রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ফলের দোকানে বিক্রি হচ্ছে পাকা আম। ফুটপাতে, ঝুড়িতে, ভ্যানে করেও বিক্রি হচ্ছে ভূরি ভূরি পাকা আম। ক্রেতারা আম কিনছেন। অনেক ক্রেতা বলছেন আম সুস্বাদু নয়। ভেতরে নরম হলেও নেই পাকা আমের স্বাদ। অনেক বিক্রেতার দাবি, এগুলো রাজশাহীর আম। তবে আম গবেষকেরা বলছেন, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁর সুস্বাদু আমের জন্য অপেক্ষা করতে হবে চলতি মাসের শেষ পর্যন্ত। মে মাসের শেষ ও জুনের প্রথম দিকে পাওয়া যাবে এই আম।
রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার জগন্নাথপুর, বসুন্ধরা রোডে ঝুড়িভর্তি পাকা আম বিক্রি করছিল কিশোর শরিফুল ইসলাম। কী জাতের আম ও দাম কত জানতে চাইলে বলল, এটা গোবিন্দভোগ। কেজি প্রতি দাম ১৫০ টাকা।
মো. হারুন নামের এক ক্রেতা বললেন, এখন যে আম পাওয়া যাচ্ছে, তাতে একদম টেস্ট নেই। তিনি জানান, তিন দিন আগে ২০০ টাকা কেজি দরে আম কিনেছিলেন। কাটার পর দেখেন ভেতরে নরম, খাওয়াই যায় না।
বিক্রেতা শরিফুল জানাল, কয়েক দিন ধরে সে কারওয়ান বাজার থেকে কিনে এনে পাকা আম বিক্রি করছে। প্রতিদিন প্রায় ২০ কেজি করে পাকা আম বিক্রি হচ্ছে তার।
মো. জসিম নামের আরেক আম বিক্রেতা তাঁর আমগুলোকে রাজশাহীর বলে দাবি করলেন। দাম চাইলেন আরও বেশি, প্রতি কেজি ২০০ টাকা। ‘আম তো পাকেইনি, রাজশাহীর আম পেলেন কোথায়?’ বলতেই জসিম বলেন, ‘আরও ১৫ দিন আগে থাইকা পাকা আম আসা শুরু করছে।’
তাহলে এসব আম কোথা থেকে আসছে? জানতে চাইলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের (এটিকে আম গবেষণা কেন্দ্রও বলা হয়) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জমির উদ্দিন বলেন, এ সময়ে বাজারে যেসব আম আসে, তা ভারত থেকে আসা আম। এই সময়ে দেশি জাতের আম তেমন নেই বাজারে। বেশির ভাগই ভারত থেকে আসা এই আমগুলোর দামও বেশি, খেতেও সুস্বাদু নয়। মার্চ-এপ্রিল মাসের দিকে এ আমগুলোকে বাজারে উঠতে দেখা যায়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হর্টিকালচার উইংয়ের উপপরিচালক (ফল ও ফুল) মো. আমিনুল ইসলামও জানালেন, আর দিন দশেকের মধ্যেই বাজারে আম আসা শুরু করবে। সাতক্ষীরায় আগেভাগে আম এলেও সেগুলো এখনো বাজারে দেখা যাচ্ছে না বললেই চলে। তবে অনেকে সাতক্ষীরা থেকে সরাসরি নিয়ে আসছেন।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক মো. মোক্তার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখনকার আমগুলোর স্বাদ–গন্ধ নেই। ক্রেতাদের বলব, যে সময়ের জিনিস, সে সময়ে খাওয়ার চেষ্টা করুন। ক্রেতা না কিনলে এসব আম বাজারে আসবে না। আমগুলো অপরিপক্ব। আম কাটলেই দেখা যায় ভেতরের আঁটি পরিপক্ব নয়, নরম।’
আম গবেষকেরা জানিয়েছেন, দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় সাতক্ষীরায় আগাম আম দেখা যায়। সাধারণত মে মাসের প্রথম সপ্তাহে সাতক্ষীরায় বোম্বাই, গোপালভোগ, ক্ষীরসাপাত গাছ থেকে পাড়া শুরু হয়। এটি শিগগিরই ব্যাপকভাবে বাজারে আসবে।
এর দুই সপ্তাহ পর থেকে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ থেকে ওই জাতের আমগুলো গাছ থেকে পাড়া শুরু হয়। মে মাসের শেষ থেকে জুনের প্রথম সপ্তাহে হিমসাগর ও ল্যাংড়া আম গাছ থেকে পাড়া শুরু হয়। এ দুটি জাতের আম কিছুটা দীর্ঘসময় ধরে পাওয়া যায়। জুনের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে আম্রপালি, হাঁড়িভাঙা, সূর্যপুরি আম গাছ থেকে তোলা শুরু হবে। জুনের শেষের দিকে আসবে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় উদ্ভাবিত নতুন জাতের বাউ আম-১৪ বা ব্যানানা ম্যাংগো। জুলাইয়ের শুরুতে আসবে ফজলি আম। বারি আম-৪ আসবে জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে। সবশেষে জুলাইয়ের শেষের দিকে আসবে আশ্বিনা জাতের আম। তবে বেশি লাভের আশায় আমচাষিরা নির্ধারিত সময়ের এক-দুই সপ্তাহ আগে ফজলি ও আশ্বিনা আম গাছ থেকে পেড়ে ফেলেন।
নওগাঁর সাপাহার উপজেলার একজন উদ্যোক্তা সোহেল রানা। নিজের উদ্যোগে তৈরি বরেন্দ্র অ্যাগ্রো পার্কে জুনের প্রথম সপ্তাহ থেকে তিনি আম পাড়া শুরু করবেন। গাছে ঝুলতে থাকা কাঁচা আমের ছবি তিনি ফেসবুকে পোস্ট করা শুরু করেছেন। প্রথম আলোকে জানালেন, গত বছর ১৪০ বিঘার জমির ওপর ল্যাংড়া, হিমসাগর, নাকফজলি, আম্রপালি, বারি-৪, ব্যানানা, গৌড়মতি জাতের আম উৎপাদন করেছিলেন। আম বিক্রি হয়েছিল ৩৫ লাখ টাকার। এবার আরও বেশি জমিতে আমগাছ লাগিয়েছেন। তিনি বললেন, ‘গোপালভোগ পাকে মে মাসের শেষে। এবার খরার কারণে আমের বৃদ্ধি ধীরগতিতে হচ্ছে। এ কারণে গাছ থেকে তুলতে আরও বেশি সময় লাগতে পারে।’
সোহেল রানার মতো অনেক আম উদ্যোক্তা এখন ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে আমের আগাম অর্ডার নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।