প্রায় তিন দশক আগে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের সামনে সগিরা মোর্শেদ সালাম হত্যার ঘটনায় করা মামলা অধিকতর তদন্তে আরও ৬০ দিন সময় পেয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সময় চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বুধবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে সময়ের আবেদন জানান ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন, সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়। পরে সারওয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ইতিপূর্বে ওই মামলার কার্যক্রমে দেওয়া স্থগিতাদেশ গত ২৬ জুন হাইকোর্ট প্রত্যাহার করে পিবিআইকে ৬০ দিনের মধ্যে অধিকতর তদন্ত শেষ করতে নির্দেশ দেন। পরে তদন্তের স্বার্থে সময়ের আবেদন জানানো হলে গত ২৯ আগস্ট হাইকোর্ট ১২০ দিন সময় দেন। ইতিমধ্যে পিবিআই ওই মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁরা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন। এখন তদন্ত চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। তদন্ত শেষ করতে সময় চাওয়া হলে আরও ৬০ দিন সময় দিয়েছেন হাইকোর্ট।
মামলার নথিপত্র থেকে জানা যায়, ১৯৮৯ সালের ২৫ জুলাই সগিরা মোর্শেদ সালাম ভিকারুননিসা নূন স্কুল থেকে মেয়েকে আনতে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের কবলে পড়েন। একপর্যায়ে দৌড় দিলে তাঁকে গুলি করা হয়। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পথে সগিরা মোর্শেদ মারা যান। সেদিনই রমনা থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন তাঁর স্বামী সালাম চৌধুরী। প্রত্যক্ষদর্শী রিকশাচালক জড়িত দুজনের কথা বললেও মিন্টু ওরফে মন্টু নামের একজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। ১৯৯১ সালের ১৭ জানুয়ারি মন্টুর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। নেওয়া হয় সাতজনের সাক্ষ্য। বাদীপক্ষের সাক্ষ্যে আসামি মন্টু ও তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদুল হাসানের নিকটাত্মীয় মারুফ রেজার নাম আসে। পরে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯১ সালের ২৩ মে বিচারিক আদালত অধিকতর তদন্তের আদেশ দেন। এ আদেশের বিরুদ্ধে মারুফ রেজা হাইকোর্টে আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯১ সালের ২ জুলাই হাইকোর্ট রুল দিয়ে অধিকতর তদন্তের আদেশ স্থগিত করেন। পরের বছরের ২৭ আগস্ট অপর এক আদেশে হাইকোর্ট ওই রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত স্থগিতাদেশের মেয়াদ বাড়ান। এতে থমকে যায় মামলার কার্যক্রম।
বিষয়টি নজরে এলে ওই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের জন্য উদ্যোগ নেয় রাষ্ট্রপক্ষ। শুনানি নিয়ে গত ২৬ জুন হাইকোর্টের একই বেঞ্চ মামলার অধিকতর তদন্ত আদেশে ইতিপূর্বে দেওয়া স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করেন। একই সঙ্গে ৬০ দিনের মধ্যে ওই মামলার অধিকতর তদন্ত শেষ করতে পিবিআইকে নির্দেশ দেন।
১৪ নভেম্বর পিবিআইয়ের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, পারিবারিক বিরোধের জের ধরে সগিরা মোর্শেদার ভাশুর, ভাশুরের স্ত্রী ও শ্যালক মিলে তাঁকে (সগিরা) হত্যার পরিকল্পনা করেন। তাঁরা ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে তাঁকে হত্যা করান। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এটি কোনো ছিনতাইয়ের ঘটনা ছিল না।
সগিরা মোর্শেদা (৩৪) বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক ছিলেন।