এক মাসে দগ্ধ ৭৫৬ জন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা নিয়েছেন। শয্যার অভাবে অনেককে ফিরতে হচ্ছে।
শীতের এই সময়ে মা হয়েছেন গৃহিণী শান্তা বেগম। নবজাতককে একটু উষ্ণতা দিতে চেয়েছিলেন। তাকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন গ্যাসের চুলার পাশে। একটু অসতর্ক হতেই শান্তার গায়ে আগুন ধরে যায়। শরীরের ৪০ শতাংশ পুড়ে যায় নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের এই নারীর। ২০ ডিসেম্বর থেকে আছেন রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে। শান্তা প্রথম আলোকে বলেন, কোলে ছিল চার দিন বয়সী ছেলে। তাই তিনি নিজে আগুন নেভাতে পারেননি। চিৎকার দিলে পরিবারের সদস্যরা এগিয়ে আসেন। তাঁরা আগুন নেভান। এখন সময় কাটছে হাসপাতালের বিছানায়। কবে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতে পারবেন, জানেন না।
শান্তার মতো এই শীতে অনেকেই আগুন পোহাতে গিয়ে কিংবা গরম তরল ও পানিতে পুড়ে দগ্ধ হচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, শীতের সময় আবহাওয়া থাকে শুষ্ক। তাই আগুন ছড়ায় দ্রুত। এবারের শীতে পোড়া রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় হাসপাতালগুলোতে জায়গার সংকুলান হচ্ছে না। বিশেষ করে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে হিমশিম অবস্থা। দেশের চারটি বড় হাসপাতালের বার্ন ইউনিট আংশিক বা পূর্ণভাবে করোনা চিকিৎসায় ব্যবহার হওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে।
জানতে চাইলে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম প্রথম আলোকে বলেন, দগ্ধ রোগীদের জন্য প্রথম ছয় ঘণ্টা হচ্ছে ‘গোল্ডেন আওয়ার’। এ সময়ে রোগীর দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন। কিন্তু দেশের বড় হাসপাতালের বার্ন ইউনিটগুলোর শয্যাসংখ্যা এখন কমে গেছে। ফলে দগ্ধ রোগীদের ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে। তাই দ্রুত চিকিৎসা হচ্ছে না। সময়ক্ষেপণের কারণে রোগীর অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যাচ্ছে।
ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই হাসপাতালের হাই ডিপেনডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ) মোট আসন ৫৮টি। সব কটি বিছানাই গতকাল বুধবার রোগীতে ভরা ছিল। এক মাসে (৫ নভেম্বর-৫ ডিসেম্বর) এখানে ৭৫৬ জন পোড়া রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে গরম পানি বা তরলে দগ্ধ ৪৮৩ জন। আগুনে দগ্ধ ২৭৩ জন। এর আগে মে মাসে গরম পানি বা তরলে দগ্ধ হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ২৮০ জন। পোড়া রোগীদের মধ্যে নারী, শিশু ও বয়স্ক মানুষ বেশি। বিশেষ করে গর্ভবতী নারী ও বয়স্ক মানুষ দগ্ধ হচ্ছেন।
পোড়া রোগীদের সবচেয়ে বড় ভরসা শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট। এর বাইরে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে বার্ন ইউনিট রয়েছে। কিন্তু দেশের চারটি বড় হাসপাতাল—ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটগুলোতে এখন ভিন্ন পরিস্থিতি। কোনোটি আংশিক, কোনোটি পূর্ণভাবে এখন কোভিড-১৯ চিকিৎসায় ব্যবহার হচ্ছে। ফলে বেশির ভাগ পোড়া রোগী আসছেন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে। কিন্তু এখানকার বিছানাগুলো সব সময় ভরা থাকছে। ফলে নতুন রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ।
ইনস্টিটিউটের সহকারী পরিচালক হোসেইন ইমাম প্রথম আলোকে বলেন, বছরের অন্যান্য সময়ে আগুন, রাসায়নিক দ্রব্য, বিদ্যুৎস্পৃষ্টসহ নানা কারণে মানুষ দগ্ধ হয়। কিন্তু শীতকালে পানি গরম করতে বা আগুন পোহাতে গিয়ে এমন ঘটনা বাড়ে। এ সময় মানুষজনের আরও বেশি সতর্ক থাকা উচিত।