স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসেও বিজ্ঞানশিক্ষায় দেশ পিছিয়ে। বাংলাদেশ এক নিদারুণ দুঃসময় পার করছে। দেশে এখন বিজ্ঞানশিক্ষার জন্য শিক্ষককে কারাভোগ করতে হয়। একটা ভয়ের সংস্কৃতি চলছে। মানুষ মুক্তভাবে কথা বলতে পারে না। অথচ একটি বিজ্ঞানমনস্ক জাতিই পারে সমাজকে প্রগতির দিকে এগিয়ে নিতে।
উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর ২২তম জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন শিক্ষাবিদ, সংস্কৃতিকর্মীসহ বিশিষ্টজনেরা। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর গুলিস্তানে মহানগর নাট্যমঞ্চে উদীচীর এ অনুষ্ঠান হয়।
সভাপতির বক্তব্যে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি সফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, মানুষের সবচেয়ে বড় গুণ, সে সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাবে প্রগতির দিকে। উদীচী মনে করে, মানুষের মুক্তির জন্য উদীচীর আবির্ভাব। উদীচীর কোনো ভয় নেই।
উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সহসভাপতি বদিউর রহমান বলেন, আজ বাংলাদেশের বদন মলিন। সাম্প্রদায়িকতা, অসাম্যসহ নানান ভেদ সমাজে তৈরি হয়েছে। এটা দূর করা দরকার।
দেশের মানুষের মধে৵ সাংস্কৃতিক চর্চা কমে গেছে বলে মন্তব্য করে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ বলেন, সংস্কৃতিচর্চার মাধ্যমে মৌলবাদকে রুখে দিতে হবে। অশ্লীল যেসব কাজ হচ্ছে, সেগুলোকে রুখে দিতে পারে সংস্কৃতিচর্চা।
শিক্ষাবিদ মুহাম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, একজন বিজ্ঞান শিক্ষককে বিজ্ঞানের ভাষায় পড়ানোর জন্য জেলে যেতে হলো। এটা খুবই দুঃখজনক। যত দিন পর্যন্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ হবে না, বিজ্ঞানশিক্ষা চর্চা বাড়বে না, তত দিন যত শিক্ষাই শেখানো হয়, তা কাজে আসবে না। একটি বিজ্ঞানমনস্ক জাতিই সমাজকে এগিয়ে নিতে পারে।
আরেক শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, দেশে উগ্রতা, সাম্প্রদায়িকতা বেড়েছে। একটা ভয়ের সংস্কৃতি চলছে। মানুষ মুক্তভাবে নিজের কথাগুলো বলতে পারে না। বিজ্ঞান শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে সহজ বিষয় নিয়ে কথা বলতে পারেন না। এভাবে চলতে থাকলে শিক্ষা, সংস্কৃতি সম্পূর্ণভাবে অকার্যকর হবে। সংস্কৃতির একটা প্রতিরোধ গড়তে হবে।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, রাষ্ট্রের অসাম্প্রদায়িক চরিত্রে পরিবর্তন আনতে হবে। আর এ পরিবর্তন বিজ্ঞান শিক্ষার কথা বলবে। এ পরিবর্তনে একটি সাংস্কৃতিক জাগরণ দরকার, যার নেতৃত্ব দেবে রাজনৈতিক দলগুলো। নইলে রাষ্ট্র অসাম্প্রদায়িক হবে না।
প্রগতি লেখক সংঘের সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া বলেন, উদীচী না থাকলে বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের মুক্তি হতো না। সমাজে উদীচী যে আলো ছড়াচ্ছে, তা আরও সুদূরপ্রসারী করতে হবে।
চারণ সংস্কৃতি কেন্দ্রের সমন্বয়কারী নিখিল দাস বলেন, ‘যাঁরা বিবেকবান, ন্যায়ের পথে, সত্যের পথে কথা বলেন, যাঁরা মুক্তমনা, তাঁদের ডিজিটাল নিরাপত্তার খড়্গের তলে পড়তে হচ্ছে। নারীরা কী পোশাক পরবেন, তা–ও মৌলবাদীরা ঠিক করে দিচ্ছে। এমন একটা দেশে আমাদের বসবাস।’
দেশে লোকজ অনুষ্ঠান কমে গেছে উল্লেখ করে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার বলেন, জনগণের ব্যক্তিস্বাধীনতা নেই। উৎসবের দেশ আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। গান গাওয়ার অপরাধে জেলে যেতে হয়, বাউলদের চুল-দাঁড়ি কেটে কোণঠাসা করা হচ্ছে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে দেশ এমন হতে পারে ভাবাই যায় না।
২২তম জাতীয় সম্মেলন উদ্বোধন করেন ধর্ম অবমাননার অভিযোগে কারাভোগ করা মুন্সিগঞ্জের বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল। তিনি বলেন, পাঠ্যপুস্তকে অপসংস্কৃতি ঢুকে গেছে। বিজ্ঞানকে ভূলুণ্ঠিত করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে।
উদ্বোধনী ও আলোচনা পর্ব শেষে একটি শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি গুলিস্তানের জিরো পয়েন্ট হয়ে আবার মহানগর নাট্যমঞ্চে শেষ হয়। এরপর চলে উদীচীর শিল্পীদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।