাজার করপোরেট শাখা হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটি বর্তমান ব্যাংকের গুদামঘর ও লকার হিসেবে ব৵বহার করা হচ্ছে। এতে ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ও অর্থসম্পদ সংরক্ষিত আছে। চকবাজারের বড় কাটরার বাসিন্দা হাজি মো. সেলিমের স্ত্রী গুলশান আরা সেলিমসহ অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজন ৭৮/১ মৌলভিবাজারের মালিকানা দাবি করে অবৈধভাবে দখলের চেষ্টা করছেন এবং রাতের বেলা ভবনের প্রাচীর ভেঙে ভবনের ভেতরে ঢোকার পাঁয়তারা করছেন।
জিডিতে আরও বলা হয়, তাঁরা ব্যাংকের কর্মকর্তাদের ভেতরে প্রবেশ করতে বাধা দিচ্ছেন, যা রাষ্ট্রমালিকানাধীন তথা অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের গোডাউন ও লকারে থাকা সম্পদের নিরাপত্তা জন্য হুমকিস্বরূপ। গুলশান আরা সেলিম ও স্বামী হাজি সেলিমের লোকজন ৭৩ বছর ব্যাংকের দখলে থাকা রাষ্ট্রীয় সম্পদ দখল করে সেখানে স্থাপনা তৈরির প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। এ ব্যাপারে জেলা যুগ্ম জজ আদালতে মামলা বিচারাধীন।
এ ব্যাপারে জানতে আজ দুপুর ১২টার দিকে পুরান ঢাকায় হাজি সেলিমের বাড়িতে গেলে ওই ভবনের নিরাপত্তাকর্মী আনোয়ার হোসেনসহ দুজন জানান, তিনি (হাজি সেলিম) বাড়িতে নেই। র্যাবের অভিযানের পর গতকাল রাত ১০টার দিকে তিনি বাসায় ফেরেন। আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তিনি গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেছেন। ভেতরে যেতে চাইলে নিরাপত্তাকর্মীরা বলেন, ভেতরে কথা বলার মতো দায়িত্বশীল কেউ নেই। বাইরের কাউকে ওপরে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।