মানহানিকর বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগ এনে সাবেক মন্ত্রী ও পরিবহন শ্রমিকনেতা শাজাহান খানের বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করেছেন নিরাপদ সড়ক চাইয়ের (নিসচা) চেয়ারম্যান ও চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। বুধবার ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালতের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই মামলার কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়।
প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালতের সেরেস্তাদার জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খানের বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে তাঁদের আদালতে মামলা করেছেন ইলিয়াস কাঞ্চন। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এই মামলার গ্রহণ বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য রয়েছে।
মামলার আরজিতে ইলিয়াস কাঞ্চন দাবি করেছেন, ১৯৯৩ সালের ২২ অক্টোবর সড়ক দুর্ঘটনায় তাঁর স্ত্রীর মৃত্যুর পর তিনি নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। গড়ে তোলেন নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন নামের একটি সংগঠন। নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে বিভিন্ন মহলের নানামুখী হুমকির সম্মুখীন হন তিনি। ২০১৮ সালে ঢাকায় দুজন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন আইন পাস হয়। এরপর বিবাদী শাজাহান খানের নেতৃত্বে মালিক ঐক্য পরিষদ সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮-এর সংশোধনসহ সাত দফা দাবিতে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেয়। তখন শাজাহান খানের প্ররোচনায় দেশের সব বাস টার্মিনালে ইলিয়াস কাঞ্চনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। গত বছরের ১৮ নভেম্বর থেকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর শুরু হয়। এর পরদিন শাজাহান খানের প্ররোচনায় বাস ও কাভার্ড ভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেয়। সেদিন শাজাহান খানের প্ররোচনায় তাঁর (ইলিয়াস কাঞ্চনের) কুশপুত্তলিকা ও গলায় জুতার মালা পরিয়ে নানাভাবে হেয়প্রতিপন্ন করা হয়।
মামলায় ইলিয়াস কাঞ্চন দাবি করেছেন, গত বছরের ৮ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জে জেলা মিনিবাস সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের চালক প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তাঁর (ইলিয়াস কাঞ্চন) সম্পর্কে শাজাহান খান বলেন, ‘আপনি যে বিদেশিদের কাছ থেকে নিরাপদ সড়ক চাই এনজিওর নামে কোটি কোটি টাকা নিয়েছেন, আপনি কয়টা প্রতিষ্ঠান করেছেন? কয়টা স্কুল করেছেন? কতজন মানুষকে টেনে নিয়েছেন? ইলিয়াস কাঞ্চন কোথা থেকে কত টাকা পান, কী উদ্দেশ্যে পান এবং সেখান থেকে নিজের নেতৃত্বে বধূর নামে লাখ লাখ টাকা নেন, সেই হিসাব আমি জনসমক্ষে তুলে ধরব। নিরাপদ সড়ক চাই এনজিওর নামে এনজিওর মাধ্যমে বিদেশিদের কাছ থেকে এ পর্যন্ত ইলিয়াস কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এই অবৈধ অর্থ দিয়ে বেশ কয়েকটি ব্যবসা ও স্কুল করেছেন। ইলিয়াস কাঞ্চন একজন জ্ঞানপাপী।’
শাজাহান খানের এই বক্তব্যের পরদিন দেশের জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে। মামলার আরজিতে ইলিয়াস কাঞ্চন আরও দাবি করেছেন, তাঁকে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার জন্য শাজাহান খান তাঁর সম্পর্কে মনগড়া ও মানহানিকর বক্তব্য দিয়েছেন। তাঁর এই বক্তব্য ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহারের আলটিমেটাম দেন তিনি। শাজাহান খান নিজের দুর্বলতা ঢাকার জন্য তাঁর সম্পর্কে এই মানহানিকর বক্তব্য দিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করেছেন। ২৪ ঘণ্টা পার হওয়ার পরও শাজাহান খান তাঁর বক্তব্য প্রত্যাহার করেননি।
২ ফেব্রুয়ারি শাজাহান খানকে মানহানিকর বক্তব্য প্রত্যাহার করতে বলেন। কিন্তু বিবাদী শাজাহান খান তাঁর বক্তব্য প্রত্যাহার করেননি। বাদীপক্ষে ইলিয়াস কাঞ্চনের আইনজীবী হিসেবে আছেন রেজাউল করিম।