শাহজালাল বিমানবন্দর

সক্ষমতা বাড়বে আড়াই গুণ

চলছে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের কাজ। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে
ছবি: প্রথম আলো

ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে বছরে দুই কোটি যাত্রী সামাল দেওয়া সম্ভব হবে। বর্তমানে এই বিমানবন্দর বছরে ৮০ লাখের মতো যাত্রী সামলাতে পারে। এখনকার সেবার মান নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন। তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণকাজ ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে শুরু হয়, যা দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ১৯ শতাংশ কাজ শেষ করার লক্ষ্য ছিল। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, লক্ষ্যের চেয়ে ৩ শতাংশ কাজ বেশি হয়েছে।

টার্মিনালটির নির্মাণ ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে শেষ হওয়ার কথা। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনার মধ্যেও তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণকাজ এক দিনের জন্যও বন্ধ হয়নি। আশা করি, নির্দিষ্ট সময়ের আগেই টার্মিনালটি চালু করা সম্ভব হবে।’

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এখন টার্মিনাল দুটি। যদিও যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের চাপ বাড়ছে। তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের জন্য বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) ২০১৪ সালে একটি সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা করায়। এতে বলা হয়, ২০২৫ সাল নাগাদ এই বিমানবন্দর দিয়ে যাতায়াত করা যাত্রীর সংখ্যা দাঁড়াবে বছরে ১ কোটি ৪০ লাখে। ২০৩৫ সালে তা আড়াই কোটিতে পৌঁছাবে। ওই সমীক্ষায় বিমানবন্দরের টার্মিনাল, রানওয়ে ও পণ্য পরিবহনসুবিধা সম্প্রসারণের সুপারিশ করা হয়।

এরপর তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের জন্য বিমানবন্দর সম্প্রসারণ (প্রথম পর্যায়) প্রকল্প নেয় সরকার, যা অনুমোদন পায় ২০১৭ সালের অক্টোবরে। প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ২১ হাজার ২৯৯ কোটি টাকা।

বিমানবন্দরে যে দুটি টার্মিনাল এখন রয়েছে তার পূর্ব পাশে নতুন টার্মিনালের কাজ চলছে। রাজধানীর কুর্মিটোলায় গত বৃহস্পতিবার বিকেলে গিয়ে দেখা যায়, টার্মিনাল ভবন করতে মাটির নিচে পাইলিং শেষ। পিলারের কাজ চলছে। পাশাপাশি রানওয়ের কাজও চলমান। তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের এ কর্মযজ্ঞে প্রায় পাঁচ হাজার শ্রমিক যুক্ত।

প্রকল্প কর্মকর্তারা জানান, মেট্রোরেলের নতুন প্রকল্পের (লাইন-১) একটি স্টেশন তৃতীয় টার্মিনালের সঙ্গে যুক্ত হবে। ফলে মেট্রোরেল ব্যবহার করেও যাত্রীরা সহজে বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালে যেতে পারবেন।

কী কী থাকবে নতুন টার্মিনালে

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, নতুন টার্মিনাল ভবনটি হবে ২ লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার আয়তনের, যা বর্তমান টার্মিনালের চেয়ে দুই গুণের বেশি। তৃতীয় টার্মিনাল ভবন ও অ্যাপ্রোনে (উড়োজাহাজ রাখার জায়গা) ৩৭টি উড়োজাহাজ একসঙ্গে রাখা যাবে। এই বিমানবন্দরে বর্তমানে সামরিক ও বেসামরিক মিলিয়ে দৈনিক গড়ে ২৪০টি উড়োজাহাজ ওঠানামা করে। প্রকল্পের কর্মকর্তারা বলছেন, তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে সংখ্যাটি আরও বাড়বে।

প্রকল্প সূত্রে আরও জানা যায়, নতুন টার্মিনালে ১১৫টি চেক ইন কাউন্টার, ১২টি বোর্ডিং ব্রিজ, ১৬টি কনভেয়ার বেল্ট এবং ৬৪টি করে বহির্গমন ও আগমনী ইমিগ্রেশন থাকবে। এ ছাড়া থাকছে ২৭টি ব্যাগেজ এক্স-রে যন্ত্র ও ১১টি বডি স্ক্যানার। এই টার্মিনালে ৫৪ হাজার বর্গমিটার জায়গাজুড়ে হবে তিনতলা গাড়ি পার্কিং। সেখানে রাখা যাবে ১ হাজার ২৩০টি গাড়ি।

সিঙ্গাপুরের স্থপতির নকশা

টার্মিনালটির নকশা করেছেন সিঙ্গাপুরের সিপিজি করপোরেশন লিমিটেডের স্থপতি রোহানি বাহারিন। সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরের টার্মিনাল-৩, চীনের গুয়াংজুর এটিসি টাওয়ার ভবন এবং ভারতের আহমেদাবাদ ও পাকিস্তানের ইসলামাবাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের স্থপতি তিনি। টার্মিনালের নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করছে জাপানের মিতসুবিশি ও ফুজিতা করপোরেশন এবং কোরিয়ার স্যামসাংয়ে জোট ‘এভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়াম’। প্রকল্পে ঋণ হিসেবে জাপানের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকা দিচ্ছে ১৬ হাজার ১৪১ কোটি টাকা। বাকি ৫ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা দিচ্ছে সরকার।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের কর্মকর্তা মাকসুদ ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, নতুন টার্মিনালটি চালু হলে বিমানবন্দরের রূপ বদলে যাবে। যাত্রীসেবার মান বাড়বে।