সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণ নির্মম রসিকতা: আনু মুহাম্মদ

রাজধানীর শাহবাগে ‘প্রাণ প্রকৃতি ধ্বংস করে বাণিজ্যিক স্থাপনা বন্ধ করো সিআরবি বাঁচাও’ শীর্ষক প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশের আয়োজন করে সমগীত সংস্কৃতি প্রাঙ্গণ। ঢাকা, ১৮ সেপ্টেম্বর।
ছবি: দীপু মালাকার

শত বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্যসমৃদ্ধ সিআরবি এলাকা চট্টগ্রামের মানুষের মানসিক প্রশান্তির জায়গা। এখানে রয়েছে শতবর্ষীসহ শত শত গাছ। আছে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধি। এ সিআরবিকে রক্ষার দাবিতে গান, আবৃত্তি, পথনাটক ও বক্তব্য দিয়ে একজোট হয়েছেন দলমত–নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষ। রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে আজ শনিবার বিকেল থেকে চলে এই আয়োজন।

‘প্রাণ প্রকৃতি ধ্বংস করে বাণিজ্যিক স্থাপনা বন্ধ করো সিআরবি বাঁচাও’ শীর্ষক এ প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশের আয়োজন করে সমগীত সংস্কৃতি প্রাঙ্গণ। অনুষ্ঠানে একে একে চলতে থাকে পথনাটক মঞ্চায়ন, কবিতা আবৃত্তি ও প্রতিবাদী গান। এর ফাঁকে চলতে থাকে বক্তব্য।

সমাবেশে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, প্রকৃতি নষ্ট করে এ ধরনের প্রকল্প অবিশ্বাস্য। চট্টগ্রাম শহরে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার মতো যে জায়গা, সেটিকে নষ্ট করে অসুস্থতা দূর করার জন্য হাসপাতাল বানানো হচ্ছে—এর চেয়ে নির্মম রসিকতা আর হতে পারে না। ব্যক্তিমুনাফা রক্ষা করার দায়িত্ব তো সরকারের নয়।

আনু মুহাম্মদ বলেন, দেশে জনগণের সম্পদ মুনাফাভিত্তিক ব্যক্তিমালিকানার অধীনে নিয়ে যাওয়ার যে প্রক্রিয়া চলছে, এটা তারই একটা অংশ। এটা কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত হতে পারে না। হাসপাতাল বানানোর জন্য বহু জায়গা পড়ে আছে। বেসরকারি হাসপাতাল বানানোর জন্য সরকারের অস্থিরতা বা গোঁয়ার্তুমি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

বিকেল চারটার দিকে চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ‘সবুজ বুকে রক্ত মেখে উন্নয়নের শব্দ জপে হাসপাতালের কৃত্রিমতা চাই না’ শীর্ষক প্রতিবাদী গানের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। এরপর ইশরাত শিউলি কবিতা আবৃত্তি করেন।
আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, এমন একটি জায়গায় হাসপাতালটা করা হচ্ছে, যাকে বলা হয় চট্টগ্রামের ফুসফুস। সেখানে কেন হাসপাতাল বানাতে হবে? সরকার দখলের জন্য যখন মৌন ভূমিকা পালন করে, তখন বিচার চাওয়ার জায়গা সংকুচিত হয়।

জ্যোতির্ময় বড়ুয়া আরও বলেন, ‘ভূমি দখলের ধারণা এত দিন আমাদের ছিল যে ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান ভূমি দখল করে। এখন যে পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে, সেটি হলে তথাকথিত উন্নয়নের বিরোধিতা সারা জীবন আমরা করব।’

সিআরবি রক্ষা মঞ্চের সমন্বয়ক মাহফুজুর রহমান বলেন, সিআরবির ওই জায়গা ৬০০ কোটি টাকার সম্পত্তি। সিআরবি চট্টগ্রামের ফুসফুস। সেখানে কোনো স্থাপনা করা যাবে না, আইনে আছে। তবু সেখানে হাসপাতাল স্থাপনের কাজ চলছে।

গণসংহতি আন্দোলনের সংগঠক আবুল হাসান বলেন, চট্টগ্রামের মুক্ত এলাকা দখল করা হচ্ছে। এটা অগণতান্ত্রিক ফ্যাসিবাদী সরকারের সিদ্ধান্তের একটা অংশ। এ জমির মালিক খোদ রেলওয়ে। তাদের এই জায়গা রক্ষা করা দরকার, সেই রেলওয়ে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কাছে দিচ্ছে। প্রাকৃতিক হাসপাতাল নষ্ট করে হাসপাতাল করছে।

সমাবেশে সমগীত সংস্কৃতি প্রাঙ্গণ, বটতলা, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, লীলা ব্যান্ড ও মাদল গান, নাচ, আবৃত্তি, পারফর্মিং আর্টসহ সাংস্কৃতিক পরিবেশন করে। পাশাপাশি ছিল উন্মুক্ত প্রতিবাদী ছবি আঁকা।

সমাবেশে গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক হারুনুর রশীদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।