সাড়ে পাঁচ বছর বয়সী সৌরদীপ্তের গান

সৌরদীপ্তের বয়স মাত্র সাড়ে পাঁচ বছর। তার মাথায় অনেক চিন্তা। টাইটানিক জাহাজ যখন ডুবে যাচ্ছিল, তখন কেউ আসেনি যাত্রীদের বাঁচাতে? তার আঁকা ছবিতে টাইটানিক জাহাজের কাছেই সমুদ্রে একজন মানুষকে গোসল করতে দেখা গেল। সমুদ্র হয়েছে তো কী হয়েছে, এখানে কেন গোসল করতে পারবে না?

তবে সৌরদীপ্ত যখন গান গাইতে বসে তখন অন্য এক চেহারা। তার ইংরেজি ও মেলোডি গান গাইতে ভালো লাগে। গানের কথা মুখস্থ। সুর-তালে ভুল করে ফেললে তা–ও বুঝতে পারে।

কিন্তু সৌরদীপ্তের মাথায় তো অনেক চিন্তা। তাই প্রথম আলোর স্টুডিওতে বসে গান গাওয়ার সময়ও চিন্তাগুলো ঘুরপাক খেতে থাকে। এই মাইক্রোফোনটা এত ছোট কেন, স্টুডিওতে একসঙ্গে দুটো দরজা কেন? স্টুডিওতে গানের সঙ্গে মিউজিক হচ্ছে না কেন? দুই–তিনটি গান গাওয়ার পর জানিয়ে দিল, তার আর গান গাইতে ভালো লাগছে না।

সৌরদীপ্তের বয়স মাত্র সাড়ে পাঁচ বছর। ছবি: হাসান রাজা।

এই ছোট্ট সৌরদীপ্তের গানের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ব্যবহারকারীদের অনেকেই পরিচিত হয়ে গেছেন। তার বাবা নাসির উদ্দিন ছেলের গাওয়া একটি গান ফেসবুকে শেয়ার করেছিলেন ২৪ অক্টোবর। তারপর থেকে তাতে লাইক ও শেয়ারের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। ৪ লাখের বেশি বার ভিউ হয়েছে শুধু নাসির উদ্দিনের পেজে।

গান গাইতে বসলে সৌরদীপ্তের চেহারা ভিন্ন। তার ইংরেজি ও মেলোডি গান গাইতে ভালো লাগে। গানের কথা মুখস্থ। সুর-তালে ভুল করে ফেললে তা–ও বুঝতে পারে। ছবি: হাসান রাজা।

নাসির উদ্দিন জানালেন, তাঁর দুই ছেলে। সৌরদীপ্ত বড়। অন্য বাবাদের মতো তিনিও দুই ছেলের বিভিন্ন ছবি, ভিডিও ফেসবুকে শেয়ার দেন। তেমন কিছু না ভেবেই সৌরদীপ্তের গানের ভিডিও শেয়ার করেছিলেন তিনি। তারপরই অবাক হওয়ার পালা। অনেকেই তাঁর ছেলের গান পছন্দ করছেন। ঢাকার বাইরে থেকে ফোন দিয়ে ছেলেকে দোয়া করছেন। ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপ ছেলের গান শেয়ার করছে।

নাসির উদ্দিন বললেন, ‘ছেলে মেলোডি গান বেশি পছন্দ করে। অনেক সময় দেখা যায়, ছেলে আমার বাবার আমলের গান পছন্দ করছে। সে তার নিজের পছন্দেই গান সিলেক্ট করে। বাসায় সব ঘরে সাউন্ড সিস্টেম লাগানো। সব ধরনের গান বাজে। ছেলের মা ও আমি গান নিয়ে আলোচনা করি।’

নাসির উদ্দিন ও তাঁর স্ত্রী শুভশ্রী সরকার রাজশাহীতে চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে পাস করেছেন। দুজনই গান পছন্দ করেন এবং গাওয়ার চেষ্টা করেন। বর্তমানে দুজনই রাজধানীর উত্তরায় দিল্লি পাবলিক স্কুলে (ডিপিএস) শিক্ষকতা করছেন। সৌরদীপ্ত স্কুলটির কেজি শ্রেণিতে পড়ছে।

শুভশ্রী সরকার জানালেন, তাঁর মা সুস্মিতা দাস রাজশাহীতে রেডিওর একজন শিল্পী ছিলেন। শুভশ্রী ও নাসির উদ্দিনের গানের নেশা থাকলেও সেভাবে গাওয়া হয় না। তবে বাসায় তবলা, হারমোনিয়াম, গিটার, তানপুরাসহ গানের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি রাখা আছে। স্বামী-স্ত্রীর দুজনেরই ইচ্ছা, ছেলেরা গান পছন্দ করলে তাদের সংগীত নিয়েই পড়াশোনা করাবেন।

নাসির উদ্দিন বললেন, ‘সৌরদীপ্ত যখন ওর মায়ের পেটে, তখন থেকেই বিভিন্ন গান বাজানো হতো। জন্মের দুই বছরের মাথায় বুঝতে পারি, সৌরদীপ্তের গলায় সুর আছে। তারপর উৎসাহটা বাড়ে। গান নিয়ে নিজেদের অপূর্ণ ইচ্ছাটা ছেলেরা যদি পূরণ করে, সে আশায় আছি। তাই বাসার পুরো আবহটাই গানকে ঘিরে সাজানো হয়েছে। কয়েক মাস ধরে বাসায় একজন মিউজিক কম্পোজার সৌরদীপ্তের মেন্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।’

নাসির উদ্দিন ও তাঁর স্ত্রী শুভশ্রী সরকার রাজশাহীতে চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে পাস করেছেন। তাঁদের দুই ছেলে, সৌরদীপ্ত ও নক্ষত্র অর্চি। ছবি: হাসান রাজা।

নাসির উদ্দিন আরও বললেন, ‘ছেলেরা মুঠোফোনসহ বিভিন্ন ডিভাইসের দিকে যাতে না ঝুঁকে, সে জন্যও গানটাকে গুরুত্ব দিচ্ছি। বাইরে মাঠে ওদের খেলতে নিয়ে যাই। চেষ্টা করছি তাদের একটু অন্যভাবে বড় করতে।’

সৌরদীপ্তের এত কিছু বোঝার বয়স হয়নি। তার মা শুভশ্রী হাসতে হাসতে বললেন, স্কুলের দোতলা থেকে সুইমিং পুল দেখা যায়। সৌরদীপ্ত সামনে নতুন ক্লাস করবে দোতলায়। তাই সে খুব খুশি। কেননা, কষ্ট করে সুইমিং পুলে যেতে হবে না, দোতলা থেকেই সে সুইমিং পুলে লাফ দিতে পারবে!

আর সৌরদীপ্তের ছোট ভাই এক বছর বয়সী নক্ষত্র অর্চি এখনই ভাইয়ের গানের ভক্ত বনে গেছে। ভাইয়ের গান শুনলেই দুষ্টুমি বন্ধ করে গানের তালে তালে নাচতে থাকে সে।