বড় একটা সাইনবোর্ডে নার্সারির নাম লেখা ‘গ্রীন ঢাকা উত্তরা’। এই নামের নিচেই ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) লোগো। লোগোর পাশে নার্সারির অনুমোদন ও তত্ত্বাবধানকারী হিসেবে ডিএনসিসির নাম।
এই দৃশ্য উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরের রানাভোলা সড়ক–সংলগ্ন সরকারি খালি জায়গার। সিটি করপোরেশনের নাম ভাঙিয়ে দীর্ঘদিন ধরে এভাবে নার্সারির ব্যবসা করছেন এম এ মাসুম বিল্লাহ নামের এক ব্যবসায়ী।
ডিএনসিসির ভাষ্য, ওই নার্সারিতে ডিএনসিসির অনুমোদন বা তত্ত্বাবধান কোনোটিই নেই। তবে নার্সারির মালিক বলছেন, ডিএনসিসির অনুমোদন রয়েছে। স্থানীয় দুজন কাউন্সিলর তাঁর নার্সারি দেওয়ার বিষয়ে অবগত। আর নার্সারির জন্য ডিএনসিসি ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আফছার খানের লিখিত অনুমতিও রয়েছে।
লিখিত অনুমতির বিষয়ে কাউন্সিলর আফছার খান জানান, খালি জায়গায় বস্তি ছিল। বস্তি উচ্ছেদের পর উচ্ছেদ করা জায়গা যাতে বেদখল না হয়, সে উদ্দেশ্যে নার্সারির ব্যবহারের জন্য অস্থায়ী অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সেটা কোনো লিখিত অনুমতি নয়। ডিএনসিসির কোনো অনুমতিও নেই। যেকোনো সময় নার্সারি উঠিয়ে দেওয়া যাবে।
নার্সারির মালিক মাসুম বিল্লাহ বলেন, ‘মেয়র আনিস (প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক) থাকতে আমাদের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। বস্তি উচ্ছেদের পর জায়গা দখল হয়ে যায়। এ জন্য মেয়র নিজেই বলেছিলেন নার্সারি করে কাজ করতে।’ নার্সারিতে স্কুলের বাচ্চাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় জানিয়ে তিনি বলেন, বিভিন্ন সময় তাঁরা স্কুলের শিক্ষার্থীদের নার্সারিতে প্রশিক্ষণ, বাসার ছাদে বাগান করা নিয়ে কর্মসূচি, সড়ক বিভাজনে গাছের চারা রোপণ ও চারার যত্ন এবং সরকারি-বেসরকারি বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে থাকেন। ডিএনসিসির পক্ষে কাউন্সিলরের লিখিত অনুমতি, ট্রেড লাইসেন্সসহ বৈধ বিদ্যুৎ–সংযোগ রয়েছে বলেও তিনি জানান।
ডিএনসিসির পরিবেশ সার্কেলের প্রকৌশলীরা জানান, ২০১৬ সালে প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের সময়ে ঢাকায় সবুজের সমারোহ ফিরিয়ে আনতে পাঁচ লাখ গাছের চারা বিতরণের কর্মসূচি শুরু হয়েছিল। তখন আনুষ্ঠানিকভাবে কর্মসূচির নাম দেওয়া হয়েছিল ‘সবুজ ঢাকা’ প্রকল্প। ২০১৮ সালের মধ্যে তিন বছরে ডিএনসিসি এলাকায় ৫ লাখ গাছ রোপণের পরিকল্পনা ছিল।
নার্সারির বিষয়ে সংস্থাটির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তারিক বিন ইউসুফ বলেন, নার্সারিটি অবৈধ। ডিএনসিসি থেকে ওই নার্সারির জন্য কোনো অনুমোদন দেওয়া হয়নি। সিটি করপোরেশন নার্সারির কোনো তত্ত্বাবধানও করে না।
উল্লেখ্য, সবুজ ঢাকা প্রকল্পে ডিএনসিসির কোনো বরাদ্দ ছিল না। মেয়র তাঁর ব্যক্তিগত উদ্যোগে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রকল্পের কাজ করতেন। তাঁর মৃত্যুর পরে ওই প্রকল্পে আর কোনো বরাদ্দও রাখা হয়নি।