সরদার ফজলুল করিম একজন আলোর পথযাত্রী

সরদার ফজলুল করিম। জন্ম : ১মে ১৯২৫, বরিশাল। মৃত্যু : ১৫ জুন, ২০১৪
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

পরবর্তী প্রজন্মের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করতে প্রস্তুত হতে বলেছিলেন সরদার ফজলুল করিম। নিজের জীবন দিয়ে সে উপদেশ সত্য প্রমাণ করে গেছেন তিনি। সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মুখে বাংলাদেশে সমাজতন্ত্রের শক্ত ঝান্ডা ধরেছিলেন একজন সরদার ফজলুল করিম।  

আজ বুধবার মনীষী সরদার ফজলুল করিমের অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকী। এ উপলক্ষে সরদার ফজলুল করিম স্মৃতি পরিষদ আয়োজিত স্মরণসভায় বক্তাদের আলোচনায় উঠে আসে এসব কথা।

জাতীয় প্রেসক্লাবের মিলনায়তনে এ স্মরণসভায় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘সরদার ফজলুল করিম কমিউনিস্ট ছিলেন বলেই সার্থক মানবপ্রেমিক, আর তাই সার্থক জ্ঞানতাপস। জীবনের সূক্ষ্ম বিষয়গুলো সামগ্রিকভাবে তিনি দেখতে ও দেখাতে পারতেন।’

এক মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় স্মরণসভা

সরদার ফজলুল করিমকে ষাটের দশকের বাতিঘর বলে অভিহিত করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম। ‘চিন্তা করো উচ্চপর্যায়ে, আর জীবন যাপন করো সাধারণভাবে’—এই আপ্তবাক্যের সবচেয়ে ভালো উদাহরণ সরদার ফজলুল করিম বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সংবাদ পত্রিকায় সরদার ফজলুল করিমের লেখা ‘ব্যক্তিগত দিনলিপি’ পাঠের অনুভূতির বর্ণনা দিয়ে বক্তব্য শুরু করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক কাবেরী গায়েন। তিনি বলেন, ‘ব্যক্তিগত কথার মধ্য দিয়ে কত সহজে একটি জনপদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া যায়, সে অভিজ্ঞতা হয়েছিল তাঁর লেখা পাঠ করে। সরদার ফজলুল করিম এই জনপদের দার্শনিক।’

কাবেরী গায়েন আরও বলেন, ‘কমিউনিস্ট এই নেতা জ্ঞানের সঙ্গে মায়া জড়িয়ে বক্তব্য রাখতেন। কথা শেষ হওয়ার পরও সে কথার রেশ থেকে যেত মানুষের মনে। তাই এমন দার্শনিকের মৃত্যু নেই।’

জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমির (নায়েম) উপপরিচালক স্বপন কুমার নাথ তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘পরবর্তী প্রজন্মকে বাঁচাতে হলে নিজেকে উৎসর্গ করার কথা বলেছিলেন সরদার ফজলুল করিম। তিনি সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন জীবনকে। তাঁর মতো নিষ্ঠাবান ও দায়িত্বশীল মানুষ খুব কম দেখেছি।’

ষাটের দশকে সাংবাদিক-সাহিত্যিক সন্তোষ গুপ্ত আর সরদার ফজলুল করিমের একসঙ্গে কারাবন্দী হওয়ার স্মৃতিচারণা করলেন চিকিৎসক কাজী তামান্না। চার বছর পর কারামুক্ত হয়েও নিজের বিশ্বাসে সরদার ফজলুল করিম কতখানি অটল ছিলেন, সে বর্ণনা দেন তিনি।

আয়োজনের শেষ দিকে হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবৃত্তি পরিষদের শিক্ষার্থীরা সমবেত কণ্ঠে পাঠ করেন শামসুর রাহমানের লেখা কবিতা ‘অসামান্য সরদার ফজলুল করিম’ আর জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিদ্রোহী কবিতার অংশ।

স্মরণসভায় বিশিষ্টজনদের পাশাপাশি এই সময়ের তরুণেরা বক্তব্য দেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, সরদার ফজলুল করিমের জীবন ও কাজ কেন তাঁদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তরুণ এই প্রতিনিধিরা বলেন, তাঁর বক্তব্য ও ভাবনার ভেতর অসংগতি ছিল না। স্পষ্ট চিন্তার এ মনীষীর দেখানো পথ তাঁদের জন্য অনুপ্রেরণার।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন উদীচীর সভাপতি বদিউর রহমান, চিকিৎসক শাকিল আখতার। শিক্ষাবিদ এম এম আকাশ, সাংবাদিক মশিউল আলম ছাড়াও স্মরণসভায় উপস্থিত ছিলেন সরদার ফজলুল করিমের অনুরাগীরা।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার। প্রথমেই এক মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে স্মরণ করা হয় সরদার ফজলুল করিমকে। তাঁর জীবনী নিয়ে তথ্যচিত্র প্রদর্শনের পর শুরু হয় আলোচনা সভা।