সেই পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) নবনির্বাচিত মেয়র আতিকুল ইসলাম। তিনি যে পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন, সেই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি জাকির হোসেন পাঠান করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে (কোভিড–১৯) মারা গেছেন এক সপ্তাহও হয়নি। পরিবারটির সব থেকে ছোট দুই বছর বয়সী সদস্যটি ছাড়া অন্যরা সবাই করোনা পজিটিভ। চিকিৎসা নিচ্ছে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে।
আজ মঙ্গলবার প্রথম আলো অনলাইনে ‘পরিবারটি চলবে কীভাবে?’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখে প্রথম আলোর প্রতিবেদকের মাধ্যমে জাকির হোসেন পাঠানের বড় মেয়ে ফাহমিদা পাঠানের মুঠোফোন নম্বর সংগ্রহ করেন আতিকুল ইসলাম। তিনি নিজে ফাহমিদা পাঠানের সঙ্গে ফোনে কথা বলে পরিবারটির পাশে আছেন, তা জানিয়েছেন। কলেজপড়ুয়া ফাহমিদা পাঠান প্রথম আলোকে বলে, ‘মেয়র স্যার নিজে আমার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। বলেছেন, তিনি আমাদের পাশে আছেন। যত দিন আমাদের সহায়তার প্রয়োজন, তিনি সহায়তা দেবেন। আমরা যাতে চিন্তা না করি সে কথাও বলেছেন তিনি। আমরা মেয়র স্যার ও প্রথম আলোর প্রতি কৃতজ্ঞ। প্রথম আলোতে প্রতিবেদন প্রকাশের পর মেয়র ছাড়াও অনেকেই ফোন করে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন।’
আতিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘আমি নিজে ফাহমিদা পাঠানের সঙ্গে কথা বলেছি। আমি পরিবারটির পাশে আছি। আপাতত হাসপাতালে চিকিৎসাসহ অন্যান্য সহায়তা দিয়ে পরিবারটির সদস্যদের সুস্থ করতে হবে। পরে ফাহমিদা পাঠান ও তার অন্য ভাইবোনদের পড়াশোনাসহ সমাজে প্রতিষ্ঠিত করা পর্যন্ত আমি পরিবারটির পাশে থাকব।’
আতিকুল ইসলাম গত ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ডিএনসিসির নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন। কাল বুধবার তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। দায়িত্বে না থাকলেও ২৬ মার্চ থেকে আতিকুল ইসলাম নিজ উদ্যোগে করোনার কারণে দুস্থ পরিবারদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ শুরু করেন। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ৫০ হাজার পরিবারকে স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন। বিডি ক্লিন নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এই সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার কাজ করেছে। উত্তর সিটি ছাড়াও ঢাকার অন্যান্য অঞ্চল এবং গাজীপুর, নরসিংদীর বিভিন্ন জায়গায় তিনি অসহায় পরিবারকে ত্রাণ দেন।
আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি করোনাভাইরাসের বিস্তারের পর এ পর্যন্ত সারা দেশের ১০০টি পরিবারের চার মাসের খাদ্যসহায়তা দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছি। বিডি ক্লিনের স্বেচ্ছাসেবকেরা পরিবারগুলোর কাছে আমার সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছেন। এত পরিবারকে দীর্ঘমেয়াদে সহায়তা করা আমার একার পক্ষে সম্ভব নয়। ফাহমিদার পরিবার নিয়ে মোট পরিবারের সংখ্যা দাঁড়ালে ১০১। তবে ফাহমিদাদের পরিবারটি আলাদা, ওদের যত দিন, যত ধরনের সহায়তা প্রয়োজন হবে, আমি তা দেব।
করোনায় মৃত্যুভয়ের পাশাপাশি সামনের দিনগুলো কীভাবে পাড়ি দেবেন, সে চিন্তায় অস্থির হয়ে ছিলেন জাকির হোসেনের স্ত্রী ও সন্তানেরা। জাকির হোসেন পরিবার নিয়ে থাকতেন কেরানীগঞ্জে। পুরান ঢাকায় চাল–ডালসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রির একটি দোকানে কাজ করে জাকির হোসেন সামান্য বেতন পেতেন। গতকাল সোমবার টেলিফোনে জাকির হোসেন পাঠানের স্ত্রী শাহনাজ বেগম জানান, তিনি নিজে এবং ১৭ বছর বয়সী মেয়ে ফাহমিদা, ১৪ বছর বয়সী ছেলে মুজাহিদ, ১২ বছর বয়সী মেয়ে জান্নাতুল—সবার করোনা পজিটিভ। শুধু দুই বছর বয়সী ছেলে জুনায়েদের করোনা নেগেটিভ এসেছে। জুনায়েদের নানা–নানি এসে জুনায়েদকে চাঁদপুরে নিয়ে গেছেন।
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিল আহমদ টেলিফোনে বলেছেন, পরিবারটি যত দিন হাসপাতালে আছে, তত দিন চিকিৎসাসহ অন্য কিছু নিয়ে চিন্তার কিছু নেই।