দশ দিনের ব্যবধানে রাজধানীর পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩০ জন চিকিৎসকসহ সর্বমোট ৬১ জন স্বাস্থ্যকর্মী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। আর হাসপাতালটির মোট ৩৭০ জন চিকিৎসকের মধ্যে বর্তমানে কোয়ারেন্টিনে আছেন আরও ৬০ জন। প্রথম আলোকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন ওই হাসপাতালের করোনা ইউনিটের সমন্বয়ক চিকিৎসক অসীম চক্রবর্তী।
অসীম চক্রবর্তী বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে বর্তমানে ৩০ জন চিকিৎসক, ১৬ জন নার্স এবং ১৫ জন হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে দুজন চিকিৎসকসহ ছয়জন ঢাকার অন্যান্য হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অন্যরা বাসায় আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।’
করোনা ভাইরাসের উপসর্গ থাকার পরও তা গোপন করে তিনজন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হওয়ায় এত চিকিৎসক, নার্সসহ অন্যান্যরা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে মনে করেন অসীম চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘চলতি মাসের শুরুর দিকে নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা দুজন রোগী প্রথমে নিজেদের ভুল ঠিকানা দেন এবং করোনার উপসর্গ থাকার কথা লুকিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। একজন রোগী ভর্তি হয়েছিলেন সার্জারি বিভাগে এবং অন্যজন প্রসূতি বিভাগে। সম্প্রতি আরও একজন রোগী করোনা উপসর্গ থাকার কথা লুকিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে চিকিৎসকদের সন্দেহ হলে তিন রোগীর করোনা শনাক্তের পরীক্ষা করা হয়। তখন প্রত্যেকের ক্ষেত্রে করোনা ভাইরাস পজিটিভ হয়। মূলত এই তিনজন রোগীর সংস্পর্শে যেসব চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ডবয়সহ অন্যান্য স্টাফরা এসেছিলেন, তাঁরাই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।’
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত একজন চিকিৎসক বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালের চিকিৎসকসহ অন্যদের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। আমাদের কাছ থেকে আমাদের পরিবারের সদস্যরা আক্রান্ত হচ্ছে। আমরা কঠিন সময় পার করছি। আমরা যারা বাসায় অবস্থান করছি, প্রতিবেশীদের বিরূপ আচরণ সহ্য করতে হচ্ছে।’
করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য সরকার নির্ধারিত হাসপাতালের তালিকাই নাম নেই স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতাল। তবে হাসপাতালটিতে পাঁচ শয্যার একটি করোনা আইসোলেশন ইউনিট চালু রয়েছে।
করোনা ইউনিটের সমন্বয়ক অসীম চক্রবর্তী বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালটি সরকার নির্ধারিত করোনা রোগীদের চিকিৎসা কেন্দ্র নয়। তবে আমাদের হাসপাতালে করোনা আইসোলেশন ইউনিট রয়েছে। বিদেশি নাগরিকদের কেউ যদি বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হন, তাদের চিকিৎসার জন্য আমাদের হাসপাতালে আগে একটি আইসোলেশন ইউনিট খোলা হয়।’
মিটফোর্ডে করোনার পরীক্ষা চালু
গত উনিশ দিন ধরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, এমন সন্দেহভাজনদের নমুনা সংগ্রহ করে আসছে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতাল। কর্তৃপক্ষ বলছে, এখন পর্যন্ত হাসপাতালটি ৮৫২ জনের নমুনা সংগ্রহ করে।
করোনা ইউনিটের সমন্বয়ক অসীম চক্রবর্তী বলেন, ‘চলতি মাসের ৭ এপ্রিল থেকে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, এমন সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের নমুনা সংগ্রহ করে আসছি। করোনার উপসর্গ নিয়ে আসা যে কোনো ব্যক্তি, আমাদের হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা সেবা নিতে পারেন। এদের মধ্যে যারা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, আমরা যাদের সন্দেহ করছি, তাদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরে এসব নমুনা পরীক্ষার জন্য ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ল্যাবরেটরি মেডিসিনে পাঠিয়ে দিই। সেখান থেকে পরের দিন আমাদের কাছে করোনা ভাইরাস শনাক্তের ফলাফল হাতে আসে।’
চিকিৎসক অসীম চক্রবর্তী আরও বলেন, ‘করোনা উপসর্গ নিয়ে আমাদের হাসপাতালে আসা ব্যক্তিদের অধিকাংশ কিন্তু পুরান ঢাকার বাসিন্দা। তাদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। তবে আমাদের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা ভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষার কার্যক্রম আজ রোববার থেকে শুরু হয়েছে।